(১১)
আমাদের মাস্টার্স প্রোগ্রামে দুই ধরনের ট্র্যাক আছে, গবেষণার ট্র্যাক এবং গবেষণাহীন ট্র্যাক (একে বলে ক্যাপ্সটোন)। আমি গবেষণা ট্র্যাক বেছে নিয়েছি কারণ ভবিষ্যতে পিএইচডি করার ইচ্ছে আছে। স্টেটমেন্ট অফ পারপাসে তিনজন প্রফেসরের নাম উল্লেখ করেছিলাম যাদের সাথে আমি কাজ করতে চাই। সে অনুযায়ী ডঃ ফরেস্টার আমাকে তার গবেষণা সহকারী হিসেবে বেছে নিয়েছেন। মানে উনি আমার রিসার্চ সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করবেন। দুইদিন আগে উনি বললেন, “তোমার ফার্স্ট নেইম অনেক কঠিন। আমি তোমার লাস্ট নেইম ‘গস’ ধরে ডাকব।” বললাম, “তুমি আমাকে রুথ বলেও ডাকতে পার।” প্রফেসর দুই পাশে মাথা নাড়লেন। উনার স্মৃতিতে নাকি গস নামটা আটকে গেছে। লিন্ডা বেন্সন বললেন, “তুমি শুধু শুধু কঠিন একটা নাম ধরে ডাকতে চাচ্ছ। রুথ নামটা আমাদের পরিচিত। এটা বলে ডাকলে মেয়েটাও বুঝবে, আমাদেরও সহজ লাগবে। তোমার গস উচ্চারণ ও নাও বুঝতে পারে।” কিন্তু প্রফেসর অনড়। তিনি আমাকে গস বলেই ডাকবেন। তথাস্তু! আজ আবার প্রফেসরের মাথায় ক্যাড়া উঠল। উনি বললেন, “গুলি মার লাস্ট নেইমে। আমি তোমার ফার্স্ট নেইম ধরেই ডাকব। আমাকে উচ্চারণটা শিখিয়ে দাও। উচ্চারণ কি নিরহার? নাকি নিরজার?” কয়েকবার চেষ্টা করলাম নির্ঝর উচ্চারণ করাতে। চেষ্টা শেষে প্রফেসর বললেন, “ওকে গস! বল, তোমার রিসার্চ ইন্টারেস্ট কী?”
নির্ঝর রুথ ঘোষ নামটা নিয়ে কম ভোগান্তিতে পড়িনি। একবার ভিসা ইন্টার্ভিউ দেওয়ার জন্য ইতালিয়ান অ্যাম্বাসির গেটে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছি, গার্ড সিরিয়াল ধরে ডেকে ভেতরে ঢুকাচ্ছে। আমি লাইনের প্রথম দিককার একজন। আমার আগেরজন চলে গিয়ে পরেরজনও ভেতরে ঢুকলেন, আমার নাম আর ডাকে না। পরেরজনের পরেরজন যখন ঢুকলেন, আমি বিস্মিত হলাম। গার্ডের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম আমার নাম কেন ডাকা হচ্ছে না। উনি হাতে ধরে রাখা তালিকায় চোখ বুলাতে বুলাতে বললেন, ‘আপনার নাম কী?’ বললাম। উনি সিরিয়ালে বের করে বললেন, ‘এতক্ষণ যে রিদ্গিয়াস রিদ্গিয়াস বলে আপনাকে ডাকছিলাম, আপনি তো সাড়া দিলেন না।’ দুঃখে চোখে পানি চলে এল। রুথ ঘোষ থেকে রিদ্গিয়াস? এই নাম বুঝার সামর্থ্য শার্লকেরও নেই।
আমেরিকায় আসার পর থেকে যে কাজটা আমি আর প্রিন্স নিষ্ঠার সাথে করে চলেছি, সেটা হল বাসা দেখা। ভেবেছিলাম সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে পেয়ে যাব, কিন্তু কিছুতেই পাচ্ছি না। সারাদিন নেট ঘেঁটে পছন্দসই বাসা খুঁজি। ভাড়া আর অন্যান্য সুবিধা পছন্দ হলে ওয়েবসাইটে দেওয়া নাম্বারে কল করি। অনেক সময় কেউ ধরে, অনেক সময় ধরে না। যারা ধরে তারা যদি বলে বাসা ঘুরিয়ে দেখাবে, তাহলে সে বাসা শর্টলিস্টে ঢুকাই। এভাবে দুইদিন পরপর বাসা দেখতে বের হই। আমরা বাসা দেখি সাউথ ক্যাম্পাসের আশেপাশে। সেখানে বাসা বেশ সস্তা। নর্থ ক্যাম্পাসটা বড়লোকদের এলাকায় অবস্থিত। আমার মত ছাপোষা স্টুডেন্টের জন্য এখানকার বাসা ভাড়া অনেক বেশি। বড় বাসা শেয়ার করে থাকলে ভাড়া ভাগ হয়ে যাবে ঠিকই, কিন্তু এখনো পর্যন্ত এই পরিকল্পনা করিনি। জামাই-বউ মিলে বাসা শেয়ার করে থাকাটা খুব একটা আমোদের না। কিন্তু বাসা যদি একান্তই না পাই, তাহলে শেয়ারের দিকে যাব। এর মধ্যে একদিন ছয়শ ডলারে বড় বাসার বিজ্ঞাপন দেখে চেরোকি স্ট্রিটে গেলাম সেটা দেখতে। আফ্রিকান আমেরিকানদের পাড়া। পুরানো বাসাবাড়ি দিয়ে ভর্তি। সেগুলোর জায়গায় জায়গায় ভাঙা, রংচটা। কিন্তু আমরা যে বাসা দেখতে গিয়েছি, সেটা অপূর্ব। সংস্কার করেছে সম্প্রতি। আমরা বাসে করে অর্ধেক পথ এসে বাকি অর্ধেক হেঁটে এসেছি। আসতে আসতে চিন্তা করছিলাম এত ভেতরের দিকে বাসা নেওয়া ঠিক হবে কিনা। একে তো ব্ল্যাকদের পাড়া, তার উপর নীরব সুনসান। আমাদের গাড়ি নেই। সাইকেলে করে বা পায়ে হেঁটে যাতায়াত। রাতের বেলা চলাফেরা করা নিরাপদ হবে তো? ব্ল্যাকদেরকে কেন অনিরাপদ বলছি সেটা ধীরে ধীরে প্রকাশ পাবে। ওদের নিয়ে অনেক গল্প জমা হয়েছে ঝুড়িতে। কিন্তু সব ব্ল্যাকই যে উগ্র, এমন নয়। সরলীকরণ করা আমার ধাতে নেই। আমি ভাল এবং খারাপ দুই ধরনের ব্ল্যাকই দেখেছি। আর শুনেছি অন্যদের অভিজ্ঞতার কথা। দুইয়ে মিলে একটু আতংক কাজ করে আর কি!
যার সাথে ফোনে কথা হয়েছিল, তার নাম এরিক। সে এই প্রপার্টিজের কিছু একটা হবে। বাসার বাইরে দাঁড়িয়ে এরিকের জন্য অপেক্ষা করছি। দুপুর তিনটায় আমাদের সাক্ষাৎ করার কথা। হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছি, ঠিক তিনটায় একজন থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরা তরুণ এসে জিজ্ঞেস করল আমরা এপার্টমেন্ট দেখতে এসেছি কিনা। তরুণটি এসেছে স্পোর্টস কারে করে। খুবই সুদর্শন। হ্যাঁ বলতেই আমাদের পথ দেখিয়ে ভেতরে নিয়ে গেল। বাইরে থেকে দেখে এটাকে একটা এপার্টমেন্ট মনে হলেও আদতে এটা মাল্টিপল এপার্টমেন্ট। করিডরের একদম শেষ মাথার ফ্ল্যাটটা খালি আছে। সেটায় ঢুকে আমার চক্ষু চড়কগাছ। বিশাল লিভিংরুম, সুন্দর বেডরুম, দুটো বাথরুম, বড় রান্নাঘর, বেশ কয়েকটা ক্লজেট। এত বড় বাসা মাত্র ছয়শ ডলারে? নাকি শুভংকরের ফাঁকি আছে? বিভিন্নভাবে জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত হলাম ছয়শ ডলারই ভাড়া। গ্যাস আর বিদ্যুৎ বিল আলাদা। খারাপের মধ্যে শুধু চুলাটা গ্যাসের। আমাদেরকে গ্যাস এবং বিদ্যুৎ, দুটোর জন্যই একাউন্ট খুলতে হবে। চুলা বিদ্যুৎ দিয়ে চললে শুধু বিদ্যুতের জন্য একাউন্ট খুললেই হত। সব দেখে শুনে এরিককে বললাম, আলহামদুল্লিলাহ কবুল। এরিক বলল মুখের কথায় চিঁড়ে ভিজবে না। পঞ্চাশ ডলার দিয়ে অ্যাপ্লিকেশন করতে হবে। আর যদি প্রিন্স কো-অ্যাপ্লিকেন্ট হয়, তাহলে তারও পঞ্চাশ ডলার দিয়ে অ্যাপ্লিকেশন করতে হবে। কো-অ্যাপ্লিকেন্ট মানে হচ্ছে যে বা যারা আপনার সাথে একই বাসায় উঠতে চাচ্ছে। যদি কোনো কারণে আমাদেরকে ভাড়া না দেওয়া হয়, তবে এই ডলার আমরা ফেরত পাব।
আমেরিকায় বাসা ভাড়া নেওয়ার প্রক্রিয়া বাংলাদেশের মত সহজ নয়। এখানে সম্ভাব্য ভাড়াটের অতীত ইতিহাস খুঁড়ে দেখা হয়। তার ক্রেডিট হিস্টোরি কেমন, আগে যে বাসায় ছিল তার কাহিনী কেমন, মাসিক বেতন কত সবই রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলো খুঁটিয়ে দেখে। বাছবিচারে আপনি পাশ করলে বাসা পাবেন, নাইলে খুদাপেজ। অবশ্য কিছু প্রপার্টি আছে যারা এসব দেখতে চায় না। তারা কতটা বিশ্বাসযোগ্য, আমি জানি না। পরে যেন ঝামেলা না হয় তাই এরিককে জানিয়ে রাখলাম আমরা স্টুডেন্ট। মাত্র আমেরিকায় এসেছি। ক্রেডিট হিস্টোরি ফিস্টোরি কিছু নেই। আগের বাসার ভাড়া ঠিকমত পরিশোধ করতাম কিনা সেটা জানার জন্য সে বাংলাদেশে ফোন করতে পারে। এরিক বলল সমস্যা হবে না। নতুন স্টুডেন্টদের বেলায় তারা ছাড় দেয়। শুনে খুশি মনে বাসায় ফিরে এলাম। এসেই সাথে সাথে ফি শোধ করে অ্যাপ্লিকেশন জমা দিলাম। এরিক বলেছিল আগামী এক সপ্তাহের ভেতর তারা একটা সিদ্ধান্ত জানাবে। কিন্তু দুইদিন পরই এরিকের কাছ থেকে টেক্সট পেলাম। অতীব দুঃখের সাথে সে জানাচ্ছে, বাসাটা আমাদেরকে দেওয়া হচ্ছে না। যে মহিলা আমাদের আগে আবেদন করেছিল, সে পাচ্ছে। ওই মহিলা অ্যাপ্লিকেশন করে কোথায় যেন হাওয়া হয়ে গিয়েছিল। তার সাথে যোগাযোগ করে কোনো উত্তর পাওয়া যাচ্ছিল না বলেই বাসাটা আবার ভাড়ার জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন মহিলা ফিরে এসেছে। আগাম ভাড়াও দিয়ে দিয়েছে। তাই আমাদেরকে ভাড়াটে হিসেবে বাদ দিতে হয়েছে। আমি খুব সহজে মানুষকে বিশ্বাস করি। তাই ধরে নিলাম এরিক সত্যি কথাই বলছে। যদি আমাদের উপর ভরসা না পেয়ে ভাড়া দিতে না চাইত, তাহলে সেটা সরাসরি বলার মত সাহস নিশ্চয় ওদের আছে?
চেরোকি স্ট্রিটের বাসাটা আমার এতই পছন্দ হয়েছিল যে, এরপর আর কোনো বাসাই মনে ধরছে না। সব ছোট লাগে আর মনে হয় আকারের তুলনায় ভাড়া বেশি। কিন্তু একটা কিছু তো ভাড়া নিতেই হবে। তাই কাছাকাছি ধরনের বাসা খুঁজতে লাগলাম। খুঁজতে খুঁজতে ফরেস্ট গ্রোভ নামের একটা রিয়েল এস্টেট এজেন্সির খোঁজ পেলাম। ওদের নাকি পুরো শহর জুড়ে অসংখ্য বাসা ছড়ানো। আমি আর প্রিন্স সকালের মিষ্টি রোদ মাথায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম এজেন্সির উদ্দেশ্যে। ছাতা নেওয়ার কথা একবারও মনে পড়ল না। বাসার থেকে জিপিএস দেখে এসেছি। জিপিএস অনুযায়ী বাসে যাওয়ার চেয়ে হেঁটে গেলেই সুবিধা বেশি। হাঁটা শুরু করলাম। নতুন রাস্তাঘাট, নতুন পাড়া। ভেবেছিলাম হাঁটতে ভাল লাগবে। কিন্তু হাঁটছি তো হাঁটছিই। সূর্য মিষ্টি থেকে তেতো হয়ে গেল, অফিস খুঁজে পাই না। একবার ডানে, একবার বায়ে করতে করতে ফ্যা ফ্যা করে হাঁপাচ্ছি। দুই ঘণ্টা ধরে হাঁটছি। মনে হচ্ছে আরেকটু হলে পানির অভাবে অজ্ঞান হয়ে যাব। এমন সময় চোখে পড়ল অফিসের সাইনবোর্ড। এক দৌড়ে হাজির হলাম অফিসের ভেতর। এয়ার কন্ডিশনার থেকে ঠাণ্ডা হাওয়া এসে শরীর জুড়িয়ে দিল। কিন্তু মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এখানে আসাটা ব্যর্থ হল। ম্যানেজার বললেন, তারা এখান থেকে বাসা ভাড়ার ব্যাপারটা ডিল করেন না। এর জন্য তাদের লোকাল অফিস আছে। আমাদের একটা চার্ট ধরিয়ে দিয়ে বললেন এখানে সব খালি বাসা আর সেসব বাসার জন্য কোন লোকাল অফিসে ফোন দিতে হবে, তার নাম্বার আছে। আমরা যেন এগুলোতে কল দিই। মেজাজ খারাপ করে অফিস থেকে বের হলাম। এই ঠা ঠা রোদে হেঁটে বাসায় ফিরতে হবে চিন্তা করে বমি পেল। খিদেও পেয়েছে প্রচুর। আশেপাশে কোনো রেস্তোরাঁ দেখছি না। খেতে হলেও মনে হয় হাঁটতে হবে অনেকদূর। প্রিন্স থমথমে মুখে ঘোষণা দিল সে এখন হাঁটতে পারবে না। দরকার পড়লে ফুটপাথে বসে থাকবে, জিরোবে, শরীরে শক্তি এলে তারপর রওনা দিবে। আমার যদিও ফুটপাথে বসতে ইচ্ছে করছে না, কিন্তু প্রিন্সের অবস্থা দেখে টুঁ শব্দ করলাম না।
এটা আবাসিক এলাকা। দেখেই বুঝা যাচ্ছে বড়লোকদের এলাকা। প্রতিটা বাড়ি সুন্দর, ঝকঝকে। সামনে পরিপাটি লন। লনে বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছ। বিশাল বিশাল গাছের ছায়া পড়েছে ফুটপাথের উপর। ছবির মত সুন্দর যাকে বলে। ফুটপাথের কোথায় বসা যায় ঠিক করতে করতে বেশ কিছুদূর হেঁটে ফেলেছি। একটা বাসার সামনে পিকাপ গাড়ি দাঁড়ানো। একজন মধ্যবয়স্ক আফ্রিকান আমেরিকান পুরুষ বাসাটির লন পরিষ্কার করছেন। উনাকেই দেখলাম একমাত্র ব্যক্তি যিনি বাইরে। বাকি সবাই হয় গাড়ির ভিতর, নয় বাসার। উনাকে জিজ্ঞেস করলাম এখান থেকে ওয়েস্টমিন্সটার যাওয়ার জন্য কোনো বাস সার্ভিস আছে কিনা। বললেন, এখান থেকে নেই। বাস পেতে হলে যেতে হবে আবাসিক এলাকার বাইরে, রাজপথে। আমি আর প্রিন্স এখন হাঁটা বাদে যেকোনো কাজ করতে রাজি। জিজ্ঞেস করলাম এখান থেকে ট্যাক্সি পাওয়া যাবে কিনা। উনি বললেন ট্যাক্সি পেতে হলে কল দিয়ে ডাকতে হবে। ওরা এমনিতে ঘুরে বেড়ায় না। কিন্তু আমাদের তো সিম কার্ড নেই, কীভাবে ডাকি? এরকম উদ্ভ্রান্ত অবস্থা দেখে উনার মায়া হল। জিজ্ঞেস করলেন উনি ডেকে দিবেন কিনা। প্রিন্স আর আমি হকচকিয়ে গেলাম। এরকম সাহায্য পাব আশা করিনি। আসার পর থেকে আফ্রিকান আমেরিকানদের ব্যাপারে অনেক ভয়ানক অভিজ্ঞতা শুনে ফেলেছি। কিন্তু দেশী ভাইদের বাইরে আমেরিকার প্রথম সাহায্য যে একজন আফ্রিকান আমেরিকানের কাছ থেকে আসবে, কল্পনা করিনি। কিছুটা ইতস্তত করে সম্মতি দিলাম। উনি ট্যাক্সি কোম্পানিকে কল করে বাসার ঠিকানা দিলেন। বললেন দুইজন যাত্রী বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। তারপর আমাদের বললেন ট্যাক্সি আসতে পনেরো, বিশ মিনিট লাগবে। ততক্ষণ উনি থাকতে পারবেন না। এখানে উনার কাজ শেষ, চলে যাবেন। আমরা ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিদায় দিলাম লোকটাকে।
পনেরো মিনিট যায়, ত্রিশ মিনিট যায়, ট্যাক্সি আর আসে না। কী করি? অপেক্ষা করতে ভাল লাগছে না। এরচেয়ে বাসার দিকে হাঁটা ধরলে অনেকখানি এগিয়ে যাব। ভাবনা অনুযায়ী দুজন হাঁটতে শুরু করলাম। হাঁটতে হাঁটতে হারিয়ে গেলাম। কোথা থেকে কোথায় এসেছি, বুঝতে পারছি না। এজেন্সিতে যাওয়ার সময় এই পার্ক পড়েনি। এখন কোত্থেকে এল? হায়! পথ না হারিয়েই দুই ঘণ্টা হেঁটেছি। পথ হারিয়ে এখন কত ঘণ্টা হাঁটব? প্রিন্স রেগে কাঁই হয়ে গেল। ওর পা আর কোমর খুব ব্যথা করছে। হাঁটতে পারছে না খুব একটা। বললাম পার্কের বেঞ্চিতে বসে বিশ্রাম নিতে। ব্যথা ভাল হলে ফের হাঁটব। কিন্তু সেটাতেও সে রাজি নয়। ব্যথার চোটে কী করবে বুঝতে পারছে না। দ্রুত বাসায় গিয়ে ওষুধ খেলে মেজাজ ভাল হবে। কিন্তু বাসায় দ্রুত পৌঁছানোর কায়দা খুঁজে পাচ্ছি না। পার্কের একপাশে রাজপথ। ইন্টারস্টেট হাইওয়ে। সেখানে ফুটপাথ নেই। পার্ক থেকে বের হয়ে রাজপথে উঠার কোনো রাস্তা আছে কিনা বুঝতে চেষ্টা করছি। এমন সময় চোখে পড়ল একজন মহিলা পর্বত সমান কুকুর নিয়ে পার্কের ভেতর হাঁটছেন। একটু পর দেখি একটা চিপা দিয়ে উনি পার্ক থেকে বের হয়ে গেলেন। আমরাও মহিলাকে অনুসরণ করলাম। চিপা দিয়ে বের হলাম পার্ক থেকে। বের হয়ে পড়লাম বিশাল এক দালানের সামনে। জনমনিষ্যিহীন দালানটা দেখতে একহারা, প্রাচীন আর রহস্যময়। আমার মনে হল এখানে আমাদের ঢুকিয়ে নানারকম এক্সপেরিমেন্ট চালাবে। প্রিন্সকে বলতেই সে হেসে পাগলপারা। আমি থ্রিলার মুভি দেখে খুব বেশি প্রভাবিত হই বলে ঘোষণা দিল। দ্রুত পা চালিয়ে দালানটা পার হয়ে ফুটপাথে নেমে স্বস্তি পেলাম। এখন রাস্তা চিনতে পারছি। এই ফুটপাথ ধরে এজেন্সিতে গিয়েছিলাম। এটা ধরেই বাসায় যাওয়া যাবে।
(১২)
গতকাল ফরহাদ মেসেঞ্জারে নক দিয়ে বলল, আমি যে মডেলের ল্যাপটপ কিনেছি (এইসার নাইট্রো ফাইভ), সে মডেলে এখন একশ ডলার ছাড় দিচ্ছে। ল্যাপটপ কিনেছি মাত্র চারদিন হল, এর মধ্যে এই খবর। মাথায় ছোটখাট বিস্ফোরণ হল। আমি কি একশ ডলার ধরা খেয়ে গেলাম? চারদিন পর কিনলে দেখা যাচ্ছে ছাড়ে কিনতে পারতাম! কিন্তু ফরহাদের পরের মেসেজ পড়ে উত্তেজনায় দাঁড়িয়ে গেলাম। কেনা ল্যাপটপ ফিরিয়ে দিয়ে আমি নাকি ছাড়সহ নতুন ল্যাপটপ কিনতে পারব! এও সম্ভব? ফরহাদ নিশ্চিত করল, হ্যাঁ সম্ভব। এমনি এমনি তো দেশটার নাম ‘সব সম্ভবের দেশ’ হয়নি। এখানে বেশিরভাগ দোকানে ক্রয়কৃত পণ্য ফেরত দেওয়ার সুবিধা আছে। দোকান ভেদে ফেরত দেওয়ার সময় কম বেশি হতে পারে, কিন্তু ফেরত দিতে পারবেন। এটা আমেরিকার কাস্টোমার কেয়ারের খুব সুন্দর একটা দিক। আমার খুব পছন্দ হয়েছে। জিনিসপাতি কেনার পর যদি ব্যবহার করে শান্তি না পান, যদি কেনার সময় ভাল লেগেছে বলে কিনেছেন কিন্তু বাসায় আনার পর ভাল লাগছে না, যদি মনে হয় জিনিসটার আদৌ দরকার নেই, তাহলে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে রিসিট-সহ দোকানে গেলে তারা ফেরত নেবে। অনেক দোকানে রিসিটও লাগে না, যেমন ওয়ালমার্ট। পণ্য ফেরত নিয়ে তারা আপনাকে ডলার ফেরত দেবে। যদি কেনা জিনিসপাতি নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে আপনি নষ্টটা ফেরত দিয়ে নতুন আরেকটা নিয়ে আসতে পারবেন। নতুন না চাইলে ডলার নিয়ে আসবেন। ধরুন, আপনি একটা কফি মেকার কিনলেন ওয়ালমার্ট থেকে। ওয়ালমার্টের ফেরত দেওয়ার নীতি অনুযায়ী, আপনি পণ্য কেনার তিন মাসের ভেতর সেটা ফেরত দিতে পারবেন। তিন মাস পার হয়ে গেলে ওরা আর ফেরত নেবে না। তো দুই মাস পর আপনার কফি মেকার গেল নষ্ট হয়ে বা আপনার আরেক ব্র্যান্ডের কফি মেকার পছন্দ হল। আপনি এটা ফেরত দিয়ে ওইটা কিনতে চান। কী করবেন? রিসিট থাকলে সেটা আর কফি মেকার নিয়ে চলে যান ওয়ালমার্টের কাস্টোমার কেয়ারে, রিসিট না থাকলে শুধু কফি মেকার। জিনিস ফেরত দিয়ে ডলার নিয়ে আসুন (ক্যাশ অথবা কার্ডে) । সেই ডলার দিয়ে আপনার ইচ্ছেমত কফি মেকার কিনুন। ইচ্ছে না থাকলে ডলার নিয়ে চলে আসুন।
মজার ব্যাপার হল, এই রিটার্ন অ্যান্ড রিফান্ড পলিসি কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতা নয়। ইচ্ছে হলে আপনি আপনার দোকানে এ সুবিধা রাখতে পারেন, ইচ্ছে না হলে রাখবেন না। কিন্তু আমি এ পর্যন্ত যতগুলো দোকানে গিয়েছি, সবাই এই সুবিধা দিয়ে রেখেছে। কোম্পানিগুলো ক্রেতাদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার জন্য এ সুবিধাটা দিয়ে থাকে। যেহেতু এটা একটা প্র্যাকটিসে দাঁড়িয়ে গেছে তাই মোটামুটি সব দোকানই এই সুবিধা দেয়। না দিলে হয়ত সে দোকানে ক্রেতাই যাবে না। আরেকটা ব্যাপার হল, অনেক পণ্য আছে যেগুলো ব্যবহার করে ফেললে ফেরত দেওয়া সম্ভব নয়। যেমন জুতা, কস্মেটিক্স, বিছানার চাদর, বালিশ ইত্যাদি। এগুলো আপনি ব্যবহার করলে যেহেতু অন্য কারো কাছে বেচা সম্ভব নয়, তাই দোকানও ফেরত নেবে না।
বেস্ট বায় পনেরো দিন সময় দেয় পণ্য ফেরত দেওয়ার জন্য। আমাদের ইতোমধ্যে চারদিন পার হয়ে গেছে। তাই ফরহাদের কাছ থেকে পরামর্শ পাওয়ার দুইদিনের মাথায় শাওন ভাইকে নিয়ে চলে গেলাম বেস্ট বায়ে। যেহেতু ল্যাপটপটা উনার ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কেনা, সেহেতু উনাকেই এটা ফেরত দিতে হবে। দোকানে পৌঁছে শাওন ভাই ল্যাপটপ ফেরত দিতে গেলেন, আর আমরা দুজন ল্যাপটপ দেখা শুরু করলাম। ওই তো! আমার মডেলটায় পাক্কা একশ ডলারের ছাড় দেখা যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর শাওন ভাই টেক্সট দিয়ে জানালেন ল্যাপটপ ফেরত দেওয়ার ঝামেলা শেষ, ডলারও পেয়ে গেছেন। টেক্সট দেখে আমরা সেলস একাউন্টে গেলাম। বললাম এইসার নাইট্রো ফাইভ কিনতে চাই। সেলসম্যান বললেন এই মডেল শেষ হয়ে গেছে। ছাড় চলছে বলে মানুষজন ধুমসে কিনেছে। শুনে আমার ছোটখাট আর প্রিন্সের বড়সড় হার্ট এটাক হল। ল্যাপটপটা প্রিন্সের ভীষণ পছন্দের। এ দামের মধ্যে আর কোনো ব্র্যান্ডই এত ধরনের স্পেসিফিকেশন-সহ ল্যাপটপ দিচ্ছে না। আমাদের চেহারা দেখে সেলসম্যান সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, ঘাবড়ানোর কিছু নেই। আমরা অর্ডার দিয়ে গেলে তারা হোম ডেলিভারি দেবে। চাইলে আমরা এসেও নিয়ে যেতে পারব। তবে হোম ডেলিভারিতে ট্যাক্স একটু কম আসবে। শুনে চমকিত হলাম। বলে কী? কষ্ট করে হোম ডেলিভারি দেবে, আবার ট্যাক্সও কম কাটবে? এ তো ডাবল সোনায় সোহাগা! দ্রুত অর্ডার দিয়ে, পেমেন্ট করে খুশি মনে বাসায় ফিরে এলাম। এবারও শাওন ভাইয়ের কার্ড ব্যবহার করতে হল।
ল্যাপটপ পৌঁছানোর কথা তিনদিন পর। এল না। চারদিন পার হল, এল না। চিন্তায় পড়লাম। এখানে বাসার বাইরে, সিঁড়ির গোঁড়ায় প্যাকেজ পড়ে থাকে, কেউ চুরি করে না। পাড়া ঘুরতে গিয়ে অন্তত তিনটা বাসার বারান্দায় বড় বড় প্যাকেট পড়ে থাকতে দেখেছি। আমেরিকার মানুষজন কীভাবে এত বিশ্বাস করে অন্যকে, বুঝি না। একটা বারান্দায় দেখেছিলাম টিভির প্যাকেট পড়ে আছে। ইচ্ছে করছিল আমিই সেটা নিয়ে আসি। সে হিসেবে আমাদের ল্যাপটপও চুরি হওয়ার কথা না। তার উপর আমাদের এপার্টমেন্টে অর্ডার করা জিনিসপাতি এলে সেগুলো সিঁড়ির গোঁড়ায় না রেখে ভেতরের করিডোরে রেখে যায়। ফলে চুরির সম্ভাবনা শুন্যের কাছাকাছি। তাহলে হল কী? বিকেলে শাওন ভাই এসে জিজ্ঞেস করলেন দুপুরের দিকে আমরা দরজায় কোনো নক শুনেছি কিনা। উনার মোবাইলে মেসেজ এসেছে, হোম ডেলিভারি দেওয়ার জন্য লোক এসেছিল কিন্তু নক করে কাউকে পায়নি বলে চলে গেছে। যেহেতু ক্রেতা হিসেবে শাওন ভাই রেজিস্টার্ড হয়েছেন, তাই যোগাযোগ করার জন্য উনার মোবাইলে টেক্সট পাঠিয়েছে। এই কথা শুনে আমাদের মাথায় হাত। দুজনেই বাসায় বসা, কেউই শুনিনি নক। এরা কি এতই ভদ্র নাকি যে শুধু নক করে চলে গেল? গলা উঁচিয়ে একটু ডাকতেও পারল না? হোম ডেলিভারি দেওয়ার জন্য যে লোক এসেছিল, সে আমাদের না পেয়ে ল্যাপটপের প্যাকেট জমা দিয়ে গেছে মেট্রো পিসিএস-এর দোকানে। মেট্রো পিসিএস হল বাংলালিংক, গ্রামীণের মত একটা আমেরিকান মোবাইল কোম্পানি। বাসা থেকে দুই ব্লক হাঁটলেই দোকানটা। কাছে পিঠে এটাই ভরসাযোগ্য জায়গা পেয়ে মনে হয় লোকটা এই কাজ করেছে। প্রিন্স বা আমি এই দোকান চিনি না বলে শাওন ভাই প্রিন্সকে চিনিয়ে নিয়ে গেলেন। মোবাইলের টেক্সট দেখিয়ে ল্যাপটপ ছাড়িয়ে নিয়ে আসলেন। ল্যাপটপের প্যাকেট খোলার সময় প্রিন্স আনবক্সিং ভিডিও বানাল। বেশ একটা স্মৃতি হয়ে রইল।
এরপরের দিন শনিবার। শাওন ভাই আজ ফ্রি আছেন। উনাকে নিয়ে টুকটাক কেনাকাটার জন্য বেরিয়ে পড়লাম। নতুন বাসার জন্য আমাদের থালা, বাটি, খুন্তি (এখানে বলে স্প্যাচুলা। এগুলো দেশের মত ধাতব নয়, প্লাস্টিকের), তরকারির চামচ ইত্যাদি কিনতে হবে। ভাইকে বললাম ডলার ট্রিতে যাব। দেশে থাকতে তানজিলা আফরিন আপু বলে দিয়েছিলেন ওখানে সবকিছুর দাম এক ডলার। যদি এক ডলারে এসব পাই, কেন নয়? যে উবারে করে ডলার ট্রিতে গেলাম, সে উবার চালক ছিল আফ্রিকান আমেরিকান। উবারে ঢুকার সাথে সাথে ভক করে একটা গন্ধ নাকে এল। এত দমবন্ধ করা বাজে গন্ধ যে শ্বাস নিতে বেগ পেতে হচ্ছে। তার উপর স্পিডব্রেকারের তোয়াক্কা না করে সে ধমাধম গাড়ি টান দিচ্ছে। জান হাতে নিয়ে বসে আছি আমরা। কখন গন্তব্যে পৌঁছাব সে আশায় দিন গুনতে লাগলাম। প্রায় বিশ মিনিট পর ডলার ট্রির সামনে এসে থামল চালক। আমি, প্রিন্স আর শাওন ভাই পড়িমরি করে বের হয়ে এলাম। তিনজনেই অসুস্থ বোধ করছি। শাওন ভাই আর প্রিন্সের অভিমত, ব্যাটা গাঞ্জা খেয়ে বেড়িয়েছে। এরা, মানে আফ্রিকান আমেরিকানরা, যেখানে সেখানে বসে গাঞ্জা খেয়ে নেয়। এদের তো আর কল্কে লাগে না। সিগারেটের মত কাগজের নল থেকে টান দেয়। এদের সাথে বাসে উঠলেও মাঝে মাঝে আমি তীব্র গন্ধ পাই। সেটা গাঁজার হোক আর মাস তিনেক স্নান না করার ফলে গায়ের ময়লা থেকে হোক।
ওয়ালমার্ট থেকে সসপ্যান, ফ্রাইপ্যান, রাইস কুকার, টেবিল চামচ, কাঁটা চামচ, চা চামচের সেট কিনে ফেলেছি। তাই ডলার ট্রিতে এসে যখন চামচ দেখলাম একটু আফসোস হল। যাই কিনি, সেগুলোর দাম খালি ৮০ দিয়ে গুণ করে ফেলি। দেশে থাকা অবস্থায় এই ব্যাপার নিয়ে অনেক ভুক্তভোগী আমাদের সাবধান করে দিয়েছিলেন। মাথা থেকে এই ভূত নামাতে না পারলে আমেরিকায় টেকা যাবে না। আশি দিয়ে গুণ দিলে কিছু কিনতে পারব না, খেতে পারব না, বাসে চড়তে পারব না, মানসিক শান্তি পাব না, রাতে ঘুম হবে না। তাই মনে রাখতে হবে, যস্মিন দেশে যদাচার। ডলারের দেশে এসে ডলারেই হিসেব করতে হবে। কিন্তু মধ্যবিত্ত বাঙালি বলে কথা। এখন পর্যন্ত এমন কোনো বাঙালি দেখিনি, যারা এই সমস্যায় ভোগেনি। সুখের কথা, তারা উৎরেও গেছেন এই সমস্যা। আমিও অপেক্ষা করছি সেই মাহেন্দ্রক্ষণের। অপেক্ষা করতে করতে ত্রিশ ডলার দিয়ে অনেক কিছু কিনে ফেললাম। যাই কিনি, এক ডলার। সস্তা বলে যাই দেখি, তাই ভাল লাগে। মনে হচ্ছে সব কিনে ফেলি। এই দোকানের ব্যাপার স্যাপার ছোটবেলায় দেখা দুই টাকার দোকানের মত। যখন আমি তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি, তখন আমাদের মফস্বল এলাকায় নতুন ধরনের হকারের আনাগোনা শুরু হল। তারা দুই টাকায় হাঁড়িপাতিল বিক্রি করে। ছোট ছোট হাঁড়িপাতিল, ছেলেমেয়েদের খেলনা হিসেবে চালানো যায়। মা একটা হাঁড়ি আর একটা কড়াই কিনে আনলেন। উনার নাকি খুব মনে ধরেছে এরকম বনসাই আকৃতি। দেখে আমি আর অঝর বায়না ধরলাম আমরাও কিনব। অনেক কষ্ট করে দশটা টাকা বাগিয়ে আমরা ছুটলাম হকারের কাছে। কিন্তু সে এত ধরনের জিনিস নিয়ে বসে আছে যে, দশ টাকা দিয়ে কিছুই কেনা যাবে না। অনেক বাছাবছি করে মনে হয় বালতি, সসপ্যান, চামচ কিনেছিলাম। বাসায় এনে সেগুলোতে সত্যি সত্যি রান্নাও করেছিলাম। জ্যাঠাত দিদি সজল তখন বেড়াতে এসেছিল। সে ইন্টারমিডিয়েতে পড়ত। আমাদেরকে ছোট্ট হাঁড়িতে খিচুড়ি রান্না করে খাইয়েছিল। কেউ এক চামচের বেশি খেতে পারেনি। সেই চামচও দুই টাকা দিয়ে কেনা ছোট্ট চামচ। তবুও সবার কী উত্তেজনা!
পর্ব ছয় এখানে