0 0
Read Time22 Minute, 19 Second
বালিতে যাওয়ার পরিকল্পনা একদম হুট করেই হয়ে গেলো। ছোট ভাই অঝর বিয়ে করেছে ডিসেম্বরে। সে আর তার বৌ স্বর্ণা হানিমুনে যাচ্ছে বালিতে। আমাদেরকে জিজ্ঞেস করলো, আমরাও যেতে আগ্রহী কিনা। দল বেঁধে গেলে মজাও হবে বেশি, খরচও কমে আসবে। আমি আর প্রিন্স নিজেদের মধ্যে তাকাতাকি করলাম। প্রিন্সের মুখের পাথুরে ভাব দেখেও আমি দমলাম না। আনন্দে লাফিয়ে উঠলাম, “যাবো”। অনেকদিন ধরেই জামাইয়ের সাথে দেশের বাইরে যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো আমার। কিন্তু তিন স (সুযোগ, সময়, সাহস) মিলছিল না। এখন ইগ্নিশনের মাধ্যমে আমার মনের আগুন চাগিয়ে দিলো ভাই। এবার আমি যাবোই। জামাই বৌ দুজনে কিছুক্ষণ বাৎচিত করলাম। এত টাকা খরচ করে বালিতে যাওয়ার ব্যাপারে প্রিন্সের ভিতর গাইগুই থাকলেও আমার উত্তেজনা দেখে সে চিমসে গেলো। জয় হল আমারই। অঝর আর স্বর্ণা যেহেতু আগেই টিকেট কেটে ফেলেছে, তাই আমরা দুজন কতো সস্তায় টিকেট কনফার্ম করতে পারি, সে চেষ্টা করতে লাগলাম। সবচেয়ে ছোট ভাই অংকনকেও প্রস্তাব দিলাম আমাদের সাথে যাওয়ার জন্য। কিন্তু সে ইন্টার্নশিপের ঝামেলার জন্য যেতে রাজী হল না। ওকে ছেড়ে যেতে একটু খারাপ লাগছিলো বটে, কিন্তু কি আর করা! ওর সাথে পরে অন্য কোথাও ঘুরে উশুল করে দেবো।
.
ফেব্রুয়ারির ৭ তারিখে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বালি যাবো। ৮ তারিখে নেট ঘেঁটেঘুঁটে বালি ভ্রমণ সংক্রান্ত কিছু বাংলা ব্লগ পড়ে টিকেট কাটা, হোটেল বুক করা, দর্শনীয় স্থান দেখা, খাওয়া ইত্যাদি বিষয়ে কিছু জেনে নিলাম। তারপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম SkyScanner নামক ওয়েবসাইটে। এটা অনলাইনে টিকেট বুক করার একটা ওয়েবসাইট। প্রথমে Malindo Airlines-এ রাউন্ড ট্রিপ সিলেক্ট করে দেখলাম একেকজনের ২৬০ ইউরোর মত লাগছে। ভাবলাম, আজকালের মধ্যেই টিকেট বুক করে ফেলবো। কিন্তু ৯ ফেব্রুয়ারি ওয়েবসাইটে ঢুকে চক্ষু চড়কগাছ! রাউন্ড ট্রিপ হয়ে গেছে ২৯০ ইউরো। ভড়কে গিয়ে আসা-যাওয়ার জন্য আলাদা ফ্লাইট সিলেক্ট করে দেখলাম, আরেকটু কমে পাচ্ছি। যাওয়ার জন্য সিলেক্ট করলাম Scoot Airlines-কে, আসার জন্য Air Asia-কে। কিন্তু প্যাঁড়ায় পড়লাম টিকেট বুক করতে গিয়ে। বাজেট ফ্লাইট (কমদামী টিকেট আর কি) বলে জার্নিতে কোনো খাওন দিবে না, খেতে চাইলে এক্সট্রা টাকা দিয়ে Meal বুক করতে হবে। হ্যান্ড লাগেজ নিতে পারবেন ১০ কেজি, কিন্তু কার্গোতে কিছু নিতে পারবেন না। নিতে চাইলে এক্সট্রা টাকা দিতে হবে। এমনকি আমরা পাশাপাশি বসতে চাইলেও এক্সট্রা টাকা দিয়ে আগে সিট সিলেক্ট করে নিতে হবে। এরপর আছে ২৮ ডলারের প্রসেসিং ফি। আরও কোনো হিডেন ফি আছে কিনা, কে জানে। বাদ দিলাম অনলাইন বুকিং। সাহায্য নিলাম কাজিন রসির। সে একটা ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে টিকেট বুক করে দিলো Malindo Airlines-এ। আসা-যাওয়া মিলিয়ে দুজনের খরচ পড়লো ৫৪৫০০ টাকা। এটা সবচেয়ে সস্তা টিকেট ছিল ঐ মুহূর্তে। এই টাকায় Meal, ৭ কেজি হ্যান্ড লাগেজ এবং ৩৫ কেজি কার্গো অন্তর্ভুক্ত। তবে বিষফোঁড়া হয়ে এলো যাওয়ার পথে কুয়ালা লাম্পুরে ১২ ঘণ্টার ট্রানজিট, যাকে বলে সস্তার তিন অবস্থা। কম টাকায় যেতে চান? ১২ ঘণ্টা বসে যান। তবে ট্রানজিট নিয়ে বেশি মাথা ঘামালাম না। ঘুরে-ফিরে-ঘুমিয়ে-খেয়ে ১২ ঘণ্টা পার করে দেওয়া যাবে।
.
আমাদের টিকেট কনফার্ম করার পর অঝরের জোরাজুরিতে রসিও টিকেট কনফার্ম করে ফেললো। সে আমাদের সাথে কুয়ালা লামপুর পর্যন্ত গিয়ে সেখান থেকে অন্য একটা কানেক্টিং ফ্লাইট ধরবে, কারণ আমাদের কানেক্টিং ফ্লাইটে টিকেট পাওয়া যায়নি। রসির কানেক্টিং ফ্লাইটে ট্রানজিট মাত্র ৬ ঘণ্টা। ফলে সে ২৫ তারিখ দুপুর ১২ টায় ল্যান্ড করবে। এদিকে অংকনও শেষ মুহূর্তে বায়না ধরল যাওয়ার জন্য। ওর ইন্টার্নশিপ শেষ হয়ে যাবে টুরের ঠিক আগে। ওর জন্য আমাদের ফ্লাইটে একটা টিকেটও পেয়ে গেলাম বেশ চড়া দামে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে অংকনের টিকেট হয়েছে ৩৩০০০/-।
.
এটা প্রিন্সের সাথে আমার প্রথম বিদেশ ভ্রমণ। স্বাভাবিকভাবেই আমি খুব উত্তেজিত। প্রিন্সের উত্তেজনা টের পাচ্ছি না, কারণ ওর পাসপোর্ট হয়নি। পাসপোর্ট ছাড়াই আমরা টিকেট কেটে বসে আছি। আশা করছি, হাতে যে একমাস সময় আছে এর মধ্যে পাসপোর্ট হয়ে যাবে। এখন লক্ষ্য হল, ২৪ মার্চ রাত ১১ টায় ফ্লাই করা এবং ৩১ মার্চ রাত ১০ টায় স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করা। আমি বা প্রিন্স, কেউই স্কুটি চালাতে পারি না কিন্তু বালিতে গিয়ে স্কুটি চালানোর প্ল্যান করছি। বাইসাইকেল চালাতে পারি বলে মনে ক্ষীণ আশা যে, স্কুটিও চালাতে পারবো। নিজেরা স্কুটি চালিয়ে ঘুরতে পারলে নাকি সবচেয়ে বেশি উপভোগ করা যায়। আর স্কুটি ভাড়া করতে যা লাগে, গাড়ি ভাড়া করতে লাগে তার দ্বিগুণ-তিনগুণ। এজন্য টাকা বাঁচানোরও একটা চিন্তা মাথায় খেলছে। তবে আমরা ৬ জন বলে গাড়ি ভাড়া করাটাও তেমন ব্যয়বহুল হওয়ার কথা না। দেখা যাক, কী হয়। আবার আমার সাঁতার জানা নেই বলে সাগরের যাবতীয় আনন্দযজ্ঞ ভয়হীনভাবে উপভোগ করার ব্যাপারে দ্বিধা আছে।

হোটেল বুকিং

বালিতে নেমে ক্লান্ত শরীরে সস্তা হোটেল খুঁজে বের করা ঝামেলা লাগতে পারে। তাই অন্তত প্রথম রাতের জন্য হলেও দেশ থেকে হোটেল বুক করে যাওয়া দরকার। পরিকল্পনা করলাম, প্রথম দুইদিন কুটাতে থাকবো। এরপর কোথায় থাকা হবে, সেটা বালিতে গিয়েই প্ল্যান করবো। তো “Booking.com”-এ গিয়ে কুটার সবচেয়ে সস্তা হোটেল খুঁজতে লাগলাম। পেলাম “A Guest House Kuta” নামক সস্তা হোম স্টে। ৬ জনের ২ রাত থাকার জন্য ৩ টা বেডরুমের (১ টা করে ডবল বেড থাকবে + এটাচড বাথ) বুকিং দিলাম 11,46000 IDR দিয়ে। বাংলায় মাত্র ৬৮৭৬ টাকা। সস্তা নিতে হল, কারণ ভ্রমণে গিয়ে খাওয়া আর থাকায় টাকা খরচ করলে আমাদের পোষাবে না, সাইট সিয়িংয়ে দেদার খরচ করতে হবে।

শেষ মুহূর্তের গণ্ডগোল

ফেব্রুয়ারির ২২ তারিখে এসে জানতে পারলাম, আমার পাসপোর্টের মেয়াদ যেহেতু মাত্র চার মাস বাকি আছে, তাই এই পাসপোর্ট দিয়ে আমি ভ্রমণ করতে পারবো না। আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য অন্ততপক্ষে ৬ মাসের মেয়াদ লাগে। মাথায় বাজের চেয়েও জোরালো কিছু থাকলে সেটা পড়লো। এতদিন প্রিন্সের পাসপোর্ট নিয়ে খুঁচিয়েছি। এবার দেখি ডাবল ধামাকা! দ্রুত ইমারজেন্সিভাবে পাসপোর্ট রিনিউয়ালের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করলাম। ২৪ তারিখে পাসপোর্ট অফিসে ফর্ম জমা দিয়ে ছবি তুলে এলাম, আর মার্চের ১১ তারিখে হাতে পেলাম নতুন ঝাকানাকা পাসপোর্ট। এখন আমি তিন প্রজন্মের তিন ধরনের পাসপোর্টের গর্বিত অধিকারী। এদিকে প্রিন্স নরমাল প্রসেসে এগিয়েছে বলে ধরে রেখেছিলাম ২১ দিনের মাথায় পাসপোর্ট পেয়ে যাবে (সাধারণত এটাই হয়)। কিন্তু যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত হয় বলে উড়াল দেবার ৭ দিন বাকি থাকতেও আমরা ওর পাসপোর্ট পেলাম না (ফর্ম জমা দেবার ৩০ দিন হয়ে গেছে)।
.
২৪.০৩.২০১৮
.
আজ রাত ১১ টায় মালয়েশিয়াগামী ফ্লাইট। অবশেষে প্রিন্স পাসপোর্ট পেয়েছে, সবাইকে হার্ট এটাকের হাত থেকে বাঁচিয়েছে। চারজন মিলে এয়ারপোর্টে পৌঁছলাম রাত ৯ টায়। অঝর রওনা দেবে আগামীকাল রাতের ফ্লাইটে। তার ট্রানজিট মাত্র ৬ ঘণ্টার। স্বর্ণা ওর অফিস থেকে বালিতে পিকনিকে গেছে। ২৬ তারিখ থেকে সে আমাদের সাথে যোগ দেবে। জার্নিটা দুই ভাগে বিভক্ত। বাংলাদেশ থেকে প্রথমে ৩ ঘণ্টা ৫৫ মিনিটের জার্নি শেষে কুয়ালা লাম্পুর বিমানবন্দরে নামবো, সেখান থেকে বিখ্যাত ১২ ঘণ্টার ট্রানজিট শেষে কানেক্টিং ফ্লাইট ধরে বালির দেনপাসার বিমানবন্দরে নামবো। দেনপাসার হল বালির রাজধানী। আমরা কিছুক্ষণ “দেন পাসার বালি” বলে সস্তা রসিকতা করলাম (অনলি ডার্টি মাইন্ড ইজ রিয়েল)। বিমানে উঠার সাথে সাথে উইন্ডো সিট আমার দখলে চলে এলো। আমার পাশে বসলো প্রিন্স, তার পাশে রসি। অংকনের সিট আলাদা আইলে পড়লো।
বাসে যেমন, বিমানেও তেমন উইন্ডো সিট না হলে আমি ভ্রমণ উপভোগ করতে পারি না। একঘেয়ে বিমান ভ্রমণে ক্ষণে ক্ষণে মেঘের বদলে যাওয়া চেহারা দেখে একটু সময় কাটানো যায়। নতুবা ঘুমিয়ে, বই পড়ে, সিটের পেছনে লাগানো ছোট্ট পর্দায় টিভি দেখে সময় কাটাতে হবে। যেহেতু ইকোনোমি ক্লাসের ছোট সিটে আরামদায়কভাবে পা রাখা যায় না বলে বিমানে ঘুমাতে কষ্ট হয়, তাই দিনের বেলা মেঘ দেখে কাটানোই শ্রেয়। তবে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের সিটের চেয়ে মালিন্দো এয়ারের সিটগুলো দেখলাম খুবই spacious। ফলে আরাম করে পা ছড়িয়ে বসলাম। খাবার হিসেবে দিলো চিকেন কারি, ভাত, বিভিন্ন ফলের জুস (ক্র্যানবেরি, আপেল, লিচু), কোক ইত্যাদি। কারও চা খেতে মন চাইলে সেটার ব্যবস্থাও আছে। যেহেতু কিছুদিন আগে নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় ইউএস বাংলার একটা বিমান বিধ্বস্ত হয়, তাই আমরা একটু চিন্তিত ছিলাম। ভয়টা আরও বাড়ল যখন ক্রমাগত টার্বুলেন্সের মধ্যে পড়ে প্লেন ঝাঁকাঝাঁকি শুরু করলো। যা হোক, দম খিঁচে বসে থাকতে থাকতে দেখি কুয়ালা লাম্পুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চলে এসেছি। এর আগে অফিসের কাজে ইতালি যাওয়ার সময় অনেকবার পা রেখেছি তুরস্কের আতাতুর্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। ২০১৭ সালের হিসেব মতে সেটা পৃথিবীর ব্যস্ত এয়ারপোর্টের মধ্যে দশতম। মোট ছয়বার সেখানে পদধূলি দেওয়ার কারণে এয়ারপোর্টটা ঘুরে ফিরে দেখা শেষ। সেটার তুলনায় কুয়ালা লাম্পুর বিমানবন্দর বেশ শান্ত। অবশ্য এটা খেতাব পেয়েছে বিশ্বের ২৪ তম ব্যস্ত বিমানবন্দরের।
.
দর্শনীয় স্থান দেখার তালিকা
.
দেশে থাকতেই বিশাল একটা তালিকা বানিয়েছিলাম বালির সব টুরিস্ট স্পট নিয়ে। ছয় রাত পাঁচ দিনের ভ্রমণে কবে, কোথায় যাব তার একটা বিস্তারিত পরিকল্পনা না থাকলে অনেক কিছুই মিস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই সবার সাজেশন নিয়ে কিছু স্পট নির্ধারণ করে একটা লিস্ট তৈরি করেছিলাম। কিন্তু বারবার প্ল্যান বদলাতে থাকায় ঠিক করলাম, বালিতে গিয়েই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে যে, কোথায় কবে যাবো। আপাতত শুধু স্পটের নাম নিয়ে যাই। অঝর আর স্বর্ণা বলল, তারা শুধু বালি দ্বীপে আটকে থাকতে চায় না, নুসা লেম্বোঙ্গান দ্বীপ আর গিলি দ্বীপেও যেতে চায়। ঐসব জায়গায় গেলে প্রকৃতির অনেক কাছাকাছি থাকা যাবে। যেহেতু আমরা রিলাক্সিংয়ের জন্য ভ্রমণে যাচ্ছি, তাই মাদার নেচারের কোলে বসে থাকাই শ্রেয়। এজন্য কুটা বিচের “ওয়াটার বম” আর “সাফারি পার্ক” বাদ দিয়ে ঐ খরচে যাবো নুসা লেম্বোঙ্গান আর গিলিতে। টাকা বাঁচলে স্নোরকেলিং বা সি-ওয়াক করবো।
.
২৫.০৩.২০১৮ (ল্যান্ডিং)
.
টার্বুলেন্স খেতে খেতে কোনো ঝামেলা ছাড়াই বালির নুরাহ রাই (Ngurah Rai) বিমানবন্দরে নামলো আমাদের উড়োজাহাজ। বন্দর দেখে মাথা ঘুরে গেলো। এত সুন্দর করে সাজানো এয়ারপোর্ট আর দেখিনি। প্রতিটা দেওয়ালে ঐতিহ্যবাহী কারুকার্য অথবা মডার্ন আর্টের ছড়াছড়ি। ওখানকার ইমিগ্রেশন পার হওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়াতেই একজন পুলিশ জিজ্ঞেস করলেন, আমরা কোথা থেকে এসেছি। যখন বললাম বাংলাদেশ, তখন আমাদের লাইন থেকে বের করে নিয়ে দাঁড় করালেন একটা নির্দিষ্ট রুমের সামনে। বাংলাদেশীদের জন্য নাকি লাইনে দাঁড়ানোর প্রয়োজন নেই! বাহ, বেশ। শুনেছি, খুব সহজেই অন এরাইভাল ভিসা দিয়ে দেয় বালির অফিসারেরা। কিন্তু আমরা পড়লাম প্যাঁচে। আরেক বাংলাদেশি পরিবারের সাথে আমরা দাঁড়িয়ে আছি ঐ রুমের সামনে, কিন্তু আমাদের আর ভেতরে ডাকা হচ্ছে না। পাসপোর্ট নিয়ে গেছে রুমের ভেতরে আগেই। তাই একটু চিন্তায় পড়ে গেলাম।
প্রায় ২০ মিনিট পর ভেতরে ডাক পড়লো আমাদের। ঐ পরিবার চেতে গেলো। “হ্যালো! আমরা আগে এসেছি। আমাদের না ডেকে উনাদের ডাকলেন কেন?” ইমিগ্রেশন অফিসার হতবাক হয়ে তাকালেন। বললেন, “Calm down! আপনাদেরও ডাকা হবে।” আমরা একটু লজ্জায় পড়ে গেলাম ঐ ফ্যামিলির এমন রাগান্বিত অবস্থা দেখে। আরেকটু ভালোভাবে কি প্রশ্নটা করা যেত না?
.
যা হোক, ভেতরে নিয়ে আমাদের সোফাসেটে বসিয়ে রেখে অফিসার আরেক রুমের ভেতর ঢুকে গেলেন। এই যে গেলেন, আর এলেন না। এদিকে আমাদের তো ঘাম ছুটা শুরু হয়েছে। কাহিনী কী? উষ্কখুষ্ক চেহারা দেখে উগ্রবাদী ভাবছে নাকি? নাকি ভাবছে আমরা অবৈধভাবে থেকে যাবো? কিছুক্ষণ পর অফিসার এসে খুবই সন্ধিগ্ধ চোখে আমাদের পরীক্ষা করতে করতে জিজ্ঞেস করলেন, “হুইচ ওয়ান অফ ইউ স্পিক ইংলিশ?” আমরা সমস্বরে উত্তর দিলাম, “এভ্রিওয়ান।” অফিসার “অঃ” বলে একেকজনকে প্রশ্ন করতে শুরু করলেন, “আপনি কী করেন? কেন এসেছেন বালিতে? কবে ফেরত যাবেন? কোন হোটেল বুক করেছেন? কেন শুধু দুইদিনের জন্য বুক করেছেন? কুটা থেকে পরে কোথায় যাবেন?” ইত্যাদি ইত্যাদি। উত্তর শোনার পরেও উনার মুখের ভাব পরিবর্তিত হল না। সন্দেহ নিয়ে আবার ঢুকলেন রুমের ভেতর। আবার যুগ যুগান্তরের অপেক্ষা। আমরা একটা কথাও না বলে চুপচাপ বসে রইলাম। যদি আমাদের কথা বলতে দেখে ভাবে, কোনো ফন্দি ফিকির করছি?
.
শেষ পর্যন্ত অফিসার এসে পাসপোর্ট ফেরত দিয়ে বললেন, “সরি স্যার, হিয়ার ইজ ইওর পাসপোর্ট। থ্যাংক ইউ।” হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। এ তো দেখি আমেরিকার ভিসা পাওয়ার চেয়েও কঠিন ব্যাপার! এরপর একটা ফর্ম পূরণ করতে হল কয়টা ব্যাগ নিয়ে প্লেনে উঠেছি, বালিতে কোন হোটেলে থাকছি, ব্যাগের ভেতর কী এনেছি, কয়জন এসেছি ইত্যাদি তথ্য দিয়ে। ফর্মটা জমা দিয়ে তারপর বাইরে বের হওয়ার গেটে আসতে পারলাম।
.
আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল ব্লু বার্ড ট্যাক্সি সার্ভিস নিয়ে হোটেলে চলে যাবো। কিন্তু কেউই ব্লু বার্ড ট্যাক্সি কোথায় পাওয়া যাবে, সে ব্যাপারে বলতে পারলো না। খুব আশ্চর্য হলাম। কারণ আমরা শুনেছি, এয়ারপোর্টে এদের একচেটিয়া ব্যবসা। যা হোক, অনেক মুলামুলির পর এক লোকাল ট্যাক্সি ড্রাইভার দেড় লাখ রুপিয়ায় যেতে রাজী হল। সাড়ে তিন লাখ থেকে দেড় লাখে নামাতে পেরে আমরা ভাবলাম, জিতে গেছি। খুশি মনে বাক্স পেঁটরা নিয়ে উঠে বসলাম, বেরিয়ে এলাম বিমানবন্দর থেকে দেনপাসার শহরে। শুরু হল বালি ভ্রমণ! অলি গলি তস্য গলি পেরিয়ে আমরা পৌঁছলাম A Guest House Kuta হোটেলে। রাতের বেলা দেখেই মুগ্ধ হয়ে গেলাম। এত রাজকীয় হোটেলের তিনটা ডাবল বেডরুম দুই রাতের জন্য বুক করেছি মাত্র ১১ লাখ রুপিয়া দিয়ে?
.
রিসেপশনে পেমেন্ট দিয়ে তবেই ঢুকতে পারলাম রুমে। দ্রুত স্নান সেরে চারজন বেরিয়ে পড়লাম ডিনার সারতে। হোটেলের গলি থেকে একটু সামনেই ফুটপাথে বসে আছে সারি সারি খাবারের ভ্যান, জুসের ভ্যান। খাবারের হোটেলও আছে। আমরা খুঁজে খুঁজে একটা সস্তা দেখতে হোটেলে ঢুকে অর্ডার দিলাম Nasi goreng (ফ্রায়েড রাইস) আর Mie goreng (নুডুলস)। সাথে নিলাম আইস টি আর কোক। খাবারগুলো এত সুস্বাদু আর এত সস্তা যে আমরা ভড়কে গেলাম। এই খাবারের জন্য বাংলাদেশে চারজনের বিল আসতো কমপক্ষে ২০০০ টাকা। কিন্তু আমরা খেলাম মাত্র ১০০০ টাকার মধ্যে। খেয়ে বালির একটা লোকাল চেইন শপ থেকে লোকাল বিয়ার “Bintang” আর আইসক্রিম কিনে হোটেলে ফিরলাম। বিয়ারসহ যেকোনো হার্ড ড্রিংকস দারুণ সস্তা। হোটেলে ফিরে আগামীকালের জন্য প্ল্যানিং করে ক্লান্ত শরীরে ঘুমাতে গেলাম। পরদিন স্বর্ণা অঝর এসে যোগ দিবে আমাদের সাথে। শুরু হবে আসল বালি ভ্রমণ। এর জন্য শরীর তরতাজা করতে হবে ঘুম দিয়ে।
Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post খোঁজাখুঁজি সিরিজঃ বিখ্যাত এবং কুখ্যাত কিছু সেন্টর
Next post বালি দ্বীপ (ইন্দোনেশিয়া) ভ্রমণঃ দ্বিতীয় পর্ব