পর্ব এক
(৪)
যেদিন আমি সেন্ট লুইস বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউট্রিশন এন্ড ডায়াটেটিক্স ডিপার্টমেন্ট থেকে গ্র্যাজুয়েট অ্যাসিস্টেন্টশিপের অফার পেয়েছিলাম, সেদিনই অফিসে গিয়ে সহকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিদায়ী ইমেইলের ড্রাফ্ট লিখে ফেলেছিলাম। ভিসা হবে কি হবে না, সে বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা নেই, অথচ আমার অফিস ছাড়ার কার্যক্রম শুরু! যেদিন ভিসা পেলাম, সেদিন অফিসে এসে ঠাণ্ডা মাথায় ভাবলাম হিউম্যান রিসোর্সকে কী বলব। যেহেতু আমি অফিস ছাড়ার নোটিশ একমাস আগে না দিয়ে ষোলদিন আগে দিচ্ছি, এর মাশুল হিসেবে আমার বেতন কাটা যেতে পারে। কিন্তু আমি চাই না এমনটা হোক। এ মুহূর্তে টাকা হল ঈশ্বর। এইচআরে যিনি বসেন, ওই ভাইয়ের সাথে আমার ভাল সম্পর্ক। উনি একবার জিজ্ঞেস করেছিলেন, পুষ্টিবিজ্ঞানে পড়ে আমি কেন টেক্সটাইল সেক্টরে এলাম। দেশে যদি পুষ্টি সম্পর্কিত কোনো চাকরি নাও পাই, আমি তো বিদেশ যেতে পারি উচ্চশিক্ষার জন্য। উত্তরে বলেছিলাম, সে চেষ্টাই করছি। তাই যখন উনাকে বললাম আমেরিকার ভিসা হয়ে গেছে, ভাই খুশি হলেন। যখন বললাম, আমার পদত্যাগ যেন আজ থেকে ষোলদিন পর অর্থাৎ আগস্টের এক তারিখ থেকে কার্যকর হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে, তখন ভাই বিমূঢ় হলেন। এত দ্রুত কাকে অ্যাপয়েন্ট করবেন আমার জায়গায়? কিন্তু আমার হাতে আর অপশন নেই। হয় এস্পার, নয় এস্পারই। এরপর জানালাম আমার ইমেডিয়েট বসকে। গায়া নাম্মী দারুণ স্মার্ট ইতালীয় তরুণীটি আমাকে খুব পছন্দ করে। আমার রিজাইন দেওয়ার সিদ্ধান্ত শুনে সে হকচকিয়ে গেল। এতবড় বিস্ময় তার জন্য অপেক্ষা করছিল, নিশ্চয় ভাবেনি। কিন্তু বিজ্ঞজনেরা বলেছেন, লাইফ ইজ ফুল অফ সারপ্রাইজেস। জীবন চমকময়।
এরপরের ঘটনা খুব সংক্ষিপ্ত। পুরো অফিসে চাউর হয়ে গেল আমার আমেরিকা যাওয়ার কথা। বেশিরভাগ সহকর্মীই উৎসাহ দিলেন লেখাপড়া চালানোর ব্যাপারে। কয়েকজন একটু বিস্মিত হলেন ত্রিশ বছর বয়সে আমার লেখাপড়ার ইচ্ছে চাগিয়ে উঠেছে দেখে। অতি দ্রুততার সাথে আমার জায়গায় নতুন একজনকে নিয়োগ দেওয়া হল, কিন্তু তার সাথে আমার দেখা হল না। আমি চলে আসার কয়েক সপ্তাহ পর সে যোগ দিয়েছে। যেহেতু জীবন চমকময়, তাই আমার বিদায়ের কয়েকদিন আগে আমাকে চমকে দিয়ে হাজির হল দুটো কেক। সাথে বিশাল এক ফুলের তোড়া। পুরো অফিস হাজির হল আমাকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য। কেক কেটে নিজে খেয়ে, অন্যদের খাইয়ে উদযাপন করলাম ফেয়ার ওয়েল পার্টি।
গায়াকে আমিও খুব পছন্দ করতাম কারণ ভালো লাগার ব্যাপারটা পারস্পারিক। যখন কেউ আপনাকে পছন্দ করে, তখন আপনিও তার প্রতি আকর্ষণ অনুভব করবেন। গায়া চৈনিক ভাষা জানা সুপার কিউট বস। সে যখন চৈনিক সহকর্মীদের সাথে মান্দারিন ভাষায় অনর্গল কথা বলে, আমি আর রাকিব ভাই আড়চোখে তাকিয়ে থাকি। আমরা তিনজন মিলে একটা দল। দলনেতা হিসেবে গায়া দারুণ। আমাদের সমস্যা সমাধানে সবসময় প্রস্তুত। এমন একজনকে ভাল না লেগে উপায় নেই। ভালোলাগার চিহ্ন হিসেবে ওকে কিছু দিতে মন চাইল। আড়ং থেকে কারুকাজ করা কাঠের বাক্স দিলে কেমন হয়? শুনেছি ইউরোপ আমেরিকার লোকজন শৈল্পিক জিনিসপত্র খুব পছন্দ করে। কিন্তু বাক্স দেওয়ার পর এক কাণ্ড হল। বাক্সের দিকে গায়া ছলছল চোখে তাকিয়ে রইল। অনেকক্ষণ কোনো কথা নেই। আমি ভ্যাবলার মত বসে আছি ওর পাশে। অনেকক্ষণ পর বাকরুদ্ধ কণ্ঠে গায়া ধন্যবাদ দিল। অবশ্য ধন্যবাদের প্রয়োজন ছিল না। ওর চোখ দেখেই আমার মন ভরে গেছে।
শেষমেশ দেখলাম আমার বেতনও কাটেনি, বছর শেষের লভ্যাংশ থেকেও বঞ্চিত করা হয়নি। আমেরিকায় আমি যখন প্রথম সেমিস্টারের ফলাফল হাতে নিয়ে বসে আছি, তখন এইচআরের ভাইয়া স্কাইপে যোগাযোগ করে বললেন, আমি যেন কাউকে পাঠিয়ে লভ্যাংশটা নিয়ে যাই। যে মুহূর্তে আমার টাকার খুব প্রয়োজন ছিল, সে মুহূর্তে অফিস আমাকে নিরাশ করেনি। এজন্য আমি অফিসের হর্তাকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
(৫)
এক তারিখ থেকে আমি ঝাড়া হাত পা হয়ে গেলাম। অফিস নেই, সকাল সাতটায় ঘুম থেকে উঠা নেই, সাপ্লায়ারদের সাথে মিটিং নেই, রাগারাগি নেই, কাজ করিয়ে নেওয়ার চাপ নেই। একদম মুক্ত বিহঙ্গ যাকে বলে। কিন্তু আমার আর প্রিন্সের ফ্লাইট আগস্টের আট তারিখে। কাজ থেকে তাই পুরোপুরি মুক্তি মিলল না। জামাকাপড় যদিও গুছিয়ে ফেলেছি, কিন্তু লাগেজের ওজন মাপা হয়নি। ইতিহাদ এয়ারলাইন্সের ব্যাগেজ অ্যালাওয়েন্স পলিসি অনুযায়ী দুইজন মোট চারটা বড় লাগেজ, যাকে বলে চেক্ড লাগেজ, নিতে পারব। একেকটার সর্বোচ্চ ওজন হতে পারবে ২৩ কেজি। সাত কেজি ওজনের কেবিন লাগেজ নিতে পারব একটা করে। সাথে ব্যাকপ্যাক নেওয়া যাবে পাঁচ কেজি ওজনের। যেহেতু বায়িং হাউজে কাজ করতাম, জামাকাপড়ের কমতি ছিল না। যা দরকার নেই, সেটাও ভরেছি লাগেজে। এই করতে করতে লাগেজ হল একেকটা কয়েক মণ ওজনের। হুমায়ূন আহমেদ থাকলে বলতেন, মৈনাক পর্বতের মত ওজন। আগস্ট মাস থেকে কালাচাঁদপুরের বাসাটা ছেড়ে দেব বলে নোটিশ দিয়েছি বাড়িওয়ালাকে। জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত অফিস করতে হয়েছে বলে ঘরের জিনিসপত্র গুছিয়ে উঠতে পারিনি। এবার শুরু হল আসবাবপত্র বাক্সবন্দী করার পালা। যখন বাসায় উঠেছিলাম, একটু একটু করে আসবাব কিনেছিলাম। আজ এটা, কাল সেটা। কিন্তু যাওয়ার সময় সব একসাথে প্যাক করতে হবে, নিতে হবে। মহা ঝামেলা। আমার অতি সাধের বুক শেলফ দেখে চোখে জল চলে এল। কত বছর ধরে যে বইগুলো জমিয়েছি! এগুলো সব ফেলে যেতে হবে। মামাত বোন হান্না খুব বই পড়ুয়া। সে এই শেলফের উপর মালিকানা জারি করে রেখেছে। আমিও জানি বইগুলো ওর কাছে ভাল থাকবে। সুযোগ হলে একটু একটু করে বইগুলো নিয়ে আসব আমেরিকায়। কিন্তু ততদিন পর্যন্ত একটা উপযুক্ত হাতে থাকা দরকার।
আগস্টের পাঁচ তারিখে আমরা বাসাটা ছেড়ে দিলাম। আমার আর প্রিন্সের প্রথম সংসার। সংসারে ছিল না কিছুই। না টেলিভিশন, না ফ্রিজ, না সোফা, না খাট। এই গরীবীয়ানার ভেতর দেড় বছর কাটিয়ে দিলাম। কখনো বোধ করিনি এসব জিনিসের চাহিদা। পড়ার টেবিল, চেয়ার, আলমারি আর বইয়ের তাকের চাহিদা ছিল, কিনেছি। ফ্রিজ কিনব না বলে প্রায় প্রতিদিন রান্না করতে হত। ঢাকার স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে তরকারি দুইদিনের বেশি রাখা যেত না। তাতে কোনো অসুবিধা হয়নি। বাহুল্য বর্জন করে আমরা টাকা জমিয়েছিলাম আমেরিকার জন্য। কবে অ্যাডমিশন হবে, কবে যাব, কিছুই জানতাম না। কিন্তু আশায় আশায় টাকা জমাতাম। সবসময় মনে হত, একদিন না একদিন আমার হবেই। এত যে চেষ্টা করছি, একদিন সুযোগ পাবই। ২০১৪ সাল থেকে চেষ্টার শুরু। আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব তো বটেই, ছোট ভাইয়ের বন্ধুরাও জানত আমি পিএইচডির জন্য আমেরিকায় যাওয়ার চেষ্টা করছি। অনেকেই খবরাখবর জানতে চাইত, জিজ্ঞেস করত কতদূর কী হল। হতাশা চাপা দিয়ে স্বাভাবিক কণ্ঠে বলতাম, চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। লেবু বেশি চিপলে যেমন তিতা হয়ে যায়, পাঁচ বছর ধরে আমার চেষ্টা চালানোর গল্পের কারণে আমেরিকায় যাওয়ার ব্যাপারটা খেলো হয়ে গেল। শেষের দিকে আর কেউ কিছু জিজ্ঞেস করত না। অবশেষে যখন সুখবরটা এল, অঝরকে মিষ্টি বিতরণ করতে হল ওর বন্ধুদের মাঝে। সবাই বলতে গেলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। এতদিনের চেষ্টা আমার বৃথা যায়নি। তবে একটা খামতি থেকে গেল। পিএইচডিতে নয়, আমি সুযোগ হয়েছে মাস্টার্স কোর্সে যাওয়ার।
ধান ভানতে শিবের গীত হচ্ছে। ফিরে আসি বাক্স প্যাঁটরার গল্পে। মাঝারি আকৃতির পিকআপ ভ্যানে সমস্ত জিনিস উঠানোর পর খালি বাসার দিকে তাকিয়ে খারাপ লাগা শুরু হল। এতদিন কাজের চাপে খারাপ লাগানোর সময় পাইনি। এখন পর্দাহীন জানালা দেখে মনে পড়ল, নিউমার্কেট ঘুরে ঘুরে গ্রামীণ চেকের পর্দা কেনার কথা। খালি মেঝে দেখে মনে হল, বাসা থেকে খাট দিতে চাইলেও আমরা ফ্লোরিং করাকে বেছে নিয়েছিলাম। মাথার উপর খালি সিলিং দেখে ঘটাং ঘটাং শব্দ করে ঘুরা ফ্যানের কথা মনে পড়ল। শব্দই হত শুধু, হাওয়া হত না মোটে। এসব অভ্যস্ততা ছেড়ে চলে যাব? এর মধ্যে পুরো ঢাকা শহর জুড়ে চলছে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন। ২৯ জুলাই এয়ারপোর্ট রোডে জাবালে নূর পরিবহনের এক বাস চাপা দিয়ে মেরে ফেলেছিল দুই কলেজ শিক্ষার্থীকে। এই হত্যাকাণ্ডে ফুঁসে উঠেছে সমগ্র দেশ। রাস্তা বন্ধ করে মিছিল হচ্ছে, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা নেমে এসেছে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে। সে এক অভূতপূর্ব ঘটনা। কিন্তু এই আন্দোলনে পড়ে আমাদের দুজনের পরিস্থিতি বেশ নাজুক হয়ে গেল। সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত রাস্তায় যানবাহন চলে না, কোথাও যেতে পারি না। শেষ মুহূর্তের কিছু কেনাকাটা করতে হবে, পরিচিতদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ বাকি পড়ে আছে। কিছুই হয়ে উঠছে না। উপায় না দেখে বেশ কয়েকটা দাওয়াত বাতিল করতে হল।
পাঁচ তারিখ রাতে যখন পিকআপ ছুটে চলেছে শাহবাগে বাবা-মায়ের বাসার উদ্দেশ্যে, খেয়াল হল আর মাত্র তিনদিন আছি বাংলাদেশে। পুরো ল্যাজেগোবরে অবস্থা। পাঁচ বছর ধরে যত ভুংচুং কল্পনা করেছি দেশ ছাড়ার আগে করব বলে, কোনো অবস্থা নেই সেগুলো করার। ন্যাংটোকালের বন্ধুর সাথেও দেখা করা হল না। এমনকি কলেজে গিয়ে প্রফেসরদের জানাব অ্যাডমিশনের কথা, সেটাও হয়নি। মোবাইলে টেক্সট করে জানিয়েছি। জীবনটাই এরকম। কিছু পাবেন, কিছু ত্যাগস্বীকার করবেন। সবই পাবেন, এমনটা সম্ভব না। প্রবাবিলিটি জিরো। শেষের তিনদিন বাবা-মায়ের সাথে থাকার পরিকল্পনা করেছি। প্রিন্সের বাবা-মা নারায়ণগঞ্জ থাকেন। তাই সে ওখানে চলে গেল। আমি রইলাম শাহবাগে। আট তারিখ সকালে প্রিন্স শাহবাগ চলে আসবে। তারপর এখান থেকে বাবা-মা আর ছোট দুই ভাই মিলে আমরা বিমানবন্দরে যাব। আব্বু, আম্মু আর একমাত্র ননদ পিয়া নারায়ণগঞ্জ থেকে সরাসরি চলে যাবে বিমানবন্দরে আমাদের বিদায় জানাতে।
এই তিনদিন আমি কেবল লাগেজই গুছালাম। বাবা একটা ওজন মাপার যন্ত্র কিনে আনলেন যেটা হুকে ঝুলাতে হয়। তারপর ওই যন্ত্রের আংটায় লাগেজের হাতল ঝুলিয়ে দিলে রিডিং আসে। ছয়টা ভারী লাগেজ মাপতে মাপতে আমার, বাবার আর অংকনের শরীরের সব মেদ ঝরে গেল। আমরা এতই জামাকাপড় ঢুকিয়েছি যে, লাগেজের ওজন তেইশ কেজি পার হয়ে পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই করছে। ওজন কমানোর জন্য কোন জামা বাতিল করব আর কোনটা রাখব, ঠিক করতে পারছি না। সব জামাই পছন্দের, সব জামাই বেছে বেছে আনা। নেট ঘেঁটে দেখেছি সেন্ট লুইস শহরে শীত পড়ে সর্বনিম্ন মাইনাস আঠারো ডিগ্রি। দেশে বসে এই শীত সম্পর্কে ধারণা করতে পারছি না। তাই দুটো করে পার্কা ছাড়া শীতকালীন কাপড় বেশি নিলাম না। আমেরিকায় এসে বুঝেছি সিদ্ধান্তটা ছিল মস্ত ভুল। গরমের সময় উদোম গায়ে হাঁটলেও সেটা মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া আর বরফে পার্কা দিয়েও কাজ হয় না। ভিতরে সোয়েটার পরা লাগে। এক শীতেই পার্কার অবস্থা দফারফা হয়ে গেল। আগামী শীতের জন্য নতুন পার্কা কিনতে হবে।
(৬)
আট তারিখ দুপুর চারটায় বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে আমাদের মাইক্রোবাস ছাড়ল। ফ্লাইট রাত নয়টা পঞ্চাশে। অবরোধের কারণে রাস্তায় দেরি হতে পারে চিন্তা করে চারটায় রওনা দিয়েছি। কিন্তু কোনো ঝামেলা ছাড়াই গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম। দুই নাম্বার টার্মিনালের সামনে লাগেজ নামিয়ে আব্বু, আম্মুর জন্য অপেক্ষা করছি, পাঁচ মিনিট পরই উনারা চলে এলেন। এসেই আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন। আমি কাউকে সান্ত্বনা দেওয়ার ব্যাপারে অত্যন্ত অপারগ। কী বলব বুঝতে পারছি না। একটু পর নিজেকে সামলে নিলেন উনি। হঠাৎ কয়েকজন গার্ড এসে যাচ্ছেতাইভাবে চিৎকার শুরু করল। সবাইকে গেটের সামনে থেকে সরে যেতে হবে। যাত্রীদের ভিতরে ঢুকতে হবে আর বাকিদের চলে যেতে হবে। হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে গেল। এরই ভেতর আমি আর প্রিন্স সবার কাছ থেকে বিদায় নিলাম। ধীরে সুস্থে নিতে পারলাম না। গার্ডের চেঁচামেচিতে খুব দ্রুত বিদায় পর্বের সমাপ্তি টানতে হল। ছয়টা লাগেজ ঠেলতে ঠেলতে ভেতরে ঢুকা, চেকিং শেষ করা যে কী ঝামেলার, আগে বুঝিনি। বুঝলে দুটো লাগেজ কম আনার কথা ভাবতাম। গেট দিয়ে ঢুকার আগে শেষবারের মত পেছনে তাকালাম। কাউকে দেখা যাচ্ছে কি? হ্যাঁ, ওই তো মা! চোখে চোখ পড়তেই হাত নেড়ে বিদায় জানালেন। আমিও হাত নাড়লাম। প্রিন্সের সাথে শেষ চোখাচোখি হল ওর আম্মু আর ভাগ্নের।
বাইরে প্রচণ্ড শব্দ আর গরম, ভেতরে আরামদায়ক ঠাণ্ডা। আমরা বাম দিক বরাবর সোজা হাঁটতে লাগলাম। হাঁটতে হাঁটতে শেষ মাথার গণ শৌচাগারের সামনে চলে এলাম কিন্তু ইতিহাদ এয়ারলাইন্সের চেক ইন কাউন্টার খুঁজে পেলাম না। এবার হাঁটা ধরলাম ডানদিক বরাবর। ডানদিকের একদম শেষ মাথায় দেখি ইতিহাদের চেক ইন হচ্ছে। এই কাউন্টার খুঁজতে গিয়ে টার্মিনালের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত হেঁটে ফেলেছি। কাউন্টারে বসা অফিসার লাগেজের ওজন মেপে বললেন, তেইশ কেজির চেয়ে বেশি আছে। মাথায় বাজ পড়ল। এয়ারপোর্টে এসে যেন গণ্ডগোল না হয় এজন্য পইপই করে চেক করেছি ব্যাগগুলোর ওজন। উনি আবার কী বলেন এসব? আমাদের চেহারা দেখে অফিসার বললেন চেক্ড ইন লাগেজ থেকে কিছু জিনিস সরিয়ে কেবিন লাগেজে নিতে। কেবিন লাগেজের ওজন কম আছে। ক্ষিপ্রগতিতে কাজ সেরে আমরা আবার মাপতে দিলাম চেক্ড ইন লাগেজ। এবার সবকিছু ঠিক। অনুরোধ করলাম আমাদের যেন জানালার পাশে সিট দেওয়া হয়। অফিসার অনুরোধ রাখলেন। তিনি তিনটা ফ্লাইটের জন্যই উইন্ডো সিট বরাদ্দ করলেন। খুশি মনে বোর্ডিং পাস নিয়ে দুজনে ইমিগ্রেশনের দিকে এগোলাম।
ইমিগ্রেশন পার হতে কোনো ঝামেলা হল না। ভেতরে যেসব কফি আর স্ন্যাক্সের দোকান আছে, সেগুলোর একটা থেকে স্যান্ডউইচ আর জুস কিনলাম। খিদে পেয়েছে বেশ। হঠাৎ চোখে পড়ল দোকানের গায়ে সাঁটানো একটা নোটিশ। ‘ময়লা দিন টাকা নিন’। ২০১৭ সালের অক্টোবরে এই অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইউসুফ। উদ্যোগের অংশ হিসেবে বিমানবন্দরের বিপণী কেন্দ্রগুলোতে পণ্যের মোড়ক ফেরত দিলে ক্রেতাকে দেওয়া হয় পাঁচ টাকা। এই পাঁচ টাকা দোকানদার পণ্য বিক্রির সময় বাড়তি হিসেবে রাখেন। আমরা খাওয়া সেরে দোকানদারের কাছে গিয়ে জুসের প্যাকেট দুটো জমা দিলাম। উনি আমাদের পাঁচ টাকা ফেরত দিলেন। বাহ! ব্যাপারটার প্রশংসা না করে পারলাম না। কিন্তু দোকানি বললেন, অনেক যাত্রী এই উদ্যোগে অসন্তুষ্ট। তারা নাকি বলে, ময়লা যে ঠিক জায়গায় ফেলতে হবে সেটা তো তারা জানেই। উদ্দীপক হিসেবে পাঁচ টাকা দিয়ে কি তাদের কমন সেন্সকে ছোট করা হচ্ছে না? শুনে আমি আর প্রিন্স খুব হাসলাম। আমাদের তো দেখা যাচ্ছে কমন সেন্স তেমন নেই। উদ্দীপকের লোভে ময়লা যেখানে সেখানে না ফেলে ঠিক জায়গায় জমা দিয়েছি। এরপর শুধু অপেক্ষা। মাত্র আটটা বাজে। সময় কাটানোর জন্য বাবা মা, ভাইবোন সবাইকে কল দিতে শুরু করলাম। এর আগে এখানে বসে অপেক্ষা করছিলাম বালি দ্বীপে যাব বলে। তখন আমাদের সাথে ছিল অঝর, অংকন, স্বর্ণা, রসি। কিন্তু এবার শুধু আমরা দুজন। কেমন খালি খালি লাগছে। কেন এত মায়ায় জড়াই আমরা? কেন ‘এটার্নাল সানশাইন অফ দা স্পটলেস মাইন্ড’ চলচ্চিত্রের মত মাথা থেকে প্রিয়জনদের স্মৃতি মুছে ফেলা যায় না? কিংবা মুহম্মদ জাফর ইকবালের বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর মত যখন ইচ্ছা স্মৃতি মুছা, যখন ইচ্ছা লোড করা যায় না?
ঢাকা বিমানবন্দরের লবিতে বসে আছি আর দেওয়ালে সাঁটানো টিভি পর্দায় চোখ রাখছি। সেখানে উড়োজাহাজের সময়সূচী দেখাচ্ছে। আমাদের ফ্লাইট নাম্বারের পাশে লেখা, গেট ইজ নট অ্যাভেইলেবল। ঘড়িতে বাজে সোয়া নয়টা। গেট কখন অ্যাভেইলেবল হবে? গেট নাম্বার পেলে সেখানে গিয়ে শেষ চেক ইনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু গেট খুঁজে পাওয়াও সময়ের ব্যাপার। একটু পর দেখি ইতিহাদ এয়ারলাইন্সের জন্য কত নাম্বার গেটে যেতে হবে সেটা দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে একই গেট দিয়ে বালির প্লেনেও উঠেছিলাম। তবে সেটা ছিল মালিন্দো এয়ারলাইন্স। ওই ভ্রমণ ছিল আমাদের মধুচন্দ্রিমা উদযাপনের ভ্রমণ। আসলে আমাদের নয়, অঝর আর স্বর্ণার মধুচন্দ্রিমা ছিল সেটা। কিন্তু ওদের আগ্রহে আমরাও জুড়ে গিয়েছিলাম। শুধু আমরাই নই, অংকন আর খালাত ভাই রসিও ছিল দলে। একান্ত সময় কাটানোর বদলে আমরা ছয়জন মিলে হইচইয়ের চূড়ান্ত করেছিলাম। ওহ! আমার জীবনের সেরা ভ্রমণ অভিজ্ঞতা ছিল সেটা। যা হোক, নির্ধারিত গেটের সামনে এসে দেখি বিশাল লাইন হয়ে গেছে। লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় আমার ছোট বাথরুমের বেগ পায়নি কিন্তু যখন চেক ইন করে লাউঞ্জে ঢুকলাম, বাথরুম পেল। লাউঞ্জের ভেতর টাট্টিখানা নেই। হয় বাথরুম চেপে রাখতে হবে, অথবা লাউঞ্জের বাইরে গিয়ে সেরে আসতে হবে। চেপে রেখে প্লেনে উঠে সারার মত অবস্থা নেই। তাই পাসপোর্ট হাতে দৌড় দিলাম গেটের কাছে। অফিসারের কাছে পাসপোর্ট জমা দিয়ে বের হতে হয় গেট দিয়ে। এটাই নিয়ম। বাথরুমে গিয়ে দেখি বদনায় পানি নেওয়ার জন্য নিচু কল আছে কিন্তু বদনা নেই। টিসু ব্যবহারের সেই শুরু। আমেরিকার টয়লেট সিস্টেমের সাথে আমার অভ্যস্ততা বাংলাদেশ বিমানবন্দর থেকেই।
রাতের বেলা প্লেনে চড়ার আলাদা মজা আছে। নক্ষত্রগুলো স্পষ্ট দেখা যায়। সে এক আশ্চর্য অনুভূতি। বছর দুয়েক আগে ইতালি থেকে ফেরার সময় গভীর রাতে প্লেনের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আমি স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম। যা দেখছি তা কি সত্যি? হাজার হাজার নক্ষত্র মিটিমিটি করে জ্বলছে আমার সামনে, পেছনে, পাশে। মাটি থেকে দেখলে মাথা উঁচু করে দেখতে হত। কিন্তু এখন ঠিক পাশেই দেখতে পাচ্ছি তারাগুলোকে। হাত বাড়ালেই যেন ছোঁয়া যাবে। যারা আগ্রহী, তারা ইউটিউবে ঢুঁ মারতে পারেন ভিডিও দেখার জন্য। Night time lapse from a flight লিখে খুঁজলে বেশ কিছু ভিডিও পাবেন। প্রিন্সের সাথে যখন বিস্ময়কর এই অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলেছি, আফসোসে ওর মরার দশা হয়েছিল। জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে ওর সীমাহীন আগ্রহ। তাই দুজনেই অপেক্ষা করছিলাম আমেরিকার ফ্লাইটটার জন্য। যেহেতু রাতের বেলা ফ্লাইট, নিশ্চয় নক্ষত্রের দৃশ্যটা দেখা যাবে? আমরা ভুল ছিলাম। পুরো রাত জানালার প্লাস্টিকে নাক চেপে বসে আছি, নক্ষত্রগুলো আমার কাছে এল না। একটা দুটো নক্ষত্র দেখা যায় বটে কিন্তু সেটা তো বাংলাদেশ থেকেও দেখতাম। আমার সেই নক্ষত্রের সমুদ্র গেল কোথায়? যে সমুদ্রের দিকে তাকালে বুঝা যায় আমরা কত ক্ষুদ্র… বুঝা যায় কেন কার্ল সেগান বলেছিলেন, ব্রহ্মাণ্ডের বিশালত্ব সহ্য করার একমাত্র উপায় ভালোবাসা! প্রিন্সকে আশাহত হতে দেখে আমি নিজেও মুষড়ে পড়লাম। মনে মনে ঠিক করলাম যে করেই হোক, এই অভাবনীয় দৃশ্য আমি ওকে দেখাবই। যে রুট ধরে আকাশ ভ্রমণ করলে এই দৃশ্য দেখা যাবে, সে রুট ধরেই একদিন আমরা ভ্রমণ করব। স্পেসশিপে কখনো উঠা হবে না বটে, কিন্তু স্পেসশিপ থেকে ব্রহ্মাণ্ড দেখার অনুভূতি আমরা উড়োজাহাজ থেকে নেব।
প্লেনে যখন রাতের খাবার দিল, চিন্তায় পড়ে গেলাম। আজকেই আমি মাড়ির সেলাই কেটে এসেছি। এখন এসব মশলাদার খাবার খেলে ঘা হবে না তো? মাড়ি কেন সেলাই করলাম, সে এক কাহিনী বটে। অভিজ্ঞরা বলেছিলেন দেশ থেকে চোখ, কান, নাক, দাঁত দেখিয়ে আসতে। সমস্যা পেলে চিকিৎসাও করিয়ে আসতে। আমেরিকায় দাঁতের ডাক্তার দেখানোর মেলা খরচ। কিডনি বেচে দাঁতের চিকিৎসা করতে হয়। চশমারও প্রচণ্ড দাম। এসব শুনে দুজনেই ভড়কে গিয়েছিলাম। এজন্য ঠিক করেছিলাম ডাক্তার দেখাব। শরীরে যদি অজ্ঞাত ঝামেলা বাসা বেঁধে থাকে, দেশ থেকেই চিকিৎসা করিয়ে যাব। গুলশানের শাহাবুদ্দীন মেডিকেল কলেজ থেকে দুজনে চোখ দেখালাম। জানলাম আমার চোখে সমস্যা। কম দেখি। চশমা লাগালে হাই রেজোল্যুশনের ব্লু রে প্রিন্ট, চশমা খুললে ক্যাম প্রিন্ট। মানে চশমা অর্ডার করতে হবে। প্রিন্স আগে থেকেই কানা বাবা। ওর পাওয়ারে কোনো রদবদল পাওয়া গেল না। কিন্তু ওর দাঁত দেখে ডেন্টিস্ট স্কেলিং করার পরামর্শ দিলেন। প্রিন্স করে ফেলল। করার পর চেম্বারে বসেই শপথ নিলো, জীবনে আর কখনো স্কেলিং করবে না। স্কেলিং টার্মটাই সে আর শুনতে চায় না। আমি কখনো স্কেলিং করিনি। তাই বুঝতে পারছি না এত গোস্বার কী আছে। তবে প্রিন্সের রাগ দেখে সিদ্ধান্ত নিলাম এখান থেকে আমার দাঁত দেখাব না। দাঁত দেখাব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর আগে ওখান থেকে রুট ক্যানেল করেছি। মোটামুটি পরিচিত জায়গা।
ডাক্তার আমার দাঁতে অনেক সমস্যা খুঁজে পেলেন। আমি দেখাতে গিয়েছি একটা সমস্যা, উনি চারটা সমস্যা পেলেন। দুটো দাঁত ফেলতে হবে, একটায় ফিলিং করতে হবে, আর সবগুলোয় স্কেলিং করতে হবে। ফিলিং আর স্কেলিং করে ফেললাম সেদিনই, দাঁত ফেলতে আসব দুইদিন পর। স্কেলিং করে আমিও শপথ নিলাম, আর কখনো নয়। এরকম শিরশিরে অনুভূতি জীবনে একবারই সহ্য করা যায়, দুইবার নয়। দাঁত তোলার ডাক্তার আরেকজন। উনার সাথে দেখা করে জানালাম আট তারিখের ফ্লাইটের কথা। আট তারিখের আগে ঝামেলা চুকানো সম্ভব কিনা, জিজ্ঞেস করলাম। সম্ভব না হলে দাঁত তোলার পরিকল্পনা বাদ দেব। উনি বললেন কোনো চিন্তা না করতে। তারপর আগস্টের তিন তারিখে আমার একটা দাঁত তুললেন। সেই দাঁত ছিল আক্কেল দাঁত। তুলতে গিয়ে মাড়ি কাটতে হল, সেলাইও দিতে হল। তারপর অপারেশন শেষে বললেন বারোদিন পর এসে যেন সেলাই খুলে যাই। আমার তো আক্কেল গুড়ুম! বলার চেষ্টা করলাম, বারোদিন পর আমি আমেরিকায় থাকব। কিন্তু অ্যানেস্থেশিয়ার কারণে চোয়াল, ঠোঁট কিছু নড়ছে না। প্রচণ্ড দুঃশ্চিন্তা নিয়ে বাসায় ফিরলাম।
অ্যানেস্থেশিয়ার প্রভাব যখন কাটল, ডাক্তারকে কল দিয়ে জানতে চাইলাম বারোদিনের আগে যদি সেলাই কাটি, কী ধরনের সমস্যা হবে। উনি বললেন ক্ষতস্থান শুকাতে সমস্যা হতে পারে। হায়! যে টাকা বাঁচানোর জন্য দেশে চিকিৎসা নিলাম, সে টাকা যদি আমেরিকায় গিয়ে ক্ষতস্থানের পিছে খরচ করতে হয়, তাহলে তো পুরোটাই পণ্ডশ্রম হল। মা পরিচিত ডেন্টিস্টদের কাছে খোঁজ নিয়ে বুঝতে চেষ্টা করলেন পাঁচদিনের মাথায় সেলাই কাটলে বড় ধরনের ঝুঁকি আছে কিনা। সবারই এক কথা, ঝুঁকি আছে। ফ্লাইট পিছিয়ে দেব কিনা ভাবলাম। কিন্তু পিছিয়ে দিলে যে পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, সেটাও মানা যাচ্ছে না। শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিলাম ঝুঁকি নেব। নো রিস্ক নো গেইন। নো পেইন নো গেইন টু! অপারেশনের পর টানা পাঁচদিন ভিটামিন সি’য়ের উপরে রইলাম যাতে ক্ষত তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। পাঁচদিন পর গেলাম সেলাই কাটতে। যিনি সেলাই কাটতে এলেন তিনি বললেন, যদি আজকে ঝুঁকি নিতে না চাই তাহলে একটা ফরসেপ কিনে বারোদিন পর বাসায় বসে অন্য কাউকে দিয়েও সেলাইটা কাটাতে পারি। উনার গম্ভীর চেহারা দেখে বুঝলাম রসিকতা করছেন না। কিন্তু প্রস্তাবটা এক কথায় নাকচ করে দিলাম। অনভিজ্ঞ কাউকে দিয়ে সেলাই কাটানোর চেয়ে পাঁচদিনের মাথায় ঝুঁকি নেওয়াটা কম ঝুঁকির। ফলে যেদিন আমাদের ফ্লাইট, সেদিন সকালে সেলাই কেটে বাসায় ফিরলাম। সেলাই নাকি প্রায় শুকিয়ে গেছে। একটু সাবধানে খাওয়া দাওয়া করলে কোনো ঝামেলা হবে না। কিন্তু প্লেনের মশলাদার খাবার ঝামেলা করবে কিনা, কীভাবে বুঝব? আমার মায়ের সহকর্মী দেলোয়ারা আন্টি। উনার একজন ছেলে ডেন্টিস্ট। দেলোয়ারা আন্টি নিজে নার্স। দুইয়ে মিলে দাঁতের ব্যাপারে আন্টি অনেক কিছু জানেন। আমাকে বলেছিলেন খাওয়ার পরপরই গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গার্গল করতে। এছাড়া মাউথ ওয়াশ দিয়ে প্রতিদিন কুলি করতে। আমি খাওয়া শেষে প্লেনের টয়লেটে গেলাম কুলি করতে। যে লবণ আর পানি খেতে দিয়েছে, তার সাথে ট্যাপের গরম পানি মিশিয়ে কুলি করলাম। পুরো ভ্রমণে যতবার খেয়েছি, ততবার কুলি করেছি। বারবার সরু আইল দিয়ে যাওয়া আসা করতে বিরক্ত লেগেছে কিন্তু কিছু করার নেই।
পর্ব তিন এখানে