(৭)
আবু ধাবিতে নেমে মাত্র আড়াই ঘণ্টার লেওভার। এর মধ্যে ইউএস ইমিগ্রেশন শেষ করতে হবে। ইতিহাদ এয়ারলাইন্সে চড়ে এই সুবিধা পাওয়া গেছে। ইমিগ্রেশন আমেরিকায় হলে নাকি প্রচুর সময় লাগে। বিভিন্ন দেশ থেকে আগত অসংখ্য মানুষের জন্য এরকম হয়। কিন্তু আবু ধাবি থেকে যেহেতু অল্প মানুষ আমেরিকাগামী প্লেনে চড়বে, তাই ইমিগ্রেশন তাড়াতাড়ি শেষ হবে। আমরা আবু ধাবিতে নেমে বুঝার চেষ্টা করলাম আর কারা আমেরিকা যাবে। কিছু বুঝা গেল না। স্রোতের সাথে তাল মিলিয়ে আমরা চৌরাস্তামত একটা জায়গায় চলে এলাম। এখান থেকে যে যার নির্ধারিত গন্তব্যে চলে যাচ্ছে। আমরা আমাদের গন্তব্য খুঁজে পাচ্ছি না। একটা কাউন্টারে দেখলাম একজন ব্ল্যাক পুলিশ বসে আছে। আবু ধাবিতে ব্ল্যাক পুলিশ মানে আমেরিকান পুলিশই হবে। তার কাছে জানতে চাইলাম আমেরিকার ইমিগ্রেশন কোথায় হচ্ছে। উনি হাত দিয়ে দিক নির্দেশ করলেন। আমরা সে অনুযায়ী বেশ কিছু করিডোর পার হয়ে দেখি ইমিগ্রেশনের ব্যানার টানানো। ব্যানারের নিচে দাঁড়িয়ে আছেন সুট টাই পরা একজন ভদ্রলোক। জিজ্ঞেস করলেন আমরা শিকাগো যাচ্ছি কিনা। সম্মতি দিতেই মাথা ঝাঁকিয়ে দুই হাত তাক করে দেখিয়ে দিলেন কোনদিকে যেতে হবে। ইমিগ্রেশন এলাকাটা দুই ভাগে ভাগ করা। একটা লাইন ফার্স্ট ক্লাস যাত্রীদের জন্য, আরেকটা ইকোনোমি ক্লাসের জন্য। আমরা ব্যাপারটা ধরতে পারিনি। ছোট লাইন দেখে ফার্স্ট ক্লাস যাত্রীদের পিছে দাঁড়িয়ে পড়লাম। একজন মহিলা অফিসার এসে জিজ্ঞেস করল আমরা ফার্স্ট ক্লাসের কিনা। পোশাক আশাক দেখে সন্দেহ হয়েছে হয়ত। ‘না’ বলতেই রূঢ় ভাষায় বলল, ‘দেখতে পাচ্ছ না লাইনের শুরুতে ফার্স্ট ক্লাসের সাইন দেওয়া? তোমাদের জন্য পাশের ওই লাইন।’ মহিলার ব্যবহারে প্রচণ্ড মন খারাপ হল। শ্রেণীবৈষম্যের ব্যবহারিক উদাহরণ একদম হাতেনাতে দেখলাম। ইকোনোমি ক্লাসের লাইনটা অনেক বড়। অনেকক্ষণ পর আমাদের পালা এল। ভালোয় ভালোয় ইমিগ্রেশন পার হলাম। শুনেছিলাম পোর্ট অফ এন্ট্রিতে প্রচুর ঝামেলা করে। উল্টোপাল্টা প্রশ্ন করে, ব্যাগ খুলে দেখতে চায়, অভদ্র ব্যবহার করে। কিন্তু আমাদের বেলায় কিছুই হল না। ব্ল্যাক অফিসার দেখে বেশ নার্ভাস ছিলাম। কিন্তু মাত্র দুই মিনিটের মধ্যে আমাদের ছেড়ে দিল। কোনো প্রশ্ন করল না।
এবারের জার্নিটা অনেক লম্বা, সাড়ে চৌদ্দ ঘণ্টার। মাত্রই পাঁচ ঘণ্টা ভ্রমণ সেরে এসেছি, এখনই আবার প্লেনে উঠতে হবে। সাত আটবার আকাশ ভ্রমণ করে প্লেনের প্রতি আমার বিতৃষ্ণা চলে এসেছে। প্রথম যেদিন উঠেছিলাম, সেদিন মনে হচ্ছিলো আমি খুব কেউকেটা। কিন্তু উঠার পর যখন দেখলাম প্রথম শ্রেণির কামরা আর সুলভ শ্রেণির কামরার মধ্যে যোজন যোজন ফারাক, তখন ফাটা বেলুনের মত চুপসে গেলাম। টার্কিশ এয়ারলাইন্সে ছিল আমার প্রথম ভ্রমণ। যে সিটে বসেছিলাম, তার কাভার ছেঁড়া ছিল, ভিতর থেকে বের হয়ে ছিল ফোম। লেগ রুম বা পা রাখার জায়গা এত কম ছিল যে, মনে হচ্ছিলো তিন নাম্বার বাসের মহিলা সিটে বসে আছি। মন্দের ভাল ছিল শুধু খাবারটা। কিন্তু ইতিহাদ এয়ারলাইন্সের খাবার ভাল না। কীসব থকথকে মশলাযুক্ত ভাত, মাংস দিয়েছে, খেতে পারিনি। পরেরবার নিয়েছি ল্যাম্ব বিরিয়ানি। এটাতে ভেড়া আর মশলার এমন গন্ধ যে, মনে হচ্ছে ভাতই ভাল ছিল।
লম্বা ভ্রমণ উপভোগের উপায় হল ঘুমিয়ে পড়া, গাঢ় ঘুম। এক ঘুমে গন্তব্য, নাহলে অন্তত সাত আট ঘণ্টা পার করা। আমার এসবের কিছুই হল না। প্রিন্স সুন্দর ঘুমাচ্ছে আর আমি ছটফট করছি। প্লেন, বাস, ট্রেন কোনোকিছুতেই আমি ঘুমাতে পারি না। তবে কলকাতা থেকে জলপাইগুঁড়ি পর্যন্ত যে ট্রেনে করে গিয়েছিলাম, তাতে বার্থ ছিল। সেই বার্থে যে রোমাঞ্চকর ঘুমটা ঘুমিয়েছি, সেটা আজীবন মনে থাকবে। রোমাঞ্চের আশায় ডাবল বার্থের উপরের তলায় ঘুমাতে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম নিচের তলা তো বিছানার মতই পরিচিত। সবসময় নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা জরুরি। তাই সাহস দেখিয়ে উঠে গিয়েছিলাম উপরের বার্থে। ভুলে গিয়েছিলাম আমি উচ্চতাভীতির রোগী। উপরে উঠে যখন নিচের দিকে তাকালাম, পুরো দুনিয়া টলে উঠল। মানসম্মান খোয়ানোর ভয়ে কাউকে বলতেও পারছি না বার্থ বদলের কথা। শেষমেশ ঠিক করলাম ভয়কে জয় করব। কম্বল মুড়ি দিয়ে বসে রইলাম শক্ত হয়ে। ট্রেন নড়ে, আমি ভয়ে অস্থির হয়ে যাই। এই বুঝি পড়ে গেলাম দুই তলা থেকে। সবাই ঘুমাচ্ছে, আমি জেগে আছি। প্রচণ্ড বাথরুম পেয়েছে, কিন্তু কীভাবে নামব বুঝতে পারছি না। সিঁড়ি হিসেবে দুটো ধাতব পাত লাগানো। ওদিকে তাকিয়ে শুধু পিছলে পড়ার দৃশ্যই কল্পনায় আসছিল। শেষদিকে আর তাকিয়ে থাকতে পারছিলাম না। প্রচণ্ড ঘুমে ভয় টয় সব জয় হয়ে গিয়েছিল। এবারেও তাই হল। প্রচণ্ড ক্লান্তিতে একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম। কখন ঘুমালাম, কোন ভঙ্গিতে ঘুমালাম কিছু মনে নেই। ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার মাথা প্রিন্সের কাঁধে আর আমার বালিশ গড়াচ্ছে মেঝেতে।
শিকাগোর ও’হেয়ার বিমানবন্দরে নামলাম। সাড়ে চৌদ্দ ঘণ্টা ভ্রমণ করে হাত, পা, মাথা, চোখ ভোঁ ভোঁ করছে। তার উপর হাত, পায়ে জমেছে পানি। ফুলে ঢোল হয়ে আছে। টিপ দিলে ডেবে যায়। কিছুক্ষণ টেপাটেপি খেলে এক টার্মিনাল থেকে আরেক টার্মিনালে যাওয়ার বাস ধরলাম। বাস ধরার জন্য একটা খোলা জায়গায় বের হলাম। এটাই আমাদের প্রথম আমেরিকা দেখা। এয়ারপোর্ট যেহেতু সব একই রকম, তাই শিকাগো এয়ারপোর্ট দেখে মনে হয়নি আমেরিকা দেখছি। দালানের বাইরে এসে মুক্ত বাতাসে সবুজ গাছপালার নিচে দাঁড়িয়ে মনে হল, এই তো আমেরিকা! দ্বিতীয় টার্মিনাল থেকে আমাদের সেন্ট লুইসগামী প্লেনে চড়তে হবে। বাস দিয়ে আসতে আসতে আমি মুগ্ধ হয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছি। এত সুন্দর এয়ারপোর্ট? এত বড়? আমাদের পাশেই ছিল লাতিন এক পরিবার। মহিলাটা লাতিন উচ্চারণে যে ইংরেজি বলছে তার মানে হল, ও’হেয়ার এয়ারপোর্টটা আমেরিকার সবচেয়ে জঘন্য এয়ারপোর্ট। এরকম বাজে সেবা সে আর কোথাও পায়নি।
লাউঞ্জে এসে বসেছি দুজন। আসার পথে দেখি লবির এক কোণে একটা হার্লে ডেভিডসন বাইক রাখা। প্রচারের কী নমুনা! বিজ্ঞাপন দিয়েছে একদম জ্যান্ত নমুনা বসিয়ে। ওই বাইকে অনেকেই উঠে ছবি তুলছে। আমরাও তুললাম। কিন্তু বাইকের ফুট রেস্ট খুঁজে পাচ্ছি না বলে পা রাখার পজিশন ভুল হয়ে গেল। ফেসবুকে সেই ছবি দেখে অনেকে মজা নিলো। যা হোক, লাউঞ্জে এসে নরম গদিতে গা এলিয়ে দেওয়ার পর ঘুমে দুজনেরই চোখ বুজে এল। কিন্তু ঘুমানো চলবে না। ঘুমালে যদি প্লেন মিস করি? হাসি পেল একটা কথা মনে পড়ে। বালি যাওয়ার সময় মালয়েশিয়ার কুয়ালা লামপুর এয়ারপোর্টে বারো ঘণ্টার লেওভার ছিল। তখন ঘুমিয়েও বারো ঘণ্টা পার করতে পারছিলাম না। খিদে লাগলে কী করব চিন্তা করে সবাই জোর করে ঘুমুতে চেষ্টা করছিলাম। এয়ারপোর্টের রেস্তোরাঁ থেকে দামী খাবার কেনার পয়সা ছিল না বলে ঘুমানোর এত তোড়জোড়। কিন্তু সে কারণেই কিনা কে জানে, ঘুম আসছিল না মোটেই। গুড়গুড় করে পেট জানান দিচ্ছিল, সে খালি। আর সুলভ মূল্যের খাবার নেই বলেই কিনা কে জানে, খিদেটা বড্ড চাগাড় দিয়ে উঠছিল। জীবন বড় অদ্ভুত। যখন যেখানে যেটা দরকার নেই, তখন সেটা দিয়ে বসে থাকে। এবং উল্টোটা।
ঘুম তাড়ানোর জন্য আমরা ফেসবুক মেসেঞ্জারে মা, বাবা, ভাই, বোনদের কল দিতে শুরু করলাম। আমেরিকায় পা রেখেছি, এটা নিশ্চিত করতে হবে। সবাই দুশ্চিন্তা করছে। কিন্তু অডিও কল পেয়ে কেউ খুশি নয়, ভিডিও কল দিতে হবে। ভিডিও কল দিয়ে কথা বলতে বলতে হঠাৎ কানে এল, “রুথ গস এন্ড রেজানুর প্রিন্স”, “রুথ গস এন্ড রেজানুর প্রিন্স!” চমকে উঠলাম। আমাদের নাম ধরে ডাকছে নাকি? কেন? অবৈধ কিছু কি পেয়েছে লাগেজে? নাকি অপরাধ করে ফেলেছি ভিডিও কলে এয়ারপোর্ট দেখিয়ে? কলকাতা মেট্রোতে যেমন ছবি তোলা নিষেধ, কিন্তু নির্দেশনাটা চোখে না পড়ায় আমি একের পর এক ছবি তুলে যাচ্ছিলাম, এখানেও সেই কাহিনী নাকি? সামনে তাকিয়ে দেখি গেটে দাঁড়ানো এক মহিলা অফিসার সমানে বলে চলেছেন, “রুথ ঘোষ এবং রিজওয়ানুর প্রিন্সকে অনুরোধ করা হচ্ছে বোর্ডিং করতে।” সর্বনাশ! প্লেন যাতে মিস না করি এজন্য তাড়াহুড়া করে লাউঞ্জে এসে বসেছি। ঘুমাইওনি এই কারণে। অথচ লাউঞ্জে বসে থেকেই প্লেন মিস করে ফেলছি? এতটা বেকুবিও সম্ভব? দিলাম দৌড় গাঁট্টি বোঁচকা নিয়ে। বোর্ডিং পাস দেখিয়ে ক্ষমা টমা চেয়ে ঢুকলাম প্লেনের ভিতর। ঢুকার আগে জিজ্ঞেস করলাম, বাথরুম সেরে আসার সময় আছে কিনা। মহিলাটি আমার দিকে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকালেন, তারপর বললেন, ‘নো, ম্যাম।’ উনি সেই প্রথম থেকে লাউঞ্জে বসা সবাইকে দেখছেন। উনি দেখেছেন আমি এক ঘণ্টা ধরে বসে আছি কিন্তু বাথরুম সেরে রাখিনি, আবার মোবাইল নিয়ে ভুগিচুগি করতে করতে বোর্ডিংয়েও দেরি করেছি। এখন আবার প্লেনে না উঠে বাথরুমে যাওয়ার সময় খুঁজছি। আমিও বুঝছি না, বারবার কেন অসময়েই বাথরুম চাপছে।
আমেরিকান এয়ারলাইন্সের প্লেনে উঠে চমকিত হলাম। ছোট্ট একটা প্লেন, খেলনার মত। অল্প কয়েকজন যাত্রী, কেবিন ক্রু মাত্র দুজন। একজনের চুল এলোমেলো, শার্টের বোতাম খোলা। শার্টটা স্কার্টের ভিতর ঠিকমত গুঁজেননি। ছোট প্লেন বলে যাত্রীদের তেমন পাত্তা দিচ্ছেন না। বড় প্লেন হলে ঠিকই বেশভূষা গুছিয়ে রাখতেন। এক ঘণ্টার ভ্রমণ। টিকেটে লেখা আছে খাবার দিবে। খিদে পেটে চিন্তা করছি কী খাবার দিতে পারে এত কম সময়ের ভ্রমণে। বেশিক্ষণ চিন্তা করতে হল না। এলোমেলো চুলের ক্রু চলে এলেন ট্রে ঠেলতে ঠেলতে। জিজ্ঞেস করলেন, “প্রেটজেল, অর নাটস?” নাট তো সবসময়ই খাই। তাই প্রেটজেলটা নিলাম। এতদিন শুধু দেখেই এসেছি এই জিনিস, খাওয়া হয়নি। আমার মত প্রিন্সও প্রেটজেল নিল। প্রচণ্ড আগ্রহ নিয়ে দুজনে কামড় বসালাম প্রেটজেলে। এতদিন ভেবেছি প্রেটজেল মিষ্টি জাতীয় খাবার। কিন্তু কামড় দিয়ে গা শিরশির করে উঠল। মনে হল লবণের সমুদ্রে আমাকে ফেলে দেওয়া হয়েছে আর আমি ঢক করে এক গাল লবণকাটা পানি খেয়ে ফেলেছি। এতই নোনতা। তখন কি আর জানতাম আমেরিকানদের নোনতা প্রীতির কথা? প্রিন্সের দিকে কটমট করে তাকালাম। কী হত যদি ও নাটস নিত? দুজনে দুরকম জিনিস নেব, এটাই আমাদের রীতি। আজ আগ্রহের আতিশয্যে রীতি ভঙ্গ করেছি। করে ফাঁপরে পড়েছি। ভাবলাম কফি খেয়ে এই বিশ্রী স্বাদ জিহ্বা থেকে দূর করব। কিন্তু কফি খেয়ে মনে হল প্রেটজেল বেস্ট! এটা কোনো কফি? চন্দ্রিমা উদ্যানে ঘুরতে গেলে মামারা যে কফি খাওয়ায়, সেটার মত, নাকি তারচেয়েও পানসে ভেবে দেখা দরকার।
অবশেষে নামলাম সেন্ট লুইসে। বিমানবন্দর থেকে শাওন ভাইকে কল করতে হবে। উনি বলবেন কীভাবে উনাদের এপার্টমেন্টে যেতে হবে। কনভেয়ার বেল্ট থেকে যখন লাগেজ নামাচ্ছি, তখন একজন ছোটখাট এশীয় তরুণ গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকল। ইতিউতি তাকাতাকি করতে লাগল। হঠাৎ আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, ‘নির্ঝর রুথ?’ আমি বিস্মিত। আমি কি এত বড় ফেসবুক সেলেব্রিটি হয়ে গিয়েছি যে, মানুষজন আমাকে চিনে ফেলতে শুরু করেছে? বিস্ময় গিলে উত্তর দিলাম, ‘ইয়েস।’ তরুণটা বলল, ‘আমি শাওন।’ আমার আর প্রিন্সের চোয়াল ঝুলে পড়ল। শাওন ভাই আমাদের নিতে এয়ারপোর্ট চলে এসেছেন? কথা ছিল উনাকে ফোন করলে উনি ট্যাক্সি চালককে ঠিকানাটা বুঝিয়ে দেবেন। কিন্তু সোজা পথে না হেঁটে উনি চলেই এসেছেন আমাদের নিতে। কৃতজ্ঞতা আর আনন্দে মনটা ভরে গেল। শাওন ভাই উবার ডাকলেন, লাগেজ তুলতে সাহায্য করলেন। তারপর সবাই গাড়িতে গিয়ে বসলাম। যেতে যেতে পথে আকাশচুম্বী অট্টালিকা খুঁজতে লাগলাম, পেলাম না। এটা আবার কেমন আমেরিকা? সিনেমায় তাহলে কী দেখায়? প্রাথমিক সম্ভাষণের পর শাওন ভাইয়ের সাথে অনেক বিষয় নিয়ে কথা শুরু হল। উনিও আমার মত সেন্ট লুইস বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তবে উনি করছেন রসায়নে পিএইচডি। যেতে যেতে একসময় চোখে পড়ল বিশাল একটা দালান, গড়নটা অদ্ভুত। লম্বা লম্বা অনেকগুলো খাম্বা একসাথে জোড়া দিয়ে তৈরি। দেখে কেন জানি না, শিরদাঁড়া বেয়ে ভয়ের স্রোত নেমে গেল। মনে হল যেন কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প। কল্পনায় দেখে ফেললাম, নাৎসি জার্মানরা এখানে ইহুদীদের নিয়ে আসছে। ইহুদীদের উপর করা অত্যাচারের নির্মম ইতিহাস দালানের কোণায় কোণায় গোঙাচ্ছে। কোত্থেকে এই চিন্তা এল, কেন এল জানি না। প্রিন্স যদিও ব্যাখ্যা করে বলেছে এটার নাম সাইলো, শস্য মজুদ করার জন্য এরকম দালান বানানো হয়, কিন্তু তবুও এই দালানের আশপাশ দিয়ে গেলে অজানা আতংকে আমার হাঁসফাঁস লাগে। ছোটবেলায় দেখা এমন গড়নের দালানের সাথে কি আমার ভয়ের কোনো স্মৃতি আছে?
সাইলো পার হওয়ার তিন মিনিটের মাথায় শাওন ভাইদের বাসায় উপস্থিত হলাম। এখানে শাওন ভাইসহ মোট তিনজন থাকেন। বাকি দুই ভাই বাংলাদেশে গেছেন ছুটি কাটাতে। আপাতত শাওন ভাই একা আছেন। আমরা এসে আরেক ভাইয়ের বেডরুম দখল করলাম। এই রুমের সাথে এটাচড বাথ আছে। শাওন ভাই বললেন হাতমুখ ধুয়ে লিভিং রুমে আসতে, সেখানে ডাইনিং টেবিল পাতা আছে। দুপুরের খাওয়া খাব। গিয়ে দেখি বিশাল আয়োজন। আলু দিয়ে মুরগি, চিংড়ি ভুনা, মুসুরের ডাল। সব শাওন ভাই রেঁধেছেন। টানা একদিন সকাল, দুপুর, রাতে অ্যারাবিয়ান খাবার খেয়ে দেশি খাবারের জন্য জান কোরবান দিতে প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু অতদূর যেতে হল না। শাওন ভাইয়ের অসাধারণ রান্না খেয়ে ধড়ে প্রাণ ফিরে এল। সাথে যে জিনিসটার কথা না বললে নয়, সেটা হল লেবু। আমেরিকার লেবুগুলো এত রসালো আর সুগন্ধিযুক্ত যে, ছোটবেলায় নিজেদের গাছ থেকে তুলে আনা কাগজী লেবুর স্মৃতি ছলকে উঠল। আর কাঁচা মরিচ। সব্বনেশে ঝাল। এরকম ঝাল মরিচ গত দুই বছরে কম খোঁজা খুঁজিনি নর্দ্দা বা বসুন্ধরার কাঁচাবাজারে। কিন্তু যেটাই আনতাম, সেটাতেই ঠকতাম। দশ বারোটা করে দেওয়ার পরও তরকারি ঝাল হত না। কাঁচা চিবিয়ে খেলেও ঝাল লাগত না। এখন আমেরিকায় এসে আসল ঝালযুক্ত মরিচের সন্ধান পেলাম। আমেরিকানরা এরকম ঝাল খায় কিনা জিজ্ঞেস করতে শাওন ভাই বললেন, এটা আমেরিকান শপে পাওয়া যাবে না। এটা উনারা কেনেন চৈনিক দোকান থেকে। বুঝলাম, এশীয় এশীয় ভাই ভাই।
দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর ঘুমের ধাক্কা এল। প্লেনে ছাড়া ছাড়াভাবে ঘুমিয়ে, কিংবা না ঘুমিয়ে শরীর ভীষণ ক্লান্ত ছিল। বিছানায় কিছুক্ষণ গড়াগড়ি করতেই ঘুমপাড়ানি মাসি-পিসি চলে এলেন জামাই, বাচ্চা, নাতি, পুতি, প্রপৌত্রসহ। সেই যে ঘুমালাম, রাতে উঠে নাকে মুখে কোনোমতে গুঁজে আবার বিছানায়। বাথরুম করারও শক্তি নেই। এক ঘুমে সকাল দশটা। ঘুম থেকে উঠে নাস্তা সেরে ঠিক করলাম ভার্সিটির দিকে যাব। আজ দশ তারিখ। পনেরোই আগস্ট ভার্সিটিতে যেতে হবে হাজিরা দেওয়ার জন্য। আমি যে এসেছি, সেটা ইন্টারন্যাশনাল অফিসকে নিশ্চিত করতে হবে। কারণ পনেরো তারিখ থেকে গ্র্যাজুয়েট অ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে আমার চাকরি জীবন শুরু। যদিও ক্লাস, চাকরি সব শুরু হবে আগস্টের সাতাশ তারিখ থেকে, কিন্তু বেতন দেওয়ার জন্য দিন হিসেব করবে পনেরো আগস্ট থেকে। সেদিন যেন সময়মত পৌঁছাতে পারি সেজন্য রাস্তা চিনে রাখা দরকার। শাওন ভাই বলেছিলেন উনাদের বাসা থেকে হাঁটা শুরু করলে ভার্সিটির নর্থ ক্যাম্পাস মাত্র দশ মিনিটের রাস্তা। আমি আর প্রিন্স তাই হাঁটা শুরু করলাম। সিম কার্ড কেনা হয়নি এখনো। মোবাইল নেট নেই। মাঝ রাস্তায় জিপিএস অ্যাপ ব্যবহার করা সম্ভব না। তাই বাসার ওয়াইফাই ব্যবহার করে জিপিএসে রুট (এখানে বলে রাউট) সেট করে নিলাম। শাওন ভাই সকাল আটটার দিকে ভার্সিটিতে চলে গেছেন। আমাদেরকে দিয়ে গেছেন বাসার অতিরিক্ত চাবি। বের হওয়ার পরিকল্পনাটা হুট করে হওয়াতে উনাকে জানানো হয়নি, নতুবা উনার সাথেই বের হতে পারতাম। যাক, দুজনে মিলে নতুন শহর, নতুন পরিবেশ আবিষ্কার করাটা মজার হওয়ার কথা। তাই ফুল হাতা শার্ট পরে, চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে, ছাতা ছাড়া আমরা বের হয়ে গেলাম।
প্রথম দশ মিনিট গাছপালার ছায়ায় ছায়ায় হেঁটে কিছু বুঝিনি। সবকিছু মনোরম লাগছে, সবুজের সমারোহ দেখে চক্ষু জুড়াচ্ছে, বিশুদ্ধ বাতাস টেনে ফুসফুস হাসছে। হঠাৎ গাছপালা শেষ হয়ে গেল। আমরা চলে এসেছি রাজপথে, চৌরাস্তায়। এখানে বলে ইন্টারসেকশন। মোড়ে এসে দাঁড়াতেই সূর্যের প্রখর তাপে ঝলসে গেলাম। বাড়িয়ে বলছি না। দেশের মত এখানকার রোদে জলীয়বাষ্প নেই। তাই সরাসরি তাপ এসে চামড়ায় লাগে। লেগে জ্বলুনি শুরু হয়ে যায়। হতভম্ব আমরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলাম। এই বিপদের কথা তো কেউ বলেনি! বাসায় গিয়ে ছাতা নিয়ে আসব নাকি? কিন্তু বাসা থেকে অনেকদূর চলে এসেছি। ফেরত যাওয়ার মানে হয় না। এখন বাসায় গেলে একেবারেই চলে যাব। গিয়ে আবার বের হওয়ার মত তেল অবশিষ্ট নেই। মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মত মোবাইলে নেই নেট। বুঝতে পারছি না ভার্সিটি আর কতদূর। দশ মিনিটের জায়গায় মনে হচ্ছে আধা ঘণ্টা বা এক ঘণ্টা হেঁটে ফেলেছি। রোদে পুড়তে পুড়তে সময়ের হিসেবে গণ্ডগোল হয়ে গেছে। জিদ উঠল খুব। ঠিক করলাম ভার্সিটি খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত হাঁটতে থাকব। কিন্তু সূয্যিমামার উপর রাগ করার ফলাফল টের পেলাম। বুঝতে পারলাম বাসায় ফেরার ব্যাপারে সেকেন্ড থট দেওয়া উচিৎ ছিল, এভাবে চিন্তাটা উড়িয়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। তানজিলা আপু পরামর্শ দিয়েছিলেন সানস্ক্রিন কেনার। তখন বুঝিনি কেন। এখন হাতে কলমে বুঝলাম।
মাথার মধ্যে বাজছে ‘পথের ক্লান্তি ভুলে স্নেহ ভরা কোলে তব মা গো বল কবে শীতল হব? কতদূর আর কতদূর?’ গনগনে তাপে গলে যেতে যেতে যখন অজ্ঞান হওয়ার দশা, তখন চোখে পড়ল হাতের বামে একটা বিশাল ফটক। ফটকের মাথায় লেখা ‘সেন্ট লুইস ইউনিভার্সিটি’। হৃদপিণ্ডের ধুকপুকানি বন্ধ হয়ে গেল এক মুহূর্তের জন্য। এটাই আমার ভার্সিটি? এখন থেকে আমি ভার্সিটির স্টুডেন্ট? গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ থেকে অনার্স, মাস্টার্স পাশ করা একজনের জন্য মুহূর্তটা ছিল অসাধারণ। সারাজীবন চেয়েছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে কিন্তু নিজের গাফিলতির কারণে সুযোগ হয়েছিল মহাবিদ্যালয়ে। দেরিতে হলেও এখন জায়গা করে নিয়েছি বিশ্ববিদ্যালয়ে। আগামী দুই বছর এটাই হবে আমার তীর্থস্থান। আনন্দে বেশ কিছু ছবি তুলে ফেললাম। আমরা যে ক্যাম্পাসে এসেছি, সেটা নর্থ ক্যাম্পাস। এখানেই ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের অফিস। অফিসটা চিনে নিলাম। এরপর ক্যাম্পাসের ওয়াইফাই ব্যবহার করে বের করলাম সাউথ ক্যাম্পাসের লোকেশন। আমার ডিপার্টমেন্ট ওখানে অবস্থিত। দেখলাম নর্থ ক্যাম্পাস থেকে প্রায় ১.২ মাইলের ধাক্কা। হাঁটতে সময় লাগবে পঁচিশ মিনিটের মত। কিন্তু প্রমীলা যেমন মেঘনাদের সাথে মিলিত হওয়ার আশায় বলেছিলেন, “আমি কি ডরাই, সখি, ভিখারী রাঘবে?”, আমিও তেমনি আমার ডিপার্টমেন্ট দেখার আশায় রোদ উপেক্ষা করে হাঁটা ধরলাম। সিদ্ধান্তটা ছিল ২০১৮ সালের সবচেয়ে বড় ভুল সিদ্ধান্ত।
(৮)
আমার কলেজের নাম ডইজি কলেজ অফ হেলথ সায়েন্সেস। কলেজটির নাম রাখা হয়েছে ভিটামিন ‘কে’-এর আবিষ্কারক, নোবেল জয়ী বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড এডেলবার্ট ডইজির নাম অনুসারে। ১৯২৪ সালে উনি সেন্ট লুইস ইউনিভার্সিটিতে (সবাই সংক্ষেপে বলে ‘স্লু’/SLU) বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগটি প্রতিষ্ঠা করেন, এবং বিভাগীয় প্রফেসর ও চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন। ডইজি কলেজ অফ হেলথ সায়েন্সের একটি বিভাগ হল ‘নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটেটিক্স’। আমি এখানে মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছি। প্রফেসর ডইজি আরেকটু হলে দ্বিতীয় নোবেল প্রাইজটিও পেয়ে যেতেন। তিনি এবং এডলফ ফ্রেড্রিখ নামক একজন জার্মান প্রাণরসায়নবিদ একই সময়ে, কিন্তু আলাদাভাবে নারীদের যৌন হরমোন নিয়ে কাজ করছিলেন। তারা দুজনেই estrone নামক হরমোনটি আলাদাভাবে আবিষ্কার করেন। কিন্তু নোবেল কমিটি শুধু এডলফ ফ্রেড্রিখকে রসায়ন বিভাগে নোবেল পুরষ্কার দেয়। যা হোক, নর্থ ক্যাম্পাস থেকে হাঁটা শুরু করে, মেট্রো রেল স্টেশন পার হয়ে সাউথ গ্র্যান্ড বুলেভার্দ ধরে হাঁটছি তো হাঁটছিই। মাথার উপর হাইড্রোজেনের অগ্নিকুণ্ড, পায়ের নিচে তেঁতে ওঠা কংক্রিট। মাঝে আমরা দুই বেকুব। ফুল হাতা শার্ট পরায় গরম আরও বেশি লাগছে। এ গরম সিদ্ধ হয়ে যাওয়ার গরম নয়, এ হল সরাসরি গায়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার গরম। তেষ্টায় গলাসহ নাড়িভুঁড়ি অব্দি শুকিয়ে গেছে অথচ সাথে পানি আনিনি। উত্তেজনার চোটে অতি দ্রুত বাসা থেকে বের হওয়ার খেসারত দিচ্ছি।
প্রায় আধা ঘণ্টা হাঁটার পর এলাম সাউথ ক্যাম্পাসে। এসে কিছুতেই বের করতে পারছি না আমার কলেজ কোথায়। নর্থ ক্যাম্পাস যেমন একটা নির্দিষ্ট এলাকার ভেতর অবস্থিত, সাউথ ক্যাম্পাস বিশাল এলাকা জুড়ে ছড়ানো। এত বড় এলাকার ভিতর জিপিএস দিয়েও শনাক্ত করতে পারছি না আমার ডিপার্টমেন্ট। জিপিএসের দেখানো পথে একবার ডানে যাই, একবার বাঁয়ে। একবার সোজা যাই, আবার পেছাই। শেষমেশ প্রিন্স বিরক্ত হয়ে ক্ষান্ত দিল। আজ অনেক খাটনি গেছে। আরেকদিন এসে খুঁজব। আমিও রাজি হলাম। দুজনে আবার পায়ে হেঁটে রওনা দিলাম। এখনো পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারের নিয়ম জানি না। তাই বাসে উঠার সাহস হল না। আসার পথে একটা ফুয়েল স্টেশন থেকে দুটো এনার্জি ড্রিংক কিনলাম। গলা না ভেজালে আর চলছে না। ক্ষুধায় হাত, পা কাঁপাকাঁপি করছে। বাসা পর্যন্ত যেতে পারব নাকি হুঁশ হারিয়ে রাস্তায় পড়ে থাকব, জানি না। এক ঘণ্টা হাঁটার পর বাসায় পৌঁছলাম। হিসেব করে দেখলাম আজ টানা পাঁচ ঘণ্টা হেঁটেছি। মাত্র গতকাল চব্বিশ ঘণ্টার ভ্রমণ শেষে সেন্ট লুইসে এসেছি। এসে আজকেই পাঁচ ঘণ্টা হাঁটলাম? আমরা কি মানুষ নাকি অ্যাসগার্ডিয়ার বাসিন্দা? বাসায় এসে সবার আগে ভাত খেলাম। খেয়ে যখন শরীরে শক্তি এল, স্নান টান করে বিছানায় পড়ে গেলাম। প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছে। শরীর ভাবছে রাত তিনটা বাজে। অথচ এখানে দুপুর তিনটা। জৈবিক ঘড়ির মানিয়ে নিতে সময় লাগবে। ঘুম থেকে উঠলাম মাঝ রাতে। উঠে রাতের খাবার খেলাম। খেয়ে আবার ঘুম। এভাবে দিন সাতেক চলল। দুপুরের খাবার খাই বিকেলে। এরপরের ঘুম ভাঙ্গে কখনো রাত এগারোটায়, কখনো গভীর রাতে। তখন উঠে রাতের খাবার খাই। শাওন ভাই অভিজ্ঞ মানুষ। বললেন, সাতদিন কিছুই না। একমাসও থাকতে পারে এরকম হ্যাংওভার। সান্ত্বনা পেলাম। এই সাতদিনে ঘুমানো, বাথরুমে যাওয়া, আর খাওয়াই ছিল জীবনের তিনমাত্র কাজ। তবে মাঝের একদিন ভার্সিটিতে হাজিরা দিয়ে এসেছি।
আমেরিকায় আসার দুইদিন পর মোবাইলের সিম কিনলাম। শাওন ভাই বললেন ভাল নেটওয়ার্ক চাইলে মেট্রো পিসিএস-এর সিম কিনতে হবে। বাকি যেগুলো আছে, সেগুলো দামে সস্তা কিন্তু নেটওয়ার্কের অবস্থা যাচ্ছেতাই। তাই কিনে ফেললাম মেট্রো পিসিএস-এর সিম। পঁয়তাল্লিশ ডলার খরচ হয়ে গেল। প্রতি মাসেও আবার পঁয়তাল্লিশ ডলার দিয়ে চালু রাখতে হবে। সমস্যা নেই। প্রাথমিক অবস্থায় ভাল নেটওয়ার্ক থাকা জরুরি। একবার সবার সাথে যোগাযোগ হয়ে গেলে সস্তা সিম কিনে নেব। এরপর গেলাম ল্যাপটপ কিনতে। শাওন ভাই বললেন বেস্ট বায় (Best Buy) হল গ্যাজেট কেনার জন্য সেন্ট লুইস শহরের সবচেয়ে ভাল দোকান। Best Buy is the best shop to buy gadgets. ভাইয়ের পরামর্শ অনুযায়ী গেলাম বেস্ট বায়ে। ভাইও এসেছেন। অনেক ধরনের ল্যাপটপ দেখছি, পছন্দও হচ্ছে, কিন্তু দামে বনছে না। ফল সেমিস্টার উপলক্ষ্যে ছাড়ও দিয়েছে কয়েকটা মডেলে। তারপরও বাজেটে কুলোচ্ছে না। আমার এমন ল্যাপটপ চাই যেটা হ্যাং করবে না, একসাথে অনেকগুলি ট্যাব খুলতে পারব, ওয়ার্ড বা এক্সেল ডক খুলতে সময় নেবে না, পিসি দ্রুত বন্ধ হবে আর খুলবে, সহজে গরম হবে না, প্রিন্স গেম খেলতে পারবে, এবং দাম হতে হবে মোটামুটি পর্যায়ের। অনেকক্ষণ ঘুরাঘুরির পর বুঝলাম ল্যাপটপ কোম্পানি আমার পিতামাতার সম্পত্তি নয়। এত বৈশিষ্ট্যসহ ল্যাপটপ কোনো কোম্পানিই মোটামুটি মূল্যে দিতে পারছে না।
আর কোথাও কম্পিউটারের দোকান আছে কিনা জিজ্ঞেস করলাম শাওন ভাইকে। জিনিসটা যেহেতু একবারই কিনব, দেখে শুনে যাচাই করে কেনা উচিৎ যেন পরে আফসোস না হয়। ভাই বললেন সেন্ট লুইস গ্যালেরিয়া নামের একটা শপিং মলে আরও কিছু দোকান আছে। গেলাম সেখানে। এই প্রথম আমেরিকার কোনো সুপার মলে এলাম। চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা। মেসি’স, ভিক্টোরিয়া’স সিক্রেট, সোয়ার্ভস্কি, সেফোরা, লাকোস্ট, এইচ এন্ড এম, গ্যাপ, ডিজনি ইত্যাদির শো-রুম দেখলাম। তবে ল্যাপটপের দোকান ঘুরে সন্তুষ্ট হতে পারলাম না। মনে হল বেস্ট বায়েই ল্যাপটপের বৈচিত্র্য বেশি। শাওন ভাই জিজ্ঞেস করলেন কফি খাব কিনা। না করলাম। দুইদিন যাবত সবকিছুর দাম পঁচাশি দিয়ে গুণ করে করে মনের শান্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখন আবার কফি খেতে গেলে কত টাকা গচ্চা যায়, কে জানে। শাওন ভাই মনে হয় আমাদের মনের কথা পড়ে ফেললেন। বললেন এটা উনার ট্রিট। অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম। এমনিতেই উনি উবার ভাড়া দিতে দিচ্ছেন না আমাদের। ক্রেডিট কার্ড নেই বলে আমরা ভাড়া দিতে পারি না, আর যখন ভাইকে বলি ক্যাশ ভাগাভাগির কথা, উনি আঁতকে উঠেন। তাই বললাম, কফি আমাদের ট্রিট। কিন্তু ভাইকে রাজি করাতে পারলাম না। উনি দৌড়ে চলে গেলেন স্টার বাক্সের ভেতর। আমাদের বললেন লবিতে বসতে। এখানে চেয়ার, টেবিল পাতা আছে। বসুন্ধরা সিটির ফুড কর্নারের মত।
প্রায় দশ মিনিট পর শাওন ভাই ফিরে এলেন। দোকানের ভিতর অনেক বড় লাইন, তাই দেরি হয়েছে। কফির গ্লাসগুলোয় ভাইয়ের নাম লেখা স্টিকার লাগানো কারণ ভাই এগুলো অর্ডার করেছেন। ব্যাপারটায় মজা পেলাম। কিছু কেনার পর ক্রেতা সেটার মালিক হয়ে যান, স্বাভাবিক। কিন্তু কেনা পণ্যের গায়ে ক্রেতার নাম লেখা থাকা মানে একদম সিল, ছাপ্পড় মারা মালিকানা। কফি খেয়ে আবার ব্যাক টু দা প্যাভিলিয়ন। বেস্ট বায়ে এসে কিনলাম আসুস নাইট্রো-ফাইভ। ১৫.৬ ইঞ্চির কালো রঙের ল্যাপটপটা প্রিন্সের প্রচণ্ড পছন্দ হয়েছে। আমি অত শত বুঝি না। ও আমাকে ধরে ধরে বুঝিয়ে দিল Intel Core i5, 8GB Memory, NVIDIA GeForce GTX 1050 Ti, 256GB Solid State Drive ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য। প্রিন্স যেহেতু বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের, তাই আমারও পছন্দ হল ল্যাপটপটা। খরচ করতে হল ৮৮০ ডলার। মূল দাম ৭৯৯ ডলার, বাকিটা ট্যাক্স। শাওন ভাইয়ের কার্ড দিয়ে কিনতে হল। এর মানে হল শাওন ভাই ল্যাপটপটা কিনেছেন, আমরা না। যদি কখনো ফেরত দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে, শাওন ভাইকে আসতে হবে। এটুকু ঝামেলা ঝুলে থাকা ছাড়া সবদিক দিয়ে তৃপ্তিদায়ক একটা দিন কাটল।
ল্যাপটপ কিনে শান্তিমত একটা ঘুম দিয়েছি। এই প্রথম আমার নিজের একটা ল্যাপটপ হল। এর আগে বাসায় ডেস্কটপ চালাতাম। অনেক শখ ছিল ল্যাপটপ কেনার কিন্তু অফিসের ল্যাপটপ দিয়ে কাজ চলে যেত বলে ব্যক্তিগত ল্যাপটপ কেনা হয়নি। ঘুমানোর আগে পরিকল্পনা করলাম আগামীকাল পাড়া বেড়াতে বের হব। পাড়াকে এখানে বলে নেইবারহুড। নর্দ্দার কালাচাঁদপুরের তুলনায় আমেরিকার নেইবারহুড কেমন সেটা জানা দরকার। পরিকল্পনা মোতাবেক সকাল সাতটায় উঠে পড়লাম। নাস্তা না করেই বেরিয়ে পড়লাম অজানার উদ্দেশ্যে। আমাদের ইচ্ছা রথও দেখা, কলাও বেচা। পাড়া বেড়াতে বেড়াতে জগিং করা। বাসা থেকে বের হয়ে যেদিকে গেলে রাজপথ, সেদিকে না গিয়ে উল্টোদিকের গলিতে ঢুকলাম। বেশি প্যাঁচগোছে না গিয়ে সোজা হাঁটতে লাগলাম। হাঁটতে হাঁটতে আশেপাশের বাড়ি দেখি, লন দেখি। প্রায় সব বাড়িতেই ঢালু ছাদ। দেশের মত সমতল ছাদ না দিয়ে এমন ছাদ কেন দিয়েছে ধরতে পারলাম না। পরে বন্ধু ফরহাদ মাসুম বলল, বরফ গলে যেন পড়ে যেতে পারে এজন্য এরকম ছাদ দেওয়া হয়। ফরহাদ আমেরিকায় মাস্টার্স করেছে। এখন পিএইচডি করছে জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমার আমেরিকা আসার পেছনে অন্যতম উদ্দীপক ছিল ও।
প্রতিটা বাড়ির সামনে দুইটা করে ডাস্টবিন রাখা। এখানে অবশ্য ডাস্টবিন বলে না, বলে ট্র্যাশ ক্যান। আমি ডাস্টবিন বলে বেশ কয়েকবার ধরা খেয়েছি। কেউ বুঝে না। নীল রঙের ট্র্যাশ ক্যান পুনরায় ব্যবহার উপযোগী জিনিসপত্র (recyclable) ফেলার জন্য, সবুজ রঙের ট্র্যাশ ক্যান পচনশীল দ্রব্যের জন্য। গলি থেকে বের হয়ে দেখলাম প্রশস্ত রাস্তা চলে গেছে। রাস্তার দুই ধারে জমকালো বসতবাড়ি, আর ফুটপাথ ধরে চলে গেছে ম্যাপল গাছের সারি। প্রতিটা পাড়ায় প্রচুর গাছপালা। দেখে শান্তি লাগে। আর এত পরিষ্কার রাস্তাঘাট! তবে রিমিনির রাস্তার তুলনায় ময়লা। রিমিনি ইতালির একটা ছোট শহর। অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা শহরটা পর্যটকদের জন্য বেশ পছন্দের জায়গা। চাকরিসূত্রে তিনবার গিয়েছি ওখানে। প্রথমবার যখন গিয়েছি, বাংলাদেশে ফেরার পর ইতালীয় বস জিজ্ঞেস করলেন শহরের কোন জিনিসটা আমার সবচেয়ে বেশি পছন্দ হয়েছে। আমি বললাম, রাস্তাঘাট। সেগুলো এতই পরিষ্কার যে, আমি চাদর না বিছিয়েই শুয়ে পড়তে পারব রাস্তার উপর। শুনে বস হাসতে হাসতে শেষ। হাসি শেষে বললেন, রিমিনির রাস্তাঘাট অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের তুলনায় অনেক ময়লা। এই রাস্তা দেখে যদি মুগ্ধ হয়ে যাই, অন্য দেশের রাস্তা দেখে কী প্রতিক্রিয়া হবে? উত্তর দিতে পারিনি। দেওয়ার মত অবস্থা ছিল না। রিমিনির রাস্তা ময়লা, এই কথা হজম করতে সময় লাগছিল।
ফিরে আসি সেন্ট লুইসে। অলিতে গলিতে ঘুরতে ঘুরতে আরেকটা ব্যাপার আবিষ্কার করলাম। করে বিস্মিত হলাম। প্রায় প্রতিটা পাড়ায় একটা করে চার্চ। বিভিন্ন সংগঠনের। খ্রিস্টানদের ভেতর এত ভাগ আছে, জানতাম না। চার্চগুলো বেশীরভাগই পুরাতন। হয় পাথরে তৈরি, নয় কাঠের। ওই কাঠ আবার ঝুরঝুরে হয়ে ভেঙ্গে পড়ছে। বুঝা যায় এগুলো বাতিল চার্চ। একসময় হয়ত মানুষের আনাগোনায় মুখর হত, কিন্তু এখন যৌবন হারিয়ে ধুঁকছে। প্রায় দেড় ঘণ্টা হাঁটার পর ফিরতি রাস্তা ধরলাম। এবার অন্য রাস্তায় হাঁটছি। সে রাস্তার ধারে বিশাল বড় জমি পতিত পড়ে আছে। জমিতে বড় বড় ঘাস জন্মেছে। সে ঘাসের ভেতর থেকে নাম না জানা বুনো ফুল গাছ গজিয়ে উঠেছে। এত সুন্দর ফুল দেখে ছবি তুলে ফেললাম কয়েকটা। ওরা কি জানবে দুটো মানুষ অসাধারণ মুগ্ধতা নিয়ে দেখছিল তাদের? জানবে, মানুষ দুটোর হাতের ছোঁয়ায় ঘাসের ডগা থেকে শিশির ঝরে পড়ছিল তাদের উপর?
সকালবেলা পাড়া ঘুরে বিকেলবেলা গেলাম ওয়ালমার্টে। নতুন বাসায় উঠার পর যা যা লাগবে, সব এখান থেকে কেনার পরামর্শ দিলেন শাওন ভাই। চাইলে ‘আইকিয়া’ থেকেও কেনা যায় হাঁড়ি পাতিল, কম্বল, বালিশ। কিন্তু সস্তা চাইলে ওয়ালমার্টই ভাল। এই মুহূর্তে সস্তার বিকল্প কিছু ভাবতে পারছি না। তাই ওয়ালমার্টে যাওয়াই স্থির হল। সেতু দাদা নিয়ে গেলেন উনার গাড়িতে করে। দুইদিন হল দাদা ছুটি কাটিয়ে ফিরে এসেছেন। শাওন ভাইয়ের সাথে একই এপার্টমেন্টে উনি থাকেন। আমি কৌতূহল নিয়ে ওয়ালমার্টে ঘুরতে লাগলাম। এই শপিংমলের কথা কত পড়েছি! আর এখন কিনা নিজেই এসেছি কেনাকাটা করতে। প্রিন্স গভীর মনযোগ দিয়ে বাসন কোসন দেখছে। একটু পর সস্প্যান, ফ্রাই প্যান, আর সটে প্যানের একটা সেট পছন্দ করলাম। এবার কম্বল খোঁজার পালা। ডাবল সাইজ, কুইন সাইজ, কিংবা কিং সাইজ নামে বিভিন্ন আকারের কম্বল দেখা যাচ্ছে। সবগুলোর দামই বেশি বেশি লাগছে। মাথা থেকে ডলারকে টাকায় রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়া তাড়াতে পারছি না কিছুতেই। তবু এর মধ্যে কিং সাইজের একটা কম্বল কিনে ফেললাম। কিং সাইজের ভেতরে কোনোটার দাম বেশি, কোনোটার কম। কম দামেরটাই কিনলাম। বালিশ খুঁজতে গিয়ে হল বিপদ। প্রিন্স শক্ত বালিশ ছাড়া ঘুমাতে পারে না, আর এখানে ফোম ছাড়া বালিশ নেই। মোটা দেখে একটা ফোমের বালিশ ওকে দেখালাম, কিন্তু ওর পছন্দ হল না। শক্ত বালিশ খোঁজার জন্য আমরা গণহারে বালিশ ধরে টিপাটিপি শুরু করলাম। একটু পর প্রিন্স একটা বালিশ পছন্দ করল। সে বালিশের আকার কোলবালিশের মত। তোষক ছাড়িয়ে মেঝেতে গড়াগড়ি খাবে মনে হচ্ছে। যা হোক, আমার জন্য কোলবালিশ আর মাথার বালিশ পছন্দ করতে বেগ পেতে হল না। জিনিস ভর্তি কার্ট নিয়ে দুজনে আবার ঘোরাঘুরি শুরু করলাম। হঠাৎ চোখ পড়ল জামাকাপড়ের সেকশনে। চমক খেয়ে দেখলাম, বাংলাদেশে তৈরিকৃত লেডিস শার্ট ঝুলছে। কীভাবে বুঝলাম? বুঝলাম কারণ আমার গায়েও ঝুলছে একই শার্ট। যে ফ্যাক্টরি ওয়ালমার্ট থেকে এটার অর্ডার পেয়েছিল, সে ফ্যাক্টরি আমাকে উপহার দিয়েছিল এই শার্ট। শার্টটা আমেরিকার মলে ঝুলতে দেখে দারুণ মজা পেলাম।
পরদিন গেলাম ভার্সিটিতে। ব্যাংক একাউন্ট খুলতে হবে নতুবা বেতন ঢুকবে না। আইটি সেন্টারে গিয়ে ল্যাপটপে মাইক্রোসফট অফিস, অ্যান্টি ভাইরাস ইত্যাদি সেট আপ দিতে হবে। ভার্সিটির নিজস্ব সাইটে প্রবেশ করার অনুমতি পাচ্ছি না। সেটাও ঠিক করতে হবে। প্রিন্সকে সাথে নিয়ে গেলাম। এসেছি চারদিন হয়েছে। এখনো একা একা ভার্সিটি যাওয়ায় অভ্যস্ত হতে পারিনি। ঘোড়া দেখলে খোঁড়া যাওয়ার রোগ সবারই আছে। আমিও সুযোগ বুঝে খোঁড়া হয়ে গেছি। কাজ শেষ করে দুজনে মিলে নর্থ ক্যাম্পাস ঘুরতে লাগলাম। এত বড় ক্যাম্পাস চক্ষু মেলিয়া দেখার সুযোগ হয়নি এখনো। আজকেও বোধহয় হবে না। কিস্তি কিস্তি করে ঘুরতে হবে। আজ ক্যাম্পাসে মানুষ নেই বললেই চলে। যেদিকে তাকাই, জনমানবহীন প্রান্তর। বাংলাদেশের ভার্সিটির সাথে এই ভার্সিটির হট্টগোলের পার্থক্যটা চোখে পড়ছে খুব। মাঝে মাঝে গলফ কার্ট চালিয়ে কয়েকজন যাওয়া আসা করছে। ভার্সিটির ভিতরে গলফ কার্ট কী করছে, বুঝলাম না। এগুলো চালিয়ে তো গলফ খেলোয়াড়রা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যায়। পরে জেনেছি এসব গাড়ি স্বল্প দূরত্বে চলাচলের জন্য ব্যবহার করা হয়। ভার্সিটির ভেতর যেহেতু গাড়ি নিয়ে ঢুকতে পারবেন না, তাই পায়ে হাঁটতে কাহিল লাগলে গলফ কার্ট চালিয়ে চলাফেরা করতে পারবেন। ঘুরতে ঘুরতে একটা দালানের সামনে এসে থামলাম। ‘মরিসেই হল’ নামের দালানটার লনে বিশাল এক দাবার ঘুঁটি দাঁড়িয়ে আছে। রাজাকে একা রেখে বাকি লোকজন কোথায় গেছে, জানি না। এই দালানের ঠিক বিপরীত পাশে স্লুর বিখ্যাত বিজনেস স্কুল। রিচার্ড এ. শেইফেটয স্কুল অফ বিজনেস। স্কুলটার অন্ট্রোপ্রনারশিপ প্রোগ্রাম, ইন্টারন্যাশনাল এমবিএ কিংবা অ্যাকাউন্টিং প্রোগ্রাম ইউএস নিউজ র্যাংকিংয়ে বেশ ভাল অবস্থানে আছে। স্কুলের সামনে সুন্দর একটা ফোয়ারা। শুধু এখানে নয়, পুরো ক্যাম্পাস জুড়েই ফোয়ারার মেলা। ছোট, বড়, মাঝারি, সব ধরনের। আর আছে ভাস্কর্য। নর্থ, সাউথ দুই ক্যাম্পাস জুড়েই আছে দারুণ সব ভাস্কর্য। এখানে দুটোর ছবি দিলাম। এ দুটো দেখে দূর থেকে বুঝিনি যে এগুলো ভাস্কর্য। ভেবেছি স্টুডেন্ট। এতই জীবন্ত!
পর্ব চার এখানে