1 0
Read Time51 Minute, 12 Second

পর্ব এক, দুই, তিন

(৯)

‘অনেক কিছুই হবে এখন, যা আমরা ভাবিনি আগে’ স্লোগান মাথায় নিয়ে আমেরিকায় পা রেখেছিলাম আমি আর প্রিন্স। স্লোগানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন দিয়ে আমেরিকা নানাভাবে আমাদের মুগ্ধ করতে লাগল। দেশে থাকতে প্রিন্সের বাথটাবের খুব শখ ছিল। সে কল্পনা করত আমরা বাড়ি বানালে সেখানে ফুটবল মাঠের সমান স্নানঘর থাকবে আর থাকবে একটা বাথটাব। আমি ওর কল্পনাকে উশকে দিতাম বাথটাবের চারদিকে সুগন্ধি মোমবাতি জ্বালিয়ে, সুরার গেলাস ধরে, বই পড়তে পড়তে সে শুয়ে থাকবে ইত্যাদি বলে। এদেশে এসে দেখি প্রতিটা স্নানঘরের সাথে ডিফল্ট বাথটাব। মেঝেতে দাঁড়িয়ে স্নান করার রীতি নেই। বাথটাবে দাঁড়িয়ে স্নান করতে হয়। টাবের চারদিকে পর্দা টানানো থাকে যেন পানি বাইরে না আসে। মেঝে থাকতে হবে শুকনো খটখটে। বাথটাবের সাথে তো বটেই, বেসিনের সাথেও গরম পানি আর ঠাণ্ডা পানির কল লাগানো। দুঃখের বিষয় হল, বাথটাব পেয়েও আমরা প্রথম সুযোগে কল্পনার মত করে সেটাকে ব্যবহার করতে পারলাম না।

এখানে সুইচ অন-অফ করার নিয়ম বাংলাদেশের উল্টো বলে প্রথম দু’য়েকদিন একটু ঝামেলা হল। গাড়ির ড্রাইভিং সিট বাম পাশে বলে কয়েকদিন ঠক খেলাম। বসার জন্য খালি বাম পাশের দরজা খুলতে যাই, গিয়ে দেখি ড্রাইভিং সিট। ভার্সিটিতে যাওয়া আসার জন্য আমার একটা বাহন দরকার। লোকাল বাসে যাওয়া আসা করাটা বেশ ব্যয়বহুল মনে হচ্ছে। ৭৯ ডলার দিয়ে মাসিক টিকেট কাটলে দিনে যতবার খুশি, যতদূর খুশি চলাচল করা যায় বটে, কিন্তু আমার তো আর সেটার প্রয়োজন নেই। এরচেয়ে বাইসাইকেল কিনে ফেললে চালিয়ে ব্যায়ামও হবে, খরচও এককালীন হবে। যেই ভাবা, সেই কাজ। দুজনের জন্য দুটো সস্তা সাইকেল খুঁজতে গিয়ে ফেসবুকের মার্কেটপ্লেস ভাজা ভাজা করে ফেললাম। সেকেন্ড হ্যান্ড সাইকেলের দাম দশ ডলার থেকে শুরু করে একশ ডলার পর্যন্ত আছে। কিন্তু একেকটা সাইকেলের পিছে একশ ডলার খরচ করার ইচ্ছে আমাদের নেই। আমরা আরও সস্তা চাই। এমন সময় রবিউল ভাই পরামর্শ দিলেন সেকেন্ড হ্যান্ড সাইকেল না কিনে আনকোরা কিনতে। উনি কয়েকমাস আগে গ্রিন কার্ড নিয়ে আমেরিকা এসেছেন। বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখির সুবাদে দেশ থেকেই আমরা পরিচিত। ভেবে দেখলাম যদি সেকেন্ড হ্যান্ডের দামে ফার্স্ট হ্যান্ড পাই, সমস্যা কী? শাওন ভাই নিজেও সাইকেল চালান। উনার সাইকেল কিনেছিলেন পাঁচশ ডলার দিয়ে। এটায় উঠে জীবন ধন্য করার জন্য এক রাতে আমরা সাইকেলটা নিয়ে বের হলাম। বাসার সাথে যে গলি, সেখানে চালাব। দুইজনই প্রায় দশ বছর ধরে সাইকেল চালাই না। অনভ্যাসে বিদ্যা কতটুকু হ্রাস পেয়েছে, দেখা দরকার।

প্রিন্স প্রথমে উঠতেই চায় না। সে আত্মবিশ্বাস পাচ্ছে না। আমাকে চালাতে দেখে আত্মবিশ্বাস যোগাবে, তারপর চালাবে। আমি দুরুদুরু বুকে প্যাডেলে চাপ দিলাম। দিয়ে প্রায় পড়েই যাচ্ছিলাম, কোনোমতে সামলে উঠলাম। বেশ কয়েকবারের সাধনায় প্যাডলিং আয়ত্ত্ব হল। অনভ্যস্ততার জন্য কিছুক্ষণ পর শুরু হল অসহনীয় নিতম্ব ব্যথা। এই ব্যথা নিয়ে আর যাই হোক, চালানো যায় না। এবার প্রিন্স শুরু করল। আধা ঘণ্টা পর প্রিন্সও বলল সিটে আর বসে থাকা যাচ্ছে না। তাই সেদিনের মত অনুশীলন গুটিয়ে বাসায় চলে এলাম। পরদিন ভাইয়েরা টুকটাক জিনিস কিনতে বার্লিংটন নামক শপিংমলে যাবেন। সেখান থেকে যাবেন এশিয়ান একটা গ্রসারি শপে। জিজ্ঞেস করলেন আমরা যেতে আগ্রহী কিনা। অবশ্যই আগ্রহী। আমরা এখন যেকোনো জায়গায় যেতে আগ্রহী। আমরা আমেরিকা দেখতে চাই। বার্লিংটনের কথা দেশ থেকে শুনে এসেছি। তানজিলা আপু বলেছিলেন এখানে সস্তায় ব্লেজার, কোট ইত্যাদি পাওয়া যায়। যেটা জানতাম না সেটা হল, এখানে সস্তায় পারফিউম, বডি স্প্রে, কোলনও পাওয়া যায়। ওদের কালেকশন দেখে মাথা ঘুরে গেল। এত সস্তায় আসল জিনিস দিচ্ছে কীভাবে? যেটার প্রকৃত মূল্য বিশ ডলার, সেটা দিচ্ছে দশ বা পনেরো ডলারে। যেটা দশ ডলার, ওটা চার বা পাঁচ ডলারে। এত ছাড় পেয়ে আমি ধুমিয়ে কেনা শুরু করলাম। কার্টে বারো, চৌদ্দটা সুগন্ধির বোতল দেখে আনজাম ভাই জিজ্ঞেস করলেন, এখনই দেশের জন্য শপিং শুরু করে দিয়েছি কিনা। কেডসও দেখলাম সস্তায় দিচ্ছে। প্রিন্স ওর জন্য একটা কেডস কিনল। আমার জন্য কোনো কেডস পছন্দ হচ্ছে না। এরপরের গন্তব্য মিডওয়েস্ট নামের একটা পাকিস্তানি গ্রসারি শপ। ওখানে গিয়ে ভাইয়েরা হালাল গরু বা মুরগি কিছু একটা কিনলেন। আমি আর প্রিন্স ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। এক জায়গায় দেখি রুচি আচারের বয়াম সাজিয়ে রেখেছে। ফ্রিজের ভেতর দেখি রসগোল্লা, কাঁচাগোল্লা আর সন্দেশের মত মিষ্টি সাজানো। এগুলো খেতে দেশি মিষ্টির মত হবে কিনা জানতে চাইলাম ভাইদের কাছে। উনারা বললেন ওরকম তো হবেই না, উল্টো খেতে কাঁচা কাঁচা লাগে। তারপরও মিষ্টি দেখে লোভ সামলাতে পারলাম না। এক বাক্স কাঁচাগোল্লা কিনে ফেললাম।

দেশে থাকতে বিভিন্ন হায়ার স্টাডি গ্রুপে পড়তাম দেশের বাইরে ঈদের আমেজ খুব একটা বুঝা যায় না। ঈদ উপলক্ষ্যে আমেরিকায় ছুটি নেই বলে সবাই নিত্যদিনের মত অফিস, আদালতে যায়। ঈদ-উল-আযহার দিন ঘুম থেকে উঠে আমরাও আবিষ্কার করলাম শাওন ভাই আর আনজাম ভাই ভার্সিটিতে গেছেন। রান্নাঘরে ঢুঁ মেরে দেখলাম গতকাল রাতের ভাত, ডাল, তরকারি পড়ে আছে। এই দিয়ে তো ঈদ চলে না। ঠিক করলাম ভাইদের জন্য বেশি কিছু না হোক, পোলাও আর মাংস রান্না করব। রান্নায় আমার হাত খোলতাই নয় বলে প্রিন্স হবে প্রধান বাবুর্চি, আমি সাগরেদ। বাসার পাশে শ্নাক্স নামের গ্রসারি শপ আছে। সেখান থেকে কাঁচাবাজার সেরে শুরু করে দিলাম রান্নাবান্না। কিন্তু পোলাও আর মুরগীর রোস্ট ঈদের খাবার হিসেবে সাধারণ হয়ে যায় বলে প্রিন্স সিদ্ধান্ত নিল ডিমের ভুনাও করবে। তথাস্তু। বিকেলের মধ্যে সবকিছু প্রস্তুত হয়ে গেল। দুই ভাই ভার্সিটি থেকে ফিরে দারুণ চমকিত হলেন। আনজাম ভাই দ্বিগুণ চমক খেলেন কারণ তিনি ভুলেই গিয়েছিলেন আজকে ঈদ! শাওন ভাই বারবার বলতে লাগলেন কেন এত ঝামেলা করলাম। খানাদানাও জব্বর হল। প্রিন্স প্রশংসায় উড়ে গেল।

ভার্সিটি থেকে জানিয়েছিল যে, আমাকে সোশ্যাল সিকিউরিটি নাম্বার জোগাড় করতে হবে। এটা না হলে বেতন দেওয়া হবে না। এই নাম্বার জোগাড় করার জন্য যেতে হবে সোশ্যাল সিকিউরিটি এডমিনিস্ট্রেশন অফিসে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে একদিন গেলাম। নেট ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখেছিলাম এখানে আইডেন্টিটি যাচাইয়ের জন্য পাসপোর্টের বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে প্রার্থীকে প্রশ্ন করা হয়। আমি গড়গড় করে পাসপোর্ট মুখস্ত করা শুরু করলাম। যখন ডাক এল, কাউন্টারে গিয়ে দেখি রাগান্বিত এক মহিলা দাঁড়ানো। উনি আমাকে একটা ফর্ম দিয়ে পড়তে বললেন। ওখানে লেখা, কাউন্টারে উপস্থিত অফিসার আমার আচরণ, ভাবভঙ্গি দেখে আমাকে বিচার করবেন। উনি আমাকে যেকোনো ডকুমেন্ট থেকে প্রশ্ন করতে পারেন (পাসপোর্ট, আই-২০, আই-৯৪, ভার্সিটির কন্ট্রাক্ট লেটার ইত্যাদি)। পড়া শেষে অফিসারের দিকে তাকালাম। মধুর হাসি দিলাম। উনি বললেন, ‘শুরু করতে পারি?’ বললাম, ‘বিলকুল।’ মহিলাটি একটা কাগজে আমাকে বাবা-মায়ের নাম লিখতে বললেন। স্থায়ী ঠিকানা লিখতে বললেন। এগুলো আমাকে যাচাইকরণের অংশ কিনা, কে জানে। বানান ভুল হলে আমার আইডেন্টিটি ভুয়া, বানান ঠিক হলে আমি নির্ঝর। ভালোয় ভালোয় সব উৎরে গেলাম। সারাক্ষণ মুখে হাসি ঝুলিয়ে রেখেছিলাম যেন বুঝা যায় আমি আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। কাজ শেষে অফিসার বললেন বাসার ঠিকানায় আমার এসএসএন পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আমি যে নাম্বারের জন্য আবেদন করেছি এর প্রমাণ হিসেবে একটা ফর্ম ধরিয়ে দিলেন। এই ফর্ম নিয়ে ভার্সিটির হিউম্যান রিসোর্স ডিপার্টমেন্টে দেখালে তারা বেতন নিয়ে কাজ শুরু করবে। ধন্যবাদ দিয়ে যখন বিদায় নিলাম, তখন প্রথমবারের মত মহিলার মুখে হাসি দেখলাম। হাসলে মানুষকে কত সুন্দর লাগে, আরেকবার টের পেলাম।

ফর্ম নিয়ে এবার ভার্সিটিতে এলাম। কাজ শেষ করে আবার ক্যাম্পাস টুর দিলাম। ইন্টারন্যাশনাল অফিসের ছাদে যতগুলো দেশের ছেলেমেয়ে পড়তে এসেছে, ততগুলো দেশের পতাকা টাঙানো। বাংলাদেশ থেকে আমরা ছয়জন আছি। নিশ্চয় বাংলাদেশের পতাকাও আছে? খুঁজতে লাগলাম ঈগলের চোখ দিয়ে। একটু পর দেখলাম। দেখে কেমন একটা গর্বে বুক ভরে গেল। রিক্রিয়েশন সেন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম নগ্ন একটা ভাস্কর্যকে। দেখে বেশ ধাক্কা খেলাম। সেন্ট লুইস বিশ্ববিদ্যালয় ‘জেজুইট’ নামে ক্যাথোলিক খ্রিস্টানদের একটা ধর্মীয় সম্প্রদায় কর্তৃক নির্মিত ভার্সিটি। এখানে নগ্ন ভাস্কর্য দেখতে পাওয়ার মাহাত্ম্য অন্যরকম, কারণ নগ্ন ভাস্কর্য নিয়ে ক্যাথোলিক সমাজের আছে চরম লজ্জাকর ইতিহাস। রেনেসাঁ আমলে সারা রোম জুড়ে নির্মিত হয়েছিল অনেক নগ্ন ভাস্কর্য, যেগুলোর উন্মুক্ত জননাঙ্গ দেখে পোপ পায়াস শিউরে উঠেছিলেন। তিনি এটাকে শিল্প হিসেবে না দেখে অশ্লীলতা হিসেবে দেখেছিলেন। তাই জননাঙ্গ ভেংগে দিয়ে নকল পাতা (Fig leaves) বসিয়ে ভাংগা জায়গাটা ঢেকে দিয়েছিলেন। ইতিহাসে এই জঘন্য বর্বরতা “The Great Castration” নামে পরিচিত। সেই খ্রিস্টান ধর্মগুরুদেরই একটা ভাগ ভার্সিটিতে জননাঙ্গ দেখানো ভাস্কর্য রেখেছে মানে এখন এই ধর্ম যথেষ্ট উদারমনা হয়েছে, এবং সবচেয়ে বড় কথা, শিল্পের সাথে অশ্লীলতা গুলিয়ে ফেলছে না।

বাসা থেকে ভার্সিটি যাওয়ার পথে বেশ কিছু প্রাচীন স্থাপত্য চোখে পড়ে। আমরা সেগুলো দেখে আশ্চর্য হই। প্রাচীন দালানকোঠার প্রতি আমাদের দুজনেরই অন্যরকম আকর্ষণ আছে। বাংলাদেশেও এরকম দালান দেখলে কল্পনায় অনেক কিছু ভেসে উঠত। এসব দালানে আগে কারা থাকত, তারা কেমন জীবন যাপন করত, প্রতিটা ঘরে তাদের কেমন স্মৃতি জড়িয়ে আছে ইত্যাদি। আমার মত অনেকেই আছে যারা পুরাতন ঘরবাড়ি, প্রাসাদ দেখলে উদাস হয়ে যায়। মনে মনে অনেক কিছু ভেবে নিয়ে আনন্দ পায়। এখানে এসেও পুরানো দালান দেখে ওই সময়কার কাহিনী কল্পনা করতে চেষ্টা করি। সবচেয়ে চোখে পড়ে যে ব্যাপারটা সেটা হল প্রাচীন দালানগুলো বেশীরভাগই পাথরের চাঁই দিয়ে তৈরি। এরপরের ধাপে বোধহয় এসেছে লাল ইটের তৈরি দালান। দেওয়ালের গায়ে পলেস্তারা লেপার প্রচলন ছিল না বলে লাল ইট দেখা যায়। আমার কাছে আধুনিক বসতবাড়ির চেয়ে প্রাচীন বাড়িগুলো দেখতে বেশি সুন্দর লাগে। এখন মানুষের জায়গার অভাব বলে সাশ্রয়ী বাড়ি তৈরি করা হয়। চারকোণা বিল্ডিং, খাড়া চলে গেছে বিশ বাইশ তলা। এখনকার বড়লোকদের বাসা দেখলেও মন ভরে না। সব বাসা একরকম লাগে। কিন্তু পাথরের তৈরি শতাব্দী প্রাচীন বাড়িগুলো ভীষণ জমকালো আর অনন্য। রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় আমরা রোদে পুড়ে খাক হয়ে যাই। গাছপালার তলা দিয়ে হাঁটার সময় শীতল, ঝিরঝিরে হাওয়া পাই অথচ খাড়া রোদে বের হলে চামড়া পুড়তে পুড়তে কয়লা হয়ে যাই। সেই কয়লা সাবান ডলেও উঠানো যায় না। দেশের ভ্যাপসা গরমে ত্রিশ বছরে যতটা না কালো হয়েছি, আমেরিকায় এসে সাতদিনে কালো হয়েছি তার দ্বিগুণ। এরকম শুষ্ক রোদ আরও একবার পেয়েছিলাম বালি দ্বীপে গিয়ে। চড়চড় করে চামড়া ফেটে যাচ্ছে, এমন অনুভূতি হয়েছিল। কিন্তু তারপরও সেন্ট লুইসের প্রশস্ত, পরিষ্কার এবং ভীড়হীন ফুটপাথ দিয়ে হাঁটতে ভাল লাগে। দেশে মানুষের ধাক্কা খাওয়ার ভয়ে হাঁটাহাঁটি এক প্রকার বাদ দিয়েছিলাম, শুধু রিকশায় চড়তাম। এখন হেঁটে বেড়াই, স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করি। বাইরে বিচ্ছিরি রোদ থাকলেও ঘরের ভিতর এয়ার কন্ডিশনের নিচে কমফোর্টার জড়িয়ে ঘুমাই। এখন পর্যন্ত প্রতিটা বাসায় ডিফল্ট এসি দেখেছি। এই এসি পালার ক্ষমতা দেশে আমাদের ছিল না, এখানে বেশ সস্তায় পালা যায়।

হঠাৎ ইমেইল এল আন্তর্জাতিক স্টুডেন্ট হিসেবে আমাকে ইংরেজি টেস্ট দিতে হবে। এই টেস্টের মাধ্যমে যাচাই করা হবে আমার ইংরেজি কোর্স করার দরকার আছে কিনা। টেস্ট দেওয়াটা বাধ্যতামূলক, তবে ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান চাইলে টেস্টের হাত থেকে আমাকে বাঁচাতে পারেন। আমি চেয়ারম্যানের কাছে গেলাম। আইইএল্টিএসে ৭.৫ নিয়ে এখানে ভর্তি হয়েছি। এরপরও আমার ইংরেজির দৌড় ঝালাই করার মানে বুঝছি না। চেয়ারম্যান বললেন টেস্ট দেওয়াটা আমার জন্যেই ভাল। নিজের অবস্থান আরেকবার পরিষ্কার হবে। ভাইদেরকে জিজ্ঞেস করে জানলাম, উনাদের কারো এই টেস্ট দেওয়া লাগেনি। তাহলে আমার কেন লাগছে? মনঃক্ষুণ্ণ হলাম। আইইএল্টিএস না হয় প্র্যাকটিস করে করে ৭.৫ স্কোর তুলেছি। এটা কেমন টেস্ট, কী আসবে, কীভাবে স্কোরিং হবে কিছুই জানি না। নার্ভাস হয়ে গেলাম। নার্ভাসনেস কাটাতে ভার্সিটির ওয়েবসাইটে ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করলাম। টেস্ট সম্পর্কে সাধারণ তথ্য জানলাম। তারপর নির্দিষ্ট দিনে টেস্ট দিতে গেলাম। আমার মত অনেকে জড় হয়েছে। সবাই ফল ২০১৮ সেশনের আন্তর্জাতিক স্টুডেন্ট। অনেকে দল বেঁধে আড্ডা দিচ্ছে। রীতিমত হইচই, হাসাহাসি চলছে। মানুষ কী সুন্দর মিশে যেতে পারে অন্যের সাথে! আর আমি সারাজীবন অন্তর্মুখী হয়ে রইলাম। প্রয়োজন না পড়লে কারো সাথে গিয়ে কথা বলতে অস্বস্তি লাগে। কিন্তু নিজেকে বদলাতে হবে। মানুষের সাথে না মিশলে জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে। এই চিন্তা থেকে খুঁজে বের করলাম একটা একা বসে থাকা ছেলেকে। প্রথমদিনেই কোনো দলের সাথে ভিড়ে যাওয়ার সাহস হচ্ছে না। ছেলেটা আফ্রিকার কোনো দেশ থেকে এসেছে। আমার মতই চুপচাপ ঘরানার। একমনে মোবাইল টিপছে। আমি ওর পাশে বসে হাই হ্যালো দিলাম। ছেলেটা প্রত্যুত্তর দিয়ে আবার মোবাইল টিপতে লাগল। মনে মনে হেসে ফেললাম। আমি এসে বসেছি আমারই কার্বন কপির সাথে। কী আর করা! আমিও মোবাইল টিপতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। আমার পাশে চারজন এশিয়ান মেয়ে হাহাহিহি করছে। দেখে মনে হচ্ছে পুরনো দোস্ত। একটু পর দলটা থেকে এশিয়ান একটা মেয়ে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করল, ‘আমি অমুক, পাকিস্তান থেকে এসেছি। তুমি?’ পরিচয় দিলাম। মেয়েটা খুবই স্মার্ট। তরতর করে ইংরেজিতে অনেক কথা বলল যার সারমর্ম হচ্ছে, সে পাবলিক হেলথে মাস্টার্স করতে এসেছে। আজকেই ওই তিনজন মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছে যারা সবাই পাবলিক হেলথে পড়তে এসেছে ভারত থেকে। মেয়েটার ইংরেজিতে মুগ্ধ হয়ে আমি বললাম, ‘তোমার তো পরীক্ষা দেওয়ার কোনো দরকারই নেই! এত ঝরঝরে কথা বল তুমি…।’ মেয়েটা বলল, ইংরেজি মুভি দেখে দেখে সে কথা বলা আয়ত্ব করেছে। কিন্তু লেখালেখির হাত খুব খারাপ। আমার কাহিনী ঠিক উল্টো। লিখতে পারি ভালই, কথা বলতে গেলে বেঁধে যায়।

পরীক্ষার হলে ঢুকে যখন সবাই আসন গ্রহণ করলাম, মজার একটা দৃশ্য হল। সব চাইনিজ একসাথে, সব আফ্রিকান একসাথে, সব দক্ষিণ এশিয়ান একসাথে বসেছে। এই নিয়ে ইন্সট্রাক্টররাও মজা করলেন। এরপর পরীক্ষা শুরু হল। দুটো বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন এসেছে। জিআরই-এর অ্যানালাইটিকেল রাইটিং সেকশনের মত। প্যাটার্নটা পরিচিত বলে ধুমিয়ে লিখলাম। এক ঘণ্টার পরীক্ষা শেষে খাতা জমা দিয়ে বেরিয়ে এলাম। এশিয়ান দলটা থেকে বিদায় নিলাম। ওরা এখন পাবলিক হেলথ কলেজে যাবে আর আমি যাব ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের জন্য খানাপিনার আয়োজন করা হয়েছে যে হলে, সেখানে। পরীক্ষার ফলাফল দেবে দুইদিন পর। সেটা নিয়ে চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করতে হবে। ফলাফলের উপর ভিত্তি করে উনি সিদ্ধান্ত নেবেন আমার ইংরেজি কোর্স করতে হবে কিনা। যেভাবে ধুমসে লিখেছি, ভাল স্কোর না এসে যায়ই না!

যেদিন ইংরেজি পরীক্ষার ফল দিল, ঐদিন নতুন ভর্তি হওয়া ইন্টারন্যাশনাল গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্টদের ওরিয়েন্টেশনও হল। রেজাল্ট নিতে যেখানে গেলাম, সেখানে গিয়ে পরিচয় হল আশীষ শ্রেষ্ঠ নামের এক নেপালি স্টুডেন্টের সাথে। ও-ও পাব্লিক হেলথের মাস্টার্স প্রোগ্রামে এসেছে। স্লু’র (SLU-কে এখানে স্লু বলে) MPH ডিগ্রি পুরো ইউএসএতে নামকরা (র‍্যাংকিংয়ে ২৩ নাম্বারে)। এজন্যেই এই তিনদিনে আমি MPH প্রোগ্রামের এত স্টুডেন্টকে দেখে ফেললাম। এখানে আসার জন্য আশীষ অন্যান্য ভার্সিটির ফুল ফান্ড রিজেক্ট করে দিয়েছে অথচ এখান থেকে সে পাবে ৫০% ফান্ড। অবশ্য এক সেমিস্টার পার হলে ফুল ফান্ড হওয়ার একটা সুযোগ আছে। তাই ও দ্বিতীয়বার ভাবেনি, চলে এসেছে। রেজাল্ট নিয়ে আমরা ওরিয়েন্টেশনে যোগ দেওয়ার জন্য রওনা হলাম। আমার স্কোর এসেছে চার। রেজাল্ট কার্ডে লেখা, আমার ইংরেজি কোর্স না করলেও চলবে। কিন্তু যদি আরও উন্নতি করতে চাই, কোর্সটা করতে পারি। আশীষকে জিজ্ঞেস করলাম ওর কার্ডে এমন কিছু লেখা আছে কিনা। বলল, নেই। ইতস্তত করে ওর স্কোর জানতে চাইলাম। অন্যের স্কোর জানতে চাওয়া এখানে অভদ্রতা। যার যার রেজাল্ট তার তার কাছে। প্রতিযোগীতা এখানে অন্যের সাথে নয়, নিজের সাথে। তবুও আশীষ যেহেতু এশিয়ান, লজ্জার মাথা খেয়ে ওর স্কোর জানতে চাইলাম। বলল ৪.৫। মাত্র ০.৫ নাম্বারের জন্য আমাকে এই মন্তব্য পেতে হয়েছে। খুব খারাপ করিনি তাহলে!

অনুষ্ঠান শুরু হল সকাল সাড়ে আটটায়। প্রথমে খানাপিনা, এরপর মূল অনুষ্ঠান। অডিটোরিয়ামের বাইরের লবিতে সকালের নাস্তা দেওয়া। হরেক রকমের কেক, ক্রসাঁ (সঠিক ফরাসী উচ্চারণ করতে এক বছরের নিবিড় সাধনা লাগবে), ডোনাট, ফলমূল, জ্যাম, জেলি, মেয়োনেজ, জুস। আশীষ আর আমি নাস্তা সেরে কফির মগ হাতে অডিটোরিয়ামে ঢুকলাম। আমার মত আশীষও একটু দ্বিধায় ছিল কফি খেতে খেতে লেকচার শোনা ঠিক হবে কিনা। কিন্তু অধিকাংশ স্টুডেন্টই দেখি মগ হাতে ঢুকছে। আমরাও ঢুকে পড়লাম। ঢুকে দেখি পেছনের উঁচু আসন সব ভর্তি হয়ে গেছে। সামনের নিচু আসনগুলো খালি। আশীষ বলল, “নেপালে আমি জীবনেও সামনের বেঞ্চিতে বসার সুযোগ পাইনি। এখন আমি সামনে বসব।” দুজনে গিয়ে বসলাম সামনের দিকের একটা সারিতে। অনুষ্ঠানে আমাদের স্বাগত জানাতে এসেছেন সেন্ট লুইস বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসোসিয়েট প্রভোস্ট ডঃ রবার্ট উড, যিনি একজন জেনেটিসিস্ট এবং ইভোলিউশনারি বায়োলজিস্ট। উনাকে দেখে চমকে গেলাম। কাঁধ ছাড়ানো চুল রাবার ব্যান্ড দিয়ে ঝুঁটি করে রেখেছেন, বাম কানে পরেছেন দুল। সুট, টাই, শু পরতে ভুল করেননি বটে, কিন্তু তাতে উনার বোহেমিয়ানপনা চাপা পড়েনি। “ভদ্র, শিক্ষিত, ভাল” তকমা লাগানোর জন্য আমাদের যা শেখানো হয়, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসোসিয়েট প্রভোস্ট দেখি তার অনেক কিছুই মেনে চলেননি! এত অভদ্র প্রভোস্ট দিয়ে ভার্সিটি চলবে? উনার সরস বক্তব্যের সময়সীমা ছিল পনের মিনিট। তের মিনিটের বেলায় উনি বললেন, “আমার ইচ্ছা ছিল অডিটোরিয়ামে উপস্থিত সবার নাম জানার। কিন্তু হাতে আছে মাত্র দুই মিনিট! তোমরা বরং আমার অফিসে এসে পরিচিত হয়ে যেও। কিংবা স্টারবাক্সে যখন কফি খেতে যাই, তখন পরিচিত হয়ো। তবে আগে কফি কিনতে দিতে হবে, এরপর অন্য কথা।” স্মৃতি হাতড়ে দেখলাম, সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত কারো বক্তব্য টায় টায় সময়ে শেষে হতে দেখিনি। আর একজন উচ্চপদস্থ ব্যক্তিকে বক্তৃতার জন্য ‘মাত্র’ পনের মিনিট দেওয়ার ঘটনাও চোখে পড়েনি।

প্রভোস্টের পর কথা বলতে এলেন জেসুইট ফাদার ডেভিড সোয়ালস্কি। সেন্ট লুইস ভার্সিটি নির্মিত হয়েছিল রোমান ক্যাথলিক সম্প্রদায়ভুক্ত জেসুইট ফাদারদের দ্বারা। ২০১৮ সালে পালিত হচ্ছে ভার্সিটির ২০০ বছর। ফাদারের বলা একটা কথা মনে দাগ কেটে গেল। তিনি বললেন, “খ্রিস্টানদের দ্বারা তৈরি হলেও এই ভার্সিটি শুধু খ্রিস্টানদের জন্য বরাদ্দ নয়। এখানে পড়তে আসে সকল ধর্মের, সকল জাতির মানুষ। যারা ধর্ম পালন করে, তারা যেমন এই ভার্সিটিতে পড়ার দাবীদার, যারা নাস্তিক, তারাও।” দ্বিতীয়বার চমক খেলাম। একজন ধর্মগুরুর মুখে এই কথা শোনা মানে বিশাল কিছু। প্রতিটা লেকচারের পর প্রশ্নোত্তর পর্ব রাখা হচ্ছিলো। তো, প্রভোস্টকে প্রশ্ন করার সময় এক ছেলে পাশের দুই চেয়ারে দুই হাত ছড়িয়ে, দুই পা চ্যাগিয়ে রিল্যাক্সড ভঙ্গিতে বসে প্রশ্ন করল। দেখে আমার আর আশীষের চোখ আরেকটু হলে কোটর থেকে বেরিয়ে আসত। যত দ্রুত পারি আমেরিকান সংস্কৃতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। নতুবা চোয়াল, চোখ, কান কিছুই জায়গামত থাকবে না। দুই ঘণ্টা পর বিরতি দিল। হল থেকে বের হয়ে আবার নাস্তার সামনে পড়লাম। সকালের বেঁচে যাওয়া নাস্তাই নতুন করে পরিবেশন করা হচ্ছে। সবাই আরেক দফা খাওয়ার পর সেগুলো শেষ হল। পনের মিনিট বাদেই দেখলাম দুপুরের খাবার সাজানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। খাবার হিসেবে আছে সালাদ, সালাদের উপরের ড্রেসিং হিসেবে সাদা আর বাদামী রঙের দুই ধরনের থকথকে বস্তু, ফলমূল, আলুর সালাদ (রাশিয়ান সালাদ), মুরগীর মাংসের সালাদ, তিন ধরনের মাংসের কিমা, সাদা পাউরুটি, বাদামী পাউরুটি, জ্যাম, জেলি, মেয়নেজ, চার ধরনের কুকি, চার ধরনের চিপ্স, পানি আর ঠাণ্ডা রঙ চা। এখানে দুধ চা কেউ খায় না। দুধ কফি অবশ্য খায়! চা মানে এখানে ঠাণ্ডা ব্ল্যাক টি-ই দেখলাম।

পরবর্তী সেশন শুরু একটায়। এগারোটা থেকে একটা পর্যন্ত পরস্পরের সাথে পরিচিত হওয়া, তথ্য মেলা, ইমিগ্রেশন চেকইন ইত্যাদি কার্যক্রম চলবে। কার্যক্রমে অংশ নিয়ে দুটো কলম, একটা ব্যাগ আর অনেকগুলো লিফলেট উপহার পেলাম। একটায় যে সেশন শুরু হল, সেটা গ্র্যাজুয়েট অ্যাসিস্ট্যান্টদের নিয়ে। আমার সামনে, পিছনে, বামে, ডানে সব ফ্রেশ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট। ওদের ভিড়ে নিজেকে বুড়ো ধাড়ি লাগছে। সেই ২০১৩ সালে পঁচিশ বছর বয়সে মাস্টার্স পাশ করে, পাঁচ বছর চাকরি করে ২০১৮ সালে দ্বিতীয় মাস্টার্স করতে এসেছি। বলে রাখা ভাল, ২০১১ সালে পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও সেশন জ্যামে পড়ে দুই বছর পিছিয়ে গিয়েছিলাম। সেশন জ্যামের ফাঁদে পড়ে আমাদের যে দুটো বছর নষ্ট হল, এর দায়ভার কেউ নেয়নি। অথচ কুফল আমাদের ঠিকই ভোগ করতে হয়েছে। যাক, ধান ভানতে শিবের গীত আর না গাই, বরং আশার কথা বলি। ডানদিকের এক চিপায় একজন ডক্টরাল স্টুডেন্টকে বসে থাকতে দেখলাম যিনি পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই। আরেক মাস্টার্স স্টুডেন্টকে দেখলাম, যার বয়স হবে চল্লিশের কোঠায় কারণ মুখের চামড়া কুঁচকে যেতে শুরু করেছে। উনারাও এবার নতুন ভর্তি হয়েছেন। তো, কী বুঝলাম? শিক্ষার কোনো বয়স নেই। বুড়া ভাম হয়ে পড়তে এসেছি ভেবে মন খারাপ করার চেয়ে ভাবা উচিৎ, এই বয়সে এসেও নিজের স্বপ্ন পূরণের পথে হাঁটছি। স্বপ্ন (সেটা যাই হোক না কেন) পূরণের এই সাহস, উদ্যম অনেকেই বয়ে বেড়াতে পারে না। একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর হাল ছেড়ে দেয়, স্বপ্ন জলাঞ্জলি দেয়। কিন্তু অনেকেই আছেন, যারা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করে যান। ওই পথেরই পথিক দুজনকে দেখে মুগ্ধ হলাম।

(১০)

শাওন ভাই যতক্ষণ বাসায় থাকেন, ততক্ষণ পড়েন। রুমের দরজা পুরোপুরি বন্ধ না করে ভিজিয়ে রাখেন। উনার রুমের সামনে দিয়ে যাওয়া আসার সময় প্রায়ই দেখি উনি কানে হেডফোন গুঁজে ল্যাপটপের পর্দার দিকে তাকিয়ে আছেন। হাতের সামনে খাতা কলম, কিছু একটা শুনছেন আর নোট করছেন। বই থেকে না পড়ে উনি কি নেট থেকে পড়েন নাকি? একদিন কী একটা কাজে শাওন ভাইয়ের কাছে গিয়েছি, দেখি উনার টেবিলে ড্যান ব্রাউনের ‘অরিজিন’ উপন্যাস। মুগ্ধ হলাম। ভাইও কি আমার মত ড্যান ব্রাউনের ভক্ত নাকি? উনি জানালেন এটা উনার ল্যাবমেটের বই। সে নাকি ড্যান ব্রাউনের স্বাক্ষর সম্বলিত বই কিনেছে। বিস্ফোরিত চোখে বইটা হাতে নিয়ে কভার উল্টে দেখলাম সত্যি। মার্কার দিয়ে দেওয়া স্বাক্ষরটা জ্বলজ্বল করছে। কী অসাধারণ! যে লোকটাকে সামনাসামনি দেখতে পারব কিনা জানি না, তার হাতের লেখাটা অন্তত দেখলাম। ভাইয়ের বিছানার পাশে স্তূপ করে রাখা বেশ কিছু গল্পের বইও চোখে পড়ল। বিখ্যাত সব ইংরেজি উপন্যাসের পেপারব্যাক ভার্সন। উনি এগুলো কিনেছেন গুডউইল নামের দোকান থেকে। বললেন দুই ধরনের গুডউইল আছে। একটায় বই বিক্রি করে স্কেল দিয়ে মেপে, মানে বই একটা স্কেলের উপর রেখে দেখে পুরুত্ব কতখানি। তারপর পুরুত্ব অনুযায়ী দাম নেয়। আরেকটা আছে প্রতি বই এক ডলার করে বেচে। উনি ঐসব জায়গা থেকে সংগ্রহ করেছেন বইগুলো। শুনে আমার লোল পড়া শুরু হল। বই জিনিসটা আমার অনেক বড় দুর্বলতার জায়গা। দেশে কয়েক’শো বই রেখে এসেছি। এখানেও নতুন করে পাঠাগার বানানোর ইচ্ছা। এত সস্তায় বই পেলে তো সোনায় সোহাগা!

পরদিন ডিপার্টমেন্টে গেলাম গ্র্যাজুয়েট অ্যাসিস্ট্যান্টদের ওরিয়েন্টেশনে। গিয়ে দেখি পুরো ডিপার্টমেন্ট জুড়ে এক ঝাঁক তরুণ তরুণী হইচই, হাসাহাসি করছে। এরা কারা, এদের মাঝে আমি কী করব কিছু বুঝতে পারছি না। রিসেপশনে বসে থাকা মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলাম কোথায় ওরিয়েন্টেশন হবে। সে রুম নাম্বার বলল। এখনো পনেরো মিনিট বাকি। রিসেপশনে রাখা সোফায় বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম। হঠাৎ একটা তরুণী এসে জিজ্ঞেস করল আমি নতুন গ্র্যাজুয়েট অ্যাসিস্ট্যান্ট কিনা। হ্যাঁ বলতেই সে নিজের পরিচয় দিয়ে বলল, ‘আমি মলি। আমিও নতুন গ্র্যাজুয়েট অ্যাসিস্ট্যান্ট।’ তারপর একে একে আরও কয়েকজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। সারাহ মরিসি, সারাহ ক্যারোল, মেইশা, জেরাল্ড, ম্যাডেলিন, কিমি। সবাই যে নতুন, তা নয়। জেরাল্ড, ম্যাডেলিন, কিমি গত বছর ভর্তি হয়েছে। নতুন গ্র্যাজুয়েট অ্যাসিস্ট্যান্টদের ওরিয়েন্টেশনে ওদেরও থাকতে হবে। এর মধ্যে মলি আর সারাহ ক্যারোলকে আমার খুব পছন্দ হয়ে গেল। দুজনই হাসিখুশি, নিজে থেকে এসে আমার সাথে কথা বলেছে। যেহেতু আমিই একমাত্র নন-আমেরিকান, তাই আমার অস্বস্তি বুঝতে পেরে আমাকে সহজ করার চেষ্টা করেছে। অন্যরা একটু রাশভারী হয়ে আছে। শুধু নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। একটু পর একজন এসে আমাদের কনফারেন্স রুমে নিয়ে গেলেন। ওখানেই আয়োজন করা হয়েছে ওরিয়েন্টেশনের।

রুমের মাঝখানে লম্বা একটা টেবিল। টেবিলে বিস্কুট, কেক, ক্রসাঁ ইত্যাদি রাখা। কফিও আছে। টেবিল ঘিরে ডিপার্টমেন্টের সব প্রফেসর এবং কর্মী বসা। এগারোটা খালি চেয়ার রয়েছে এগারোজন জিএ-র জন্য। আমরা বসার পর কথাবার্তা শুরু হল। প্রথমে প্রফেসর আর স্টাফরা নিজেদের পরিচয় দিলেন, এরপর আমরা। চেয়ারম্যান ডঃ আইভিস ফরেস্টার স্বাগত বক্তব্য দিলেন। এরপর জিএ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব কী, কীভাবে সেগুলো পালন করতে হবে, কার কাছে রিপোর্ট করতে হবে, কীভাবে কাজের হিসেব রাখতে হবে ইত্যাদি সম্পর্কে বলা হল। ডঃ ফরেস্টার বললেন আমরা যেন খাওয়ার ব্যাপারে কোনো অস্বস্তি অনুভব না করি। শোনামাত্র সব স্টুডেন্ট ঝাঁপিয়ে পড়ল সেগুলোর উপর। আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। শিক্ষকদের সাথে বসে কখনো খাওয়া দাওয়া করিনি। সবাই খাওয়া শুরু করলেও আমি পারিনি। কিন্তু সবাই যে হারে মজা করে খাচ্ছে, দেখে লোভ লাগল। হালকা সাইডে চেপে একটা কেক নিলাম। অনেকে কফিও ঢেলে নিচ্ছে। কিন্তু কফি নেওয়ার মত সাহস আমার হল না। কেক খাওয়া গেলেও কফির মগে চুমুক দেওয়াটা অভদ্রতা হবে বলে মনে হচ্ছে। অদ্ভুত ফ্যালাসি।

আধা ঘণ্টার মধ্যে ওরিয়েন্টেশন শেষ। রুম থেকে বের হয়ে গেলাম প্রফেসর রাবিয়ার অফিসে। উনি গ্র্যাজুয়েট অ্যাসিস্টেন্টদের ট্র্যাক করেন। উনার সাথে ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত হওয়া দরকার। ভিনদেশী হিসেবে আমি একটু নাজুক পরিস্থিতিতে আছি। অনেক কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। উনি আমাকে পথ নির্দেশনা দিতে পারবেন। তাছাড়া জিএ হিসেবে আমার দায়িত্ব নিয়েও কিছু দ্বিধা আছে। মিটিং থেকে সবকিছু স্পষ্ট হয়নি। মিটিংয়ে যখন জিজ্ঞেস করা হল আমাদের কোনো প্রশ্ন আছে কিনা, তখন অস্বস্তির চোটে প্রশ্ন করতে পারিনি। এখন ওয়ান-টু-ওয়ান কথা বলব। উনার সাথে কথা বলার সময় ধরা পড়ল আমি এখনো ক্লাসের জন্য রেজিস্ট্রেশন করিনি। রেজিস্ট্রেশনের ডেডলাইন পরদিন কারণ ক্লাস শুরু হবে আর তিনদিন পর। অবস্থা দেখে আমার মাথায় ছোটখাট এবং প্রফেসরের মাথায় ডাবল ডোজের বাজ পড়ল। এখানে যে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়, জানতাম না। ডিজিটাল বাংলাদেশে যখন অনার্স, মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছি, স্বয়ংক্রিয়ভাবে রেজিস্টার্ড হয়ে গিয়েছিলাম বিভিন্ন ক্লাসে। অথচ এদেশে যার যার ক্লাসের রেজিস্ট্রেশন তাকে তাকে করতে হয়। নামের আগে ডিজিটাল না থাকায় বোধহয় এই অবস্থা। দেশে আমাদের একটা নির্দিষ্ট শ্রেণীকক্ষ দেওয়া হয়েছিল আর ডিপার্টমেন্টের নোটিশ বোর্ডে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল ক্লাস রুটিন। অথচ এদেশে একেকটা ক্লাস একেক রুমে, কিছু ক্লাস আবার রুম নয়, ডাইরেক্ট অনলাইনে নেওয়া হয়। প্রফেসর বললেন যে করেই হোক, আজকে রাতের মধ্যেই রেজিস্ট্রেশন করে ফেলতে। দেখিয়ে দিলেন ভার্সিটির ওয়েবসাইটের কোন অংশে গিয়ে কী করতে হবে। ল্যাপটপ নিয়ে যাইনি বলে সাথে সাথে রেজিস্ট্রেশন করা সম্ভব হল না। বাসায় এসে রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে দেখি তিনটা কোর্সের মধ্যে একটায় আসন সংখ্যা পূর্ণ হয়ে গেছে বলে আমাকে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। জানালাম অনুষদে। অনুষদের প্রশাসনিক সহকারী লিন্ডা বেন্সন বললেন, তিনি ব্যাপারটা দেখছেন। অতি দ্রুতই ফিরে আসবেন আমার কাছে। একদিন চলে গেল, উনি এলেন না। ডেডলাইন শেষ হয়ে গেলে রেজিস্ট্রেশনের কী হবে, বুঝছি না। যা হোক, দুইদিনের মাথায় উনি ইমেইল দিয়ে জানালেন, ঝামেলা দূর হয়েছে, আমি যেন দ্রুত রেজিস্ট্রেশন করে ফেলি। সাথে সাথে রেজিস্ট্রেশন করে ঝাড়া হাত পা হয়ে গেলাম।

আজ গেলাম গ্র্যাজুয়েট অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে আমার প্রথম অ্যাসাইনমেন্টে। আমাদের ডিপার্টমেন্ট যেহেতু ‘পুষ্টি ও পথ্য’ ডিপার্টমেন্ট, তাই পুরো ভার্সিটি জুড়ে আমরা খাদ্য সম্পর্কিত অনেকগুলো কার্যক্রম চালিয়ে থাকি। দুইটা ক্যাফেটেরিয়া, একটা বাগান, একটা কিচেন ইত্যাদি। জিএ হিসেবে আমাকে তিন জায়গায় কাজ করতে হবে। ক্যাফে, বাগান আর কিচেনে। আজ প্রথম কাজ বাগানে। আন্ডারগ্র্যাজুয়েটে নতুন ভর্তি হওয়া কিছু ছেলেমেয়ে (যাদেরকে Freshman বলে) বাগান পরিষ্কার করবে, গাছ লাগানোর বেড তৈরি করবে। আমিসহ আরও কয়েকজন গ্র্যাজুয়েট অ্যাসিস্ট্যান্ট ওদের গাইড হিসেবে দায়িত্ব পালন করব। আমি বাদে বাকি গ্র্যাজুয়েট অ্যাসিস্ট্যান্টরা পুরনো পাপী। তারা আগেও গার্ডেনিং করেছে। তাই গাইড হিসেবে ঝপাঝপ কাজে লেগে গেল। আমি গাইড হব কী? উল্টো ফ্রেশম্যানদের সাথে দলে ভিড়ে গেলাম। ওদের মত আপেল তুলতে লাগলাম। আমাদের এখানে দুটো বাগান। একটা হল আপেল বাগান যাকে বলে অর্চার্ড, আরেকটা সবজি বাগান। আমি প্রথমে সবজি বাগানে কাজ করতে গেলাম। এখানে ফ্রেশম্যানরা আলু বোখারার ক্ষেত থেকে আগাছা (এখানে বলে weed) তুলছে। আমিও আগাছা তুলতে লাগলাম। হঠাৎ দেখি আগাছার শিকড়ের সাথে একটা কেঁচোও উঠে এসেছে। ইয়া বড় নাদুস নুদুস কেঁচো। যেকোনো worm জাতীয় প্রাণী আমাকে প্রচণ্ড আতংকিত করে। কেঁচো দেখে স্থান, কাল, পাত্র ভুলে আমি চিৎকার দিয়ে উঠলাম। হাত থেকে ছিটকে ফেললাম আগাছাটা। আমার পাশে মলি বসা। সে আমার প্রতিক্রিয়া দেখে যারপরনাই বিস্মিত। তার ভাষায়, এত সুন্দর কেঁচো দেখে আমি ভয় পেলাম কেন? এবার আমি বিস্মিত। সুন্দর কেঁচো? ফাজলেমি করে নাকি? আতংক গিলে বললাম, এসব জিনিস আমি প্রচণ্ড ভয় পাই। আমার কথা শুনে মলি একটা কাঠি দিয়ে কেঁচোটাকে ছাড়িয়ে আবার মাটিতে ফিরিয়ে দিল। বলল সে ছোটবেলা থেকে গার্ডেনিং করে অভ্যস্ত। কেঁচো, ছ্যাংগা ইত্যাদি তাকে মুগ্ধ করে। বলে কী? কিছুক্ষণ পর ধাতস্থ হলাম। কেঁচো যাকে মুগ্ধ করে, সে মুগ্ধ করল আমাকে।

সবজি বাগান থেকে আমি চলে এলাম আপেল বাগানে। কেঁচো নিয়ে কারবার আমার পক্ষে সম্ভব নয়। অন্তত যতদিন ভয় না ভাঙছে। আপেল বাগানে এসে দেখি অদ্ভুত দৃশ্য। অগণিত আপেল পেকে গাছে ঝুলছে, অনেক আপেল মাটিতে পড়ে আছে। গাছে আর মাটিতে থাকা প্রচুর আপেল পচে গেছে, খাওয়ার কেউ নেই। বাগানের ইনচার্জ একজন ষাটোর্ধ বুড়ি। নাম ম্যারেলিন ক্ল্যাগেট। উনি বারবার বলছেন “যত পার, খাও”। কিন্তু কারো মধ্যে খাওয়ার ইচ্ছে দেখছি না। আমার বাসায় নিয়ে আসতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু আপেল কুড়িয়ে ব্যাগে ঢুকানোটা ভাল দেখাবে কিনা বুঝতে পারছি না। আমাদের কাজ হল আপেল গাছের ডালপালার সাথে জড়িয়ে জড়িয়ে যে পরগাছাগুলো বেড়ে উঠেছে, সেগুলো পরিষ্কার করা। শুনতে সহজ। ভেবেছিলাম করতেও সহজ হবে। কিন্তু পনেরো মিনিট যেতে না যেতেই হাঁপিয়ে গেলাম। ঘাসের উপর পা ছড়িয়ে বসে পড়লাম। ফ্রেশম্যানরা খুব আনন্দ নিয়ে পরগাছা উপড়াচ্ছে। কে যেন স্পিকারে গান শোনার ব্যবস্থা করেছে। গান বাজছে, সবাই কাজ করছে। পুরো বনভোজন টাইপ অবস্থা। কাজকে আনন্দদায়ক করে নিতে ওদের চেষ্টা দেখে ভাল লাগল। একটু পর কাজে ফিরলাম। আমি দশ মিনিটে যা করি, ওরা পাঁচ মিনিটে সেটা করে ফেলে। ওদের স্ট্যামিনার তুলনায় আমার স্ট্যামিনা দুধ ভাত। তার উপর বিচ্ছিরি রোদে মাথা ভনভন করছে। বারবার পানি খাচ্ছি কিন্তু তৃষ্ণা মিটছে না। আধা ঘণ্টা পর আবারও ছায়ায় বসলাম জিরানোর জন্য। কিছুক্ষণ জিরিয়ে আবার কাজে নামলাম। এবার উপড়ে ফেলা আগাছা সংগ্রহ করে ডাস্টবিনে ফেলে আসার পালা। ট্রলিতে আগাছা ভরতে ভরতে হাঁপিয়ে গেলাম। সেই ট্রলি ঠেলে ডাস্টবিন পর্যন্ত নিতে আমার অজ্ঞান হবার দশা, অথচ দুজন স্বেচ্ছাসেবী বুড়োবুড়ি অবলীলায় এই কাজ করে যাচ্ছেন। উনাদের দেখে যেখানে জিদের ঠ্যালায় আগাছা ফেলার ইচ্ছে চাগিয়ে উঠার কথা, সেখানে বরং ক্লান্ত লাগল। না পারতে ম্যারেলিনকে গিয়ে বললাম, আমার খুব অসুস্থ লাগছে, আমি চলে যেতে চাই। উনি বুঝতে পারলেন প্রথম দিন হিসেবে আমার অনভ্যস্ততার ব্যাপার। বললেন, কোনো সমস্যা নেই। তাড়াতাড়ি যেন সুস্থ হয়ে উঠি।

বিদায় নিয়ে আসার সময় দেখি, ছেলেমেয়েগুলো এখনও পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছে। বুঝলাম, ফিটনেস বাড়াতে হবে। এরকম মাখনওয়ালা শরীর নিয়ে আর যাই হোক, সেন্ট লুইসের উঁচুনিচু, ঢালু, খাড়া রাস্তায় চলাচল করা যাবে না। প্রতিদিন চড়াই উৎরাই পার হয়ে ভার্সিটিতে আসি। আসতে আসতে হাঁপরের মত বুক উঠানামা করে। ফিটনেস না বাড়ালে কবে জানি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করি। বাসায় আসার পথে আজ অন্য রাস্তা ধরলাম। সে রাস্তার পাশে অদ্ভুত এক ভাস্কর্য রাখা। অনেকক্ষণ দেখেও ভাস্কর্যের মাথামুণ্ডু বুঝলাম না। না ছেলে, না মেয়ে, না অন্য কোনো লিংগ। আধুনিক শিল্প সবসময় আমার মাথার উপর দিয়ে যায়। কিন্তু তাতে এসবের সৌন্দর্য ম্লান হয় না। পাবলো পিকাসোর আঁকা অনেক ছবি দেখে আমি মানে বুঝতে পারি না কিন্তু দেখতে ভাল লাগে। তেমনি ভাস্কর্যটা দেখতেও ভাল লাগছে। পাঠকদের জন্যও ছবি দিলাম। আর দিলাম ভার্সিটির সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য লাগানো গাছের ছবি। এই গাছে যে ফল ধরে, সেটা আমরা ভাতের সাথে চটকে খাই। এরা কি ব্যাপারটা জানে? নাকি এরা ভাবে মরিচ গাছ শুধু সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য? অনেক বাসার সামনে আমি কচুগাছও লাগিয়ে রাখতে দেখেছি সৌন্দর্যের অংশ হিসেবে। ইনারা কি জানেন, যে কচুগাছ এত যত্ন করে বড় করছেন সে গাছ আমাদের দেশে অবহেলায়, অনাদরে গজায় আর আমরা সেগুলো রান্না করে খেয়ে ফেলি?

পর্ব পাঁচ এখানে

Happy
Happy
100 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post যুক্তরাষ্ট্রে স্নাতকোত্তর জীবনের দুই বছর (পর্ব ৩)
Next post যুক্তরাষ্ট্রে স্নাতকোত্তর জীবনের দুই বছর (পর্ব ৫)