2 0
Read Time35 Minute, 28 Second

পর্ব এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ, ছয়, সাত, আট, নয়, দশ, এগারো, বারো, তেরো

(৩১)

মার্কিন মুল্লুকের অ্যাকাডেমিয়ায় ঢুকে এমন সব অভিজ্ঞতা হচ্ছে যেগুলো দেশী অ্যাকাডেমিয়ায় পাইনি। আচ্ছা, মূল কাহিনীতে ঢুকার আগে একটু মাথা আউলাঝাউলা করা যাক। বলুন তো, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের আরেক নাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেন? ছোটবেলা থেকে মনে প্রশ্ন ছিল, আমেরিকাকে কেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলা হয়। মার্কিন শব্দটা ইংরেজি অভিধানে খুঁজেছি, পাইনি। অনেক বছর পর জেনেছি, মার্কিন শব্দটা বাঙালিদের তৈরি। এটা ইংরেজি শব্দ নয় যে ইংরেজি অভিধানে থাকবে। ভাষা পরিবর্তনের একটা মজার উদাহরণ হতে পারে এটা। ‘আমেরিকান’ থেকে আ লুপ্ত হয়ে মেরিকান হয়েছিল এবং মেরিকান থেকে বিকৃত হয়ে মার্কিন হয়েছে। সংস্কৃত গৃহিণী শব্দ যেভাবে জনসাধারণের মুখে ঘুরতে ঘুরতে গিন্নী হয়ে গেছে, তেমন। প্রসঙ্গক্রমে বলি ‘বিলাতি’ শব্দটির উৎপত্তির কথা। আমরা এখন বিলাত বা বিলেত বলতে ইংল্যান্ডকে বুঝি। কিন্তু ব্যাপারটা সবসময় এমন ছিল না। ফার্সি ‘ওয়েলায়ত’ শব্দটা জনমুখে উচ্চারিত হতে হতে ‘বিলায়ত’-এ রূপ নিয়েছিল। ওয়েলায়তের মানে ছিল রাজ্য, শাসন, প্রদেশ, ভোগদখল ইত্যাদি। এখান থেকে দেশী লোকজন বিলায়ত মানে ‘শাসকদের দেশ’ বুঝে নিল। ইংরেজরা যখন ভারতীয় উপমহাদেশ দখল করল তখন তাদেরকেও বিলায়ত ভাবতে শুরু করল ওরা। ঐ বিলায়ত থেকে কালক্রমে বিলাত শব্দের উৎপত্তি ঘটল। একসময় ইংল্যান্ডের সমার্থক হিসেবে বিলাত শব্দটা চালু হয়ে গেল। পাঠকরা এখন বলুন, বিলাতি মাটি, বিলাতি জল, বিলাতি বেগুন আর বিলাতি বোল কী?

ফিরে আসি মূল কাহিনীতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেবার পর প্রফেসরদের কাছ থেকে ইমেইল পাওয়া শুরু করলাম। একাডেমি সংক্রান্ত প্রায় সবকিছুই ইমেইলের মাধ্যমে জানানো হচ্ছে। একদিন প্রফেসর বাদে অন্য একজনের কাছ থেকে ইমেইল পেলাম। জ্যাকি প্রাইস। গ্র্যাজুয়েট অ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে আমাকে যে স্কুল লাঞ্চ প্রোগ্রামে সপ্তাহে ছয় ঘণ্টা কাজ করতে হবে, সেখানকার ম্যানেজার ও। ইমেইল দিয়ে আমি সপ্তাহের কোনদিন, কখন আসতে পারব সেটা জানতে চাচ্ছে। বুঝলাম এখানে মোটামুটি সব কাজেই ইমেইল ব্যবহার করা হয়। এই তথ্য জ্যাকি আমাকে মোবাইলে টেক্সট করেও জানতে চাইতে পারত, কিন্তু সেটা সে করেনি। পরে শুনলাম আমেরিকার একাডেমি পাড়ায় ইমেইলের কদরই সবচেয়ে বেশি। কেউ আপনার সাথে দেখা করতে চাইলে আগে ইমেইল দিয়ে জিজ্ঞেস করে নেবে আপনার এভেইলেবিলিটির ব্যাপারে। তা সে প্রফেসরই হোক, অথবা অফিস স্টাফ। কাছের মানুষ ছাড়া মোবাইলে কল কিংবা টেক্সট দেওয়ার চল প্রায় নেই বললেই চলে। আপনি অনুমতি চাইতে পারেন কাউকে কল করার জন্য। সে অনুমতি দিলে কল করতে পারেন, তাও অগ্রাধিকার বিবেচনা করে। মানে কাজটা কি ইমেইল দিলেও হয়ে যেত নাকি কলই করতে হবে? ক্লাসমেটদের ক্ষেত্রে অবশ্য টেক্সট করার রেওয়াজ আছে! তবে আমার অভিজ্ঞতা সবার সাথে নাও মিলতে পারে।

যা হোক, আমার সুপারভাইজর ইমেইল দিয়ে জিজ্ঞেস করেছেন আমি অমুক তারিখে সকাল দশটায় উনার সাথে মিটিং করতে পারব কিনা। এর আগে আমিই সবসময় প্রফেসদের জিজ্ঞেস করেছি, ‘ম্যাডাম, কখন সময় দিতে পারবেন?’ এখন পাশার দান হালকা উল্টে গেছে দেখে থম মেরে রইলাম। প্রাথমিক আবেগ কাটার পর খুশিতে ডগমগ হয়ে বললাম, ‘বিলকুল!’ নির্দিষ্ট দিনে পৌনে দশটার সময় প্রফেসরের অফিসের সামনে পৌঁছে গেলাম। আগে যান ক্ষতি নেই, কিন্তু সময়ের পরে যেন যাওয়া না পড়ে। আমার সুপারভাইজর আবার অনুষদের চেয়ারপার্সনও। উনার সহকারী বললেন উনি এখন আরেকজনের সাথে মিটিংয়ে আছেন, আমি যেন অপেক্ষা করি। ঠিক দশটায় প্রফেসর রুম থেকে বের হয়ে আমাকে ডাকলেন। বললেন, ‘আই অ্যাম এক্সট্রিমলি সরি, গস। আমার আগের মিটিংটা এখনও শেষ হয়নি। তুমি কি দশ মিনিট বসতে পারবে? আর যদি তাড়াহুড়া থাকে, চলে যেতে পার। অন্য আরেকদিন মিটিং করব।’ আমার অবস্থা আবেগে কাইন্দালছি হয়ে গেল। একে তো উনি ক্ষমা প্রার্থনা করছেন, তার উপর ভদ্রতা করে জানতে চাচ্ছেন দশ মিনিট বসতে পারব কিনা। আহারে! দেশে শিক্ষকদের সাথে একটু কথা বলার জন্য বারবার অফিসে এসে ঘুরে গিয়েছি, ঘণ্টার পর ঘণ্টা পিছু পিছু ঘুরেছি, উনাদের সময় হত না। আর এখন শিক্ষক আমার সময়ের এভেইলেবিলিটি নিয়ে চিন্তিত। আমি বললাম, ‘কোয়ি বাত নেহি, অপেক্ষা করছি। তুমি শেষ কর।’

দশ মিনিট শেষ হওয়ার আগেই প্রফেসরের রুমে ডাক পড়ল। আমি রুমের ভেতর ঢুকে দাঁড়িয়ে রইলাম। মার্কিন আদব কায়দা জানি না। চেয়ারে বসে পড়ব নাকি প্রফেসর অনুমতি দেওয়ার পর বসব? প্রফেসর আগের মিটিংয়ের ফাইলপত্র গুছাতে গুছাতে কথা শুরু করলেন। একটা কাজ দিয়েছিলেন, সেটা কতদূর এগিয়েছে জানতে চাইলেন। উত্তর দিয়ে আরও যোগ করলাম কাজ করতে গিয়ে এই এই ঝামেলার মুখোমুখি হয়েছি। হঠাৎ প্রফেসর জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি আমাকে ভয় পাও নাকি?’ থতমত খেয়ে গেলাম, ‘না তো!’ প্রফেসর বললেন, ‘আমি আগে কামড় দিতাম, এখন দেই না।’ উত্তরে রসাত্মক কিছু বলা দরকার। কী বলব বুঝতে পারছি না। আমি শিক্ষকদের সাথে রসিকতা করে অভ্যস্ত নই। সবসময় তটস্থ থেকেছি কোন কথায় কার কোথায় লেগে যায়। তারপরও বন্ধু ফরহাদের পরামর্শ মাথায় রেখে বলে ফেললাম, ‘বেঁচে গেছি!’ ফরহাদ বলেছিল, এখানকার প্রফেসররা রসিকতা করতে এবং রসিক উত্তর শুনতে পছন্দ করে। দেখা গেল আমার উত্তর শুনেও প্রফেসর হাসলেন। বললেন, ‘তাহলে তুমি দাঁড়িয়ে আছ কেন? আমার পাশে বসতে কোনো সমস্যা আছে?’ এতক্ষণে পরিষ্কার হল উনার কামড়ানোর অ্যানালজি। চেয়ার টেনে বসতে বসতে ভাবলাম, আমি কি আর জানি নাকি যে শিক্ষক না বললেও উনার সামনে রাখা চেয়ারে বসা যায়? দেশে থাকতে শিক্ষকের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছি তো রয়েছিই, বসতে বলার কোনো নামগন্ধ নেই। অনুমতি চাইতেও ভয় লাগত, আবার না উনার প্রেস্টিজ ইসু হয়ে দাঁড়ায় যে স্টুডেন্ট বসতে চাচ্ছে শিক্ষকের সামনে!

বসার পর প্রফেসর জিজ্ঞেস করলেন, ‘নতুন কিছু শিখতে পেরেছ?’ বললাম, ‘কিছু না, সবই নতুন শিখছি। কায়দা, কানুন, সংস্কৃতি। আবার দেশে থাকতে লেখাপড়ারও এত চাপ ছিল না। এখানে কোর্সওয়ার্ক বেশি।’ প্রফেসর মিটিমিটি হেসে বললেন, “উইকএন্ডে ধুমিয়ে পড়বে। রেসের দেশে এসেছ, দৌড়াতে হবে।” হতভম্ব হয়ে গেলাম। আমি তো জানতাম আমেরিকানরা পাঁচদিন ধুমিয়ে কাজ করে, দুইদিন করে চরম মাস্তি। আমি তো ঐ আমেরিকান ড্রিম দেখতে দেখতে এসেছি। ওটা কি তবে ভুল? ফরহাদ ব্যাখ্যা করল। এখানে নাকি গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্টদের কোনো বিশ্রাম নেই। উনারা সপ্তাহের সাতদিনই কলুর বলদ হয়ে থাকেন, আর আমেরিকান ড্রিমের ভোক্তা হলেন চাকুরীজীবীরা!

আমি যখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি, হুমায়ূন আহমেদের লেখা ‘আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই’ আত্মজীবনীটা হাতে পেয়েছিলাম। ওখানে একটা স্মৃতি ছিল আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষককে নাম ধরে ডাকার ব্যাপারে। পড়ে ভীষণ ধাক্কা খেয়েছিলাম। শিক্ষককে নাম ধরে ডাকে? এ আবার কেমন সংস্কৃতি? নাম ধরে ডাকলে শিক্ষকের প্রতি সম্মান কোথায় থাকল? এখন নিজেই পড়েছি এ বিপদে। মুখবইয়ে ‘বিদেশে উচ্চশিক্ষা’ সম্পর্কিত যেসব গ্রুপ আছে, সেগুলো থেকে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা পড়ে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন সম্পর্কে খানিকটা জ্ঞান লাভ করেছিলাম। জানতাম যে, এখানকার গ্র‍্যাজুয়েট স্টুডেন্টরা প্রফেসরদের নাম ধরে ডাকে। কিন্তু সামনাসামনি দেখে ব্যাপারটা এত অদ্ভুত লাগবে, চিন্তা করিনি। ডিপার্টমেন্টের ৯৭% স্টুডেন্ট আমেরিকান। এরা প্রফেসরদের সাথে যেভাবে আড্ডাবাজি করে সেটা দেখে হা হয়ে ছিলাম। প্রথম যেদিন স্যারাকে দেখলাম প্রফেসর রাবিয়াকে নাম ধরে ডেকে বলল, “Hei Rabia! Do you have some time to sit with us?”, চমকে উঠেছিলাম। একে তো প্রফেসরকে নাম ধরে ডাকার ব্যাপারটা আমার জন্য কালচারাল শক, তার উপর উনাকে “হেই” বলে সম্বোধন করাটাও শক! কিন্তু প্রফেসর রাবিয়া হাসিমুখে উত্তর দিলেন, “অবশ্যই।”

আমাদের অনুষদে গ্র‍্যাজুয়েট অ্যাসিস্টেন্টদের (জিএ) বসার জন্য আলাদা এলাকা আছে। ওটাকে জিএ এরিয়া বলে। যতজন জিএ আছি, ততটা ডেস্ক, চেয়ার আর ডেস্কটপ সাজানো এই এলাকায়। একদিন কয়েকজন জিএ বসে আছি চেয়ারে, আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে ডেস্কটপে কাজ করছি, হঠাৎ এলেন প্রফেসর জোন্স। এসেই হৈচৈ লাগিয়ে দিলেন। “গুড মর্নিং সুন্দরীরা! আমার একজন জিএ লাগবে যে আমাকে একটা সেমিনারে সাহায্য করবে। কে আছ এই অভাগাকে কিছু সময় দেবে?” উনার কথার ধরন দেখে মনে হল, এত ছ্যাঁচড়ামি করার কী আছে? সোজা বললেই হয়, “কে ফ্রি আছ?” প্রফেসররা থাকবেন গুরুগম্ভীর। ফালতু রসিকতা ইনাদের মানায় না। এত হৈচৈয়ের কারণই বা কী? গম্ভীর হয়ে কথা বলে চলে যাবেন। সারাজীবন এই দেখে এসেছি। গ্রেচেন নামের এক জিএ বলল, সে সময় দিতে পারবে। প্রফেসর জোন্স খুশি হয়ে চলে গেলেন। গ্রেচেন চেঁচিয়ে বলল, “হেই এল.জে.! আমাকে পুরো স্কেজিউলটা পাঠিয়ে দিও।” আমি হতভম্ব। এল.জে.? প্রথম নাম ধরে ডাকলেও একটা কথা ছিল। কিন্তু গ্রেচেন প্রথম নাম আর পদবীর আদ্যাক্ষর মিলিয়ে সংক্ষেপে ‘এল.জে.’ ডাকছে। তাও আবার চেঁচিয়ে! জোন্সও চেঁচিয়ে বললেন পাঠিয়ে দেবেন। এ কোথায় এসে পড়লাম?

যা হোক, এখন পর্যন্ত কাউকে নাম ধরে ডাকার মত সাহস অর্জন করিনি, “প্রফেসর”ই ডাকি। অন্য কর্মীদেরও নাম ধরে ডাকি না, মিয বা মিস্টার লাগিয়ে সম্বোধন করি। অথচ বাকি ক্লাসমেটরা সবাইকে নাম ধরে ডাকে। অনুষদের প্রশাসনিক সহকারী লিন্ডা বেন্সনের সাথে কাজের সুবাদে প্রায় মোলাকাত হয়। সে ষাটোর্ধ মহিলা। তাকে ডাকি ‘মিয বেন্সন’। মিয (Ms) আর মিস (Miss)-এর মধ্যে পার্থক্য হল, Miss দিয়ে অবিবাহিত কাউকে বুঝায়, আর বৈবাহিক অবস্থা যাই হোক না কেন (বিবাহিত, অবিবাহিত) Ms দিয়ে সবাইকেই বুঝানো যায়। Miss আর Mrs-এর বিকল্প হিসেবে Ms শব্দটার উৎপত্তি। ব্যক্তিগতভাবে আমি Ms ব্যবহার করার পক্ষপাতী। পুরুষের বেলায় যেমন বিবাহিত বা অবিবাহিত কোনো ফারাক নেই, সবাই মিস্টার, নারীর বেলায়ও তেমনি Miss আর Mrs থাকার দরকার নেই। সবাই Ms। তো লিন্ডা একদিন বললেন, “প্লিজ, তুমি আমাকে মিস বেন্সন না ডেকে লিন্ডা ডেকো। খুশি হব।” নাম ধরে ডাকলে খুশি হবে? ভাল তো! লিন্ডার কথায় ভরসা পেয়ে এরপর সব অফিস সহকারীকে নাম ধরে ডাকা শুরু করলাম। লিন্ডা সবচেয়ে বয়স্ক। ওকে যদি নাম ধরে ডাকা যায়, তাহলে অন্যদের তো যায়ই!

(৩২)

আমেরিকার ভার্সিটিগুলোয় পড়াশোনার স্টাইল বাংলাদেশের তুলনায় অনেকখানি আলাদা। অনেকখানি না বলে প্রায় পুরোটাই আলাদা বলা যায় কিনা সে ভার দিলাম পাঠকদের উপর। আমি ভিন্নতাগুলো বলব, আপনারা ঠিক করবেন কতখানি আলাদা। শুরু করি আমাদের ডিপার্টমেন্ট দিয়ে। আমাদের এখানে ক্লাসগুলো বেশ অদ্ভুত স্টাইলে নেওয়া হয়। গ্র্যাজুয়েট অ্যাসিস্টেন্টরা যদি অ্যাসিস্টেন্টশিপ বজায় রাখতে চায় তাহলে এক শিক্ষাবর্ষে মোট নয় বিভিন্ন সাবজেক্টের ক্লাস সপ্তাহে একদিন করে হয়, আর চলে টানা দুই/তিন ঘণ্টা ধরে। এর কারণ, ডিপার্টমেন্টের বেশিরভাগ স্টুডেন্টই হয় রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ান হওয়ার জন্য ডায়েটেটিক ইন্টার্নশিপ করছে নতুবা গ্র্যাজুয়েট অ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে চাকরি করছে। তাদেরকে ক্লাসের বাইরে প্রফেশনাল লাইফে সময় কাটাতে হয় বেশি। তাই একদিনের কয়েক ঘণ্টা ক্লাসের জন্য বরাদ্দ রেখে সপ্তাহের বাকি দিনগুলো পেশাগত কাজে ব্যয় করার জন্য দেওয়া হয়। ক্লাস লেকচার ব্যাপারটা এখানে তেমন দেখছি না। লেকচার বেশিরভাগই অনলাইনে আপলোড করে দেন প্রফেসররা। বাসায় বসে, বাসে বসে, টয়লেটে বসে, কিংবা রান্না করতে করতে আপনি শুনবেন সেই লেকচার। আর ক্লাস ব্যাপারটা রাখা হয়েছে আমাদের চেহারা দেখানো এবং কিরিঞ্চি করার জন্য। যেমনঃ প্রেজেন্টেশন দেওয়া, টক শো’র প্রেজেন্টার হওয়া (যেখানে একটা নির্দিষ্ট টপিকের উপর আপনি পড়াশোনা করে যাবেন আর অন্যরা আপনাকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করবে টক শোর আদলে। বুঝতেই পারছেন, প্রস্তুতি ভাল না হলে পুরা ধরা!), অন্যদেরকে পড়ানো (উপস্থিত সবাইকে একটা নির্দিষ্ট টপিকের উপর লেকচার দেবেন, এরপর সে টপিক সম্পর্কিত কেইস স্টাডি করতে দেবেন। এরপর মূল্যায়ন করবেন কে কেমন করল। এ থেকে বুঝা যাবে আপনার বুঝানোর দৌড় কতটুকু) ইত্যাদি। প্রতিটা কিরিঞ্চির জন্য গ্রেডিং আছে। বিশাল ফ্যাঁকড়া!

আবার গ্র্যাজুয়েট অ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে আমার যেসব দায়িত্ব আছে, সেগুলোও আমি নিজের সুবিধামত স্কেজিউল করে নিতে পারি। ধরুন, এই সোমবার সকাল দশটায় প্রফেসর আমার সাথে জিএ মিটিং করতে চেয়েছেন, আমি ফ্রি ছিলাম, মিটিং করেছি। কিন্তু পরবর্তী সোমবারে ক্যাম্পাসের একটা প্রোগ্রামে আমি রেজিস্ট্রেশন করেছি বা করার ইচ্ছে আছে। অর্থাৎ সেদিন আমি ফ্রি থাকব না ফলে মিটিং করাও সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে আগে থেকে প্রফেসরকে বলে রাখতে হবে। তাহলে পরস্পরের স্কেজিউল অনুযায়ী উপযুক্ত দিন ক্ষণ ঠিক করা সম্ভব হবে। এই সুবিধার কথা যেদিন জেনেছি, নিজেকে বড্ড কেউকেটা লাগছিল। যাব্বাহ! আমারও তাহলে দাম আছে? দেশে থাকতে তো টের পাইনি!

এখানে আসার পরই জীবনে প্রথম ঘরে বসে একাডেমিক কুইজে অংশ নিলাম আর চমৎকৃত হলাম। এতদিন শুধু মুহম্মদ জাফর ইকবাল আর হুমায়ূন আহমেদের জীবনীতে ওপেন বুক একজামের কথা পড়েছি। আজ সেটা না হলেও কাছাকাছি একটা অভিজ্ঞতা হল। কীভাবে এটা কাজ করে? এই কুইজের বেলায় যা ঘটেছে, বলি। ডায়াবেটিস প্যাথোফিজিওলজির উপর প্রফেসর লেকচার রেকর্ড করে অনলাইনে (ভার্সিটি ওয়েবসাইটে) আপলোড করেছেন, আমাদের সেটা শুনতে হয়েছে। কয়েকটা রিসার্চ পেপার দিয়েছেন, কিছু মডিউল সরবরাহ করেছেন যেগুলো আমাদের পড়তে হয়েছে। এরপর কুইজে অংশ নিয়েছি। পড়ে আর শুনে যা বুঝেছি, সেই জ্ঞানের উপরেই কুইজ হয়েছে। জনসংখ্যা কম হওয়ার কত সুবিধা! আমি দুজন রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ানের অধীনে দুইটা প্রোগ্রামে কাজ করি। একজন ডায়েটিশিয়ান আমেরিকান, আরেকজন চাইনিজ। দুই বস নিয়ে আজ তুলনামূলক আলোচনা করব।

আমেরিকান মেয়েটি আমাকে হাতে ধরে সব কাজ শিখিয়েছে। কীভাবে রেড পিপার কাটতে হবে, কীভাবে থালাবাসন ধুতে হবে, কীভাবে আনারস ছিলতে হবে। যেহেতু আমেরিকান সংস্কৃতি আমার কাছে নতুন, তাই জ্যাকলিনের মনে হয়েছে আমাকে প্রথমে সবকিছু হাতে কলমে দেখিয়ে দেওয়া উচিৎ। এতে আমি সবকিছু দ্রুত শিখতে পারব। হয়েছেও তাই। জ্যাকলিনের সাথে কাজ করতে আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। কিছু ভুল হয়ে গেলেও ভয় লাগে না। ও হাসিমুখে পুরো ব্যাপারটা টেক কেয়ার করে। সবচেয়ে বড় কথা, সে আমাদের সাথে কাজ করে। আমাদের কাজ করতে দিয়ে নিজে অফিসে গিয়ে বসে থাকে না। অন্যদিকে চাইনিজ মেয়ে শিয়াও শুধু মুখে বলতে থাকে কী করতে হবে। ওর মধ্যে ছটফটানি খুব বেশি। তাড়াহুড়া করে ইন্সট্রাকশন দিয়ে চলে যায় আরেকজনের কাজ দেখতে। বুঝে না যে, দুইবার মুখে বলার চেয়ে একবার প্র্যাক্টিকেলি করে দেখালে সেটা বেশি ফলপ্রসূ। আমি যখন বলি একটু দেখিয়ে দিতে, সে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। জিজ্ঞেস করে, “তুমি কখনো এটা করনি?… তুমি স্ক্র্যাম্বল্ড এগ বানাওনি?… তুমি লেটুস কুচি করনি?” না, করিনি। অথবা করলেও সেটা অন্য কায়দায়, আমেরিকান স্টাইলে নয়। আমাদের কাজ করতে দিয়ে শিয়াও অফিসে গিয়ে কম্পিউটারে কাজ করে, পড়াশোনা করে। অনেক সময় কাজের পাহাড় হয়ে যায় ক্যাফেতে। আমরা হিমশিম খাই সামাল দিতে। অথচ প্রথম থেকে ও আমাদের সাহায্য করলে কাজ জমার কথা না।

বাংলাদেশে আমি যে বায়িং হাউজে চাকরি করতাম, সেখানকার ইতালিয়ান বস আমাকে বলেছিলেন, “অধীনস্থদের দিয়ে কাজ করাতে চাইলে তোমাকেও ওদের সাথে কাজ করতে হবে। তুমি ফ্যা ফ্যা করে ঘুরলে ওরা কাজ করার ইনিশিয়েটিভ পাবে না।” হয় শিয়াও এটা জানে না, নয় জেনেও মানে না। আমার বস আরও বলেছিলেন, “তুমি ভাল অভিনেতা নও। মেজাজ খারাপ করলে সেটা তোমার চেহারায় ফুটে উঠে, লুকিয়ে রাখতে পার না।” আমি থতমত খেয়ে গিয়েছিলাম কারণ আমার ধারণা ছিল, আমি খুব সুন্দর করে রাগ চেপে হাসিমুখে কথা বলছি। যা হোক, শিয়াও একদিন আমাকে ধরে বসল, “তুমি কি আমার উপর রাগ করেছ? আমি কি তোমার উপর বেশি চাপ দিচ্ছি?” ভদ্রতার খাতিরে সরাসরি কিছু বলতে পারিনি। ট্রাম্পকে গালি দেওয়ার পরও জেল এড়ানো যেতে পারে বাক স্বাধীনতার এই দেশে, কিন্তু নিজের ম্যানেজারকে সরাসরি কিছু বললে অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ নিয়ে টানাটানি পড়তে পারে কিনা, বুঝছি না। জ্যাকলিনের মত ভাল বস পেলে কর্মক্ষেত্র খারাপ লাগে না। ওর কিচেনে এফএম রেডিও বাজতে থাকে সারাক্ষণ। আমরা হাসাহাসি করে, গান শুনে কাজ করি। আর শিয়াও এত বেশি সিরিয়াস যে, সারাক্ষণ “এটা করেছ? ওটা করেছ?” তদারকির মধ্যে থাকে। চাইনিজদের নামে “দৌড়ের উপরে রাখার” যে অপবাদ শুনেছিলাম, সেটা মনে হচ্ছে সত্যি।

আরেকটা উদাহরণ দিই আমেরিকানদের শিক্ষাদান পদ্ধতির। কিছুদিন আগে কোর্সের অংশ হিসেবে আমাদেরকে ইন্টারডিপার্টমেন্টাল একটা সেমিনারে অংশ নিতে হয়েছিল। একে যতটা না সেমিনার, তার চেয়ে বেশি ‘প্র্যাক্টিকেল ক্লাস’ বললে ভাল হয়। সেমিনারটা ছিল ভার্সিটির মেডিকেল, নার্সিং, নিউট্রিশন, ফিজিকেল থেরাপি, ওকুপেশনাল থেরাপি এবং ফার্মেসিতে অধ্যয়নরত স্টুডেন্টদের নিয়ে। রোগীকে সেবাদানের পেছনে যেসব পেশার লোকজন কাজ করেন, তারা নিজেদের মধ্যে কীভাবে মিথস্ক্রিয়া বজায় রেখে রোগীকে সুস্থ করে তুলতে পারেন, সে ব্যাপারটাই হাতে কলমে শেখানো হল সেমিনারে।

আমাদেরকে দেওয়া হল সেকেন্ড ডিগ্রি বার্ন হওয়া এক রোগীর কেইস। উনার চিকিৎসার জন্য মোট আট বিভাগের লোকজনকে কাজ করতে হবে। রোগী যখন হাসপাতালে, তখন কাজ করবেন ডাক্তার, নার্স, রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ান, ফিজিওথেরাপিস্ট, ওকুপেশনাল থেরাপিস্ট, ফিজিশিয়ান অ্যাসিস্টেন্ট এবং ফার্মাসিস্ট, আর রোগীকে ডিসচার্জ করার পর আউট-পেশেন্ট সেবাদানের জন্য কাজ করবেন সমাজকর্মীরা। সে এক এলাহি কারবার। এ ধরনের সেবা পাওয়ার জন্য রোগীকে কত ডলার চুকাতে হবে, আমার জানা নেই। তবে এটুকু বুঝেছি, কোনোদিক দিয়েই যেন রোগীর সেবার খামতি না থাকে, সে চেষ্টাই করা হচ্ছে।

আমাদের কাজ হল, টিম মিটিংয়ে বসে রোগী নিয়ে আলোচনা করা, যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে রোগী সম্পর্কে মতামত দেওয়া এবং ট্রিটমেন্ট কী হবে, ডায়েট কী হবে, কীভাবে ফলোআপ করা হবে ইত্যাদি ঠিক করা। এই সেমিনারে যাওয়ার আগে আমার ধারণা ছিল না রোগীর হিস্ট্রি কীভাবে নেওয়া হয় কিংবা কত পেশার লোকজন হিস্ট্রি নেয়। কিন্তু সেমিনারে যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে যখন রোগীর আসল কেইস হিস্ট্রি আমাদের পড়তে দেওয়া হল, দেখলাম আট বিভাগের কর্মীই হিস্ট্রি নিয়েছেন। যার যার ক্ষেত্র সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা পড়ে মাথা ভোঁ ভোঁ শুরু করল। আবার এও বুঝলাম, পারস্পারিক তথ্য আদান প্রদানের ফলে কীভাবে প্রতিটা পেশাই উপকৃত হচ্ছে। হয়ত রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ানের চোখে পুষ্টি সম্পর্কিত এমন একটা শারীরিক অবস্থা ধরা পড়ল যেটা ডাক্তার বা নার্স খেয়াল করেননি। সে তথ্যটা টিম মিটিংয়ের সময় জানানো হলে রোগীকে সেবা দেওয়া সহজ হবে।

আমি সবচেয়ে বেশি বিস্মিত হয়েছি কেয়ার প্ল্যানে সমাজকর্মীদের অন্তর্ভুক্তি দেখে। রোগীদের সেবায় যে সোশাল ওয়ার্কাররা ভূমিকা রাখতে পারে, জানা ছিল না। রোগীকে রিলিজ করার কিছুদিন পর সমাজকর্মীরা তাকে দেখতে গিয়েছিলেন। গুরুতর পুড়ে যাওয়া রোগীর মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকাটা স্বাভাবিক। তাই হাসপাতালের পক্ষ থেকে তাকে দেখতে যাওয়াটা তার জন্য ভালোলাগার। সমাজকর্মীদের সেই ভিজিট থেকে বেশ কিছু নতুন তথ্য আমরা জানতে পেরেছি, যেটা হাসপাতালে থাকতে ঘটেনি। সবকিছু মিলিয়ে আমি যারপরনাই মুগ্ধ। এই সেমিনার করে নিউট্রিশন বিষয়টির উপর ভাললাগা আরও জোরদার হল। মনে হল আমিও রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত দলের একজন সদস্য এবং একজন রোগীর সুস্থ হওয়ার পেছনে আমারও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এই অনুভূতিটা বাংলাদেশে থাকতে কোনোদিন পাইনি। পাওয়ার মত কোনো সুযোগও দেওয়া হয়নি।

(৩৩)

সেন্ট লুইস বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাচীন আর আধুনিক দুই ধরনের দালানই আছে। আমাকে বেশি টানে প্রাচীনগুলো। এগুলোর দিকে তাকালে গা কেমন শিরশির করে। মনে হয় যেন দুই/তিন শ’ বছর আগে চলে গেছি। পুরো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেকগুলো হ্যামক। স্টুডেন্টরা এখানে শুয়ে থাকে, দোল খেতে খেতে পড়ে, বিশ্রাম নেয়। আর আছে ঘাসের উপর বিছানো বেঞ্চ। খোলা আকাশের নিচে বসে, ফুরফুরে হাওয়া খেয়ে আপনি পড়ুন, খান, আড্ডা দিন কিংবা বিশ্রাম নিন – আপনার ইচ্ছা। এই যেমন আমি চটপট খেয়ে নিলাম! ‘পায়াস লাইব্রেরি’ নামক পাঠাগারটাতে আছে ১৩ লাখ বই, আর আছে ‘মুন গেযার’ নামে একটা ভাস্কর্য। এটা যতবার দেখি, আনমনা হয়ে যাই। আমিও হলুদ চাঁদের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকি কিনা! আরও আছে ভাস্কর্য পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে, অসংখ্য। এদের মধ্যে একটার ছবি দিলাম তিন অ্যাঙ্গেলে। অত্যাধুনিক এই ভাস্কর্যের মাথামুণ্ডু আমি বুঝতে পারিনি। কেউ পারলে বুঝিয়ে দেবেন একটু।

এখনো ঢুকা হয়নি। তাই খুব একটা ঢুকতে ইচ্ছে করেনি প্রথমদিকে। কিন্তু একসময় মনে হল বইকে তার খোলস দেখে বিচার করা উচিৎ হচ্ছে না। তাই শুভদিন দেখে ঢুকে পড়লাম দালানটায়। ঢুকে মনে হল “ম্যায় হুঁ না” মুভিতে জায়েদ খান যখন লাইব্রেরিতে ঢুকেছিল, তখন যেমন ঘণ্টা বেজে উঠেছিল কিংবা উলুধ্বনি, শাঁখ বাজিয়ে ওকে স্বাগত জানানো হয়েছিল, আমাকেও এভাবে স্বাগত জানানো উচিৎ। প্রায় ছয় বছর পর একাডেমিক লাইব্রেরিতে পদধূলি দিলাম। এখানকার লাইব্রেরিতে ঢুকলে বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, পড়াশোনা করার ইচ্ছে চেগিয়ে উঠবে অবশ্যই। থরে থরে সাজান বইয়ের তাক দেখে বা নীরব সুনসান কিউবিকল দেখে ক্লাস এসাইনমেন্ট করার প্রতি মনোযোগ চলে আসবে। কিউবিকলগুলোতে একটা রিভলভিং চেয়ার, একটা মাঝারি সাইজের টেবিল আর একটা করে টেবিল ল্যাম্প দেওয়া। টেবিলের নিচে পা রাখার জন্য টুলও আছে। আছে গ্রুপ স্টাডি করার জন্য গোল টেবিলের চারদিকে পাতা চার/পাঁচটা চেয়ার। আধশোয়া হয়ে পড়তে চান? সেজন্যে আছে নরম গদির সোফা, সাথে পা রাখার জন্য নরম গদির টুল। প্রথমবার আমি বুঝতেই পারিনি যে এটা পা রাখার জন্য দেওয়া হয়েছে। এত আরাম করে মানুষ পড়বে, এটাই মাথায় আসেনি। অনুপস্থিত শুধু বিছানা, বালিশ, কম্ফোর্টার। রিকুইজিশন দিলে এগুলোর ব্যবস্থাও করবে কিনা, বুঝছি না। আপনি খানা, পানীয় নিয়ে টেবিলে বসতে পারেন। ফল আর স্প্রিং সেমেস্টারে রাত ২ টা পর্যন্ত বসে থাকতে পারবেন। বই ইসু করার ব্যাপারেও কোনো লিমিট নেই। যত খুশি নিতে পারবেন। একবার নিলে গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্টরা চার মাস অব্দি রাখতে পারে। আমি তো অনলাইনে বইয়ের ক্যাটালগ দেখে কোনটা ছেড়ে কোনটা নেব, সেটাই ঠিক করতে পারছিলাম না। অবশেষে আমার জন্য “Evolution: What the fossils say and why it matters” (Donald Prothero) আর The Emperor of All Maladies: A Biography of Cancer (Siddhartha Mukherjee) বই দুইটা নিলাম (লাইব্রেরির বিবর্তন তত্ত্বের সেকশন দেখে Shuvonn Rezaaকে খুব মনে পড়ছিল। ছেলেটা কী খুশিই না হত বইগুলো পড়তে পারলে!)। প্রিন্স নর্স পুরাণ খুব পছন্দ করে বলে ওর জন্য সিলেক্ট করে রাখলাম Norse mythology (Neil Gaiman), Norse mythology: a guide to the Gods, heroes, rituals, and beliefs (John Lindow), আর From Asgard to Valhalla : the remarkable history of the Norse myths (Heather O’Donoghue) বই তিনটা। পরেরবার এসে নিয়ে যাব।

ভার্সিটিতে আরেকটা লাইব্রেরি আছে যেটা মেডিকেল ক্যাম্পাসে অবস্থিত। ওটা পায়াস লাইব্রেরির চেয়ে আকারে ছোট। আমার ডিপার্টমেন্টও মেড ক্যাম্পাসে। ক্রিসমাস সিজনে ওখানে গিয়ে মজার একটা দৃশ্য দেখেছি। মোটা মোটা বই দিয়ে ক্রিসমাস ট্রি বানিয়ে রেখেছে। সবগুলো বই লাল আর সবুজ রঙের মলাটযুক্ত। এত সুন্দর লেগেছিল আইডিয়াটা আমার! নর্থ ক্যাম্পাসের লাইব্রেরিটা বাসার কাছে বলে অফ ডে-তে এখানে এসে বসি। এত আগ্রহ নিয়ে লাইব্রেরিতে যেতাম ছোটকালে, যখন লাইব্রেরি মানে ছিল গল্পবইয়ের ভাণ্ডার। পড়াশোনার জন্য আগ্রহ নিয়ে লাইব্রেরিতে গিয়েছি কিনা, মনে পড়ে না। অনার্স মাস্টার্সের সময় লাইব্রেরিতে যেতাম দরকার পড়লে। কিন্তু এখন লাইব্রেরিতে আসি মনের টানে। বাসায় গেলে খালি গল্পের বই নিয়ে বসতে বা ফেসবুকে ঢুকে সময় নষ্ট করতে ইচ্ছে করে। তাই সময়ের সঠিক ব্যবহারের জন্য এখন পর্যন্ত লাইব্রেরিটাই সেরা সার্ভিস দিচ্ছে।

পর্ব পনেরো এখানে

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post যুক্তরাষ্ট্রে স্নাতকোত্তর জীবনের দুই বছর (পর্ব ১৩)
Next post যুক্তরাষ্ট্রে স্নাতকোত্তর জীবনের দুই বছর (পর্ব ১৫)