2 0
Read Time19 Minute, 31 Second

পর্ব এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ, ছয়, সাত

বিমানবন্দরে ঢুকার পর কিউকে বললাম ‘চল, ডেল্টা এয়ারলাইন্সের বুথ থেকে বোর্ডিংপাস প্রিন্ট করে আনি।’
গত দুইদিনে কিউ বুঝে গেছে আমি আমেরিকার অনেক কিছুর সাথে পরিচিত নই, প্রযুক্তির ব্যাপারেও সচেতন নই। আমার কাণ্ডে তাই ও অবাক হওয়া ছেড়ে দিয়েছে। এবারও স্বাভাবিক চেহারায় বলল, ওর মোবাইলে বোর্ডিংপাস আছে। প্রিন্ট করার দরকার নেই।
অ্যাঁ!
আমার বিস্ময় দেখে কিউ দেখাল কীভাবে আমিও মোবাইলে বোর্ডিংপাস নামিয়ে নিতে পারি। এজন্য প্রথমে ডেল্টা এয়ারলাইন্সের অ্যাপ নামাতে হবে। নামিয়ে সেখানে চেক ইন করতে হবে। তারপর ফ্লাইটের কনফার্মেশন নাম্বার দিতে হবে। আপনি যখন অনলাইনে টিকেট খরিদ করবেন, তখন আপনার ইমেইলে ই-টিকেট পাঠানো হবে। সেই টিকেটে এই নাম্বার লেখা থাকে। নাম্বার দেওয়ার পর আপনি ট্রিপটা এক্সেস করে বোর্ডিংপাস দেখতে পারবেন। সাধারণত যারা মোবাইলে বোর্ডিংপাস এক্সেস করে, তারা একদিন আগেই চেক-ইন করে ফেলে। অনলাইনে চেক-ইন করলে বিমানবন্দরে এসে বোর্ডিংপাস নেওয়ার ঝামেলা থাকে না। আগেভাগে আসনও পছন্দ করে রাখা যায়। তবে সবসময় এই সুযোগ থাকে না। আপনি ফার্স্ট ক্লাস নাকি মেইন কেবিন নাকি বেসিক ইকোনমি, কোন শ্রেণীতে ভ্রমণ করছেন সেটা একটা ব্যাপার। বেসিক ইকোনমির জন্য এই সুযোগ থাকে না বললেই চলে। জানেনই তো, গরীবের জন্য দুনিয়া কঠিন কারণ ‘ঈশ্বর থাকেন ওই ভদ্র পল্লীতে, এখানে তাহাকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না।’

কিউকে বিশাল একখান ধন্যবাদ দিলাম। বুঝলাম, সেন্ট লুইস বিমানবন্দরে সবাই এটাই করছিল। অফিসারকে মোবাইলের পর্দায় এটাই দেখাচ্ছিল। এবার আমিও অফিসারের চোখের সামনে মোবাইল ধরব, কাগজের টুকরো নয়। বেশ পরিবেশবান্ধব ব্যাপার। কোনো কাগজ নষ্ট হচ্ছে না। একই কাহিনী বিল দেওয়ার বেলায়। যখন ইন্টারনেট, বিদ্যুৎ বা ক্রেডিট কার্ডের জন্য একাউন্ট খুলবেন, আপনাকে জিজ্ঞেস করা হবে আপনি কি কাগজহীন বিলে আগ্রহী নাকি কাগুজে বিলে। কাগুজে বিল হল প্রতি মাসে খামে করে আপনার বাসার ঠিকানায় বিল পাঠানো হবে। আর কাগজহীন বিল হল আপনার ইমেইলে ই-বিল পাঠানো হবে। আমি প্রতিটা ক্ষেত্রে কাগজহীন বিল বাছাই করেছি। কারণ আমি জানি ‘ছোট ছোট বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল, গড়ে তোলে মহাদেশ, সাগর অতল।’ হয়ত আমার একার উদ্যোগে কিছুই হবে না, কিন্তু আমার মত অনেকের উদ্যোগ মিলেই পরিবেশটা বাঁচবে।

কিউ জিজ্ঞেস করল কফি টফি কিছু খাব কিনা। ফ্লাইটের এখনো এক ঘণ্টা বাকি। খরচের ভয়ে মানা করে দিলাম। কিউ আমার মনের কথা পড়ে ফেলল। বলল, ‘বিল তো ইউএবি দিবে। তোমার খেতে সমস্যা কী?’ ওহ আচ্ছা। তাহলে একটা কফি নেওয়া যায়। গেলাম স্টার বাক্সে। এই দোকানের মহিমা আমি না বুঝলেও কিউ বুঝে। কফি নিয়ে আমার আদিখ্যেতা নেই। হলেও চলে, না হলেও। কিন্তু কিউ কফিখোর। ওর পছন্দকে পাত্তা দেওয়া দরকার। তো, গিয়ে বারিস্তাকে বললাম একটা মিডিয়াম কাফে লাত্তে দিতে। বলতে পারতাম সবচেয়ে বড় মগের কথা। কিন্তু আমার মস্তিষ্ক এবেলায়ও চিন্তা করছে টাকা বাঁচানোর কথা। ভাবছে, বেশি দামী কফি নিলে ইউএবির কাছে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে কিনা। অথচ আমার পর অর্ডার দিয়ে কিউ নিল একটা লার্জ সাইজের কিউই লেমনেড। ওর মধ্যে কোনো মাথাব্যথা দেখছি না খরচ করার ব্যাপারে। তাহলে আমার কেন এমন লাগে? আমি কেন দেওয়ালগুলো ভাঙতে পারছি না? কেন নিজেকে ক্ষুদ্র লাগে? কেন মনে হয় আমি এসবের যোগ্য নই?

যা হোক, কিউকে লেমনেড নিতে দেখে অবাক হলাম। ভেবেছিলাম বিশ্বখ্যাত কফির দোকানে এসে ও কোন কফি নেয়, সেটা দেখব। কিন্তু লেমনেড? বাই দা ওয়ে, আমেরিকান উচ্চারণে কাফে লাত্তেকে বলে ক্যাফে লাটে। কিন্তু আমি অনেক বছর ইতালীয়দের সাথে কাজ করেছি। ইতালীয় শব্দগুলোর উচ্চারণ তাই ওদের মতই করি। অনেকে তা শুনে একটু উশখুশ করে। কিন্তু আমি প্রকৃত উচ্চারণ করতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। যখন প্রকৃত উচ্চারণ বুঝতে কারো সমস্যা হয়, তখন আমেরিকান উচ্চারণ করে বুঝিয়ে দিই।

পানীয় নিয়ে দুজনে লাউঞ্জে গিয়ে বসলাম। অ্যাডমিশনের সম্ভাবনা নিয়ে গল্প করতে করতে আধা ঘণ্টা পার হল। হঠাৎ শুনি আমাদের ফ্লাইটের যাত্রীদেরকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে, কেউ কি তাদের লাগেজ কেবিনে না নিয়ে বিনামূল্যে চেক-ইন করতে চায় কিনা। কেউ হাত তুলল না বা আগ্রহ দেখাল না। একটু পর যাত্রী উঠানো শুরু হল। প্রথম দফা উঠানোর পর ঘোষণা বদলে গেল। এবার অনুরোধ করা হচ্ছে। দয়া করে কেউ কি লাগেজ চেক-ইন করবেন? সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করা হবে কারণ কেবিনে জায়গা হচ্ছে না। তবুও কেউ আগ্রহ দেখাল না। সবাই নিজের জিম্মায় রাখতে চায় লাগেজ। কিউ উঠে দাঁড়াল। চেক-ইন করবে। আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম। কিউয়ের যুক্তি, চেক-ইন করলে জর্জিয়ায় নেমে ওর আর লাগেজ নিয়ে মাথাব্যথা থাকবে না। লাগেজ সরাসরি বার্মিংহ্যাম থেকে টেনেসি পৌঁছে যাবে। কেবিনে নিলে জর্জিয়ায় নেমে ওকেই টানতে হবে। টেনে আরেকটা ফ্লাইটে উঠতে হবে। মুগ্ধ হলাম ওর যুক্তিতে। এভাবে ভেবে দেখিনি। তবুও ভরসা পেলাম না। লাগেজ সাথেই রাখব চিন্তা করলাম। কিউ এগিয়ে গেল। অফিসার ওর লাগেজ কোথায় যেন পাঠিয়ে দিল। কয়েক মুহূর্ত পর দেখি কিউও বিমানে ঢুকল।

আমার ক্লাস ধরে যখন ডাক দিল, এগিয়ে গেলাম। বোর্ডিংপাস দেখানোর পর অফিসার জিজ্ঞেস করলেন, ‘ম্যাম, আপনার লাগেজটা কি চেক-ইন করতে চান?’ হায়! এতবার ঘোষণার পরও যখন আমি এগিয়ে আসিনি, তারমানে অবশ্যই আমার ইচ্ছা নেই। তারপরও যখন জিজ্ঞেস করছে, অবস্থা নিশ্চয়ই বেগতিক। রাজি হলাম। অফিসার স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস খুব সাবধানে গোপন করলেন। কিন্তু উনার ধন্যবাদ দেওয়ার ভঙ্গি দেখে বুঝলাম খুব করে চাইছিলেন যেন চেক-ইন করি। বিমানে ঢুকে দেখি আসলেই অবস্থা খারাপ। মাথার উপর যে জায়গা থাকে লাগেজ রাখার, সেগুলো ভরে টইটুম্বুর। অনেকেই ইচ্ছামত ঠেসছে কিন্তু ঢুকাতে পারছে না লাগেজ। পারবে কীভাবে? লাগেজের সমান জায়গা থাকতে হবে তো! অল্প একটু জায়গা থাকলেই তো আর হয় না। কেউ কেউ আবার কেবিন ক্রুদের বলছে এখন তারা লাগেজ চেক-ইন করতে চায়। বিতিকিচ্ছি অবস্থা। খালি একটা জিনিসই বুঝতে পারছি না, বিমানের ভেতর কেন যথেষ্ট জায়গা নেই? ওরা তো সবকিছু হিসেব করেই বিমান বানায়, নাকি? যাক গে। বিমানে আমার আর কিউয়ের সিট আলাদা জায়গায় পড়েছে। ভেতরে ঢুকে ওকে আর দেখিনি। বুঝলাম অচেনা সঙ্গীর পাশে বসে পাড়ি দিতে হবে এক ঘণ্টার পথ। জর্জিয়াতে নেমে নিশ্চয় কিউ আমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে! তাছাড়া ওর নাম্বার তো আছেই। খুঁজে না পেলে কল দেব। জর্জিয়ায় তিন ঘণ্টার ট্রানজিট। একা বসে থাকতে বিরক্ত লাগবে।

 

জর্জিয়া বিমানবন্দরে যখন প্লেন ল্যান্ড করল, ধীরে সুস্থে নামলাম। অনেকে দেখবেন হুড়োহুড়ি লাগিয়ে দেয়। কে কার আগে নামতে পারে, সেজন্য। একবার তো ইতালি থেকে বাংলাদেশে আসার পথে বাংলাদেশীদের কাণ্ড দেখে লাজওয়াব হয়ে গিয়েছিলাম। প্লেন ল্যান্ড করার পর বেশ কিছু সময় নেয় জায়গামত এসে থামার জন্য। তো, ল্যান্ড করার পর যখন গতি একটু কমে এসেছে, তখনই অনেকে সিটবেল্ট খুলে মাথার উপর থেকে বাক্সপেঁটরা বের করা শুরু করে দিল। নিয়ম হল পাইলট সিটবেল্ট খোলার অনুমতি দেওয়ার আগ পর্যন্ত বেল্ট পরে বসে থাকা। প্লেন পুরোপুরি থামার আগে পাইলট এই কথা বলেন না। তাই ঐ সময় উঠে দাঁড়ানো তো দূর কি বাত, বেল্ট খোলারই কথা না কারো। আমি এই নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করি। কী দরকার পাঁচ মিনিট আগে নামার? এত ঘণ্টা ভ্রমণ করতে পারলাম, আর পাঁচটা মিনিট বসে থাকতে পারব না? তাই প্রাথমিক ধাক্কাটা কেটে যাওয়ার পর ভিড় যখন হালকা হতে শুরু করে, তখন আমি নামি। আমার অত তাড়া নেই।

এবারও আস্তে ধীরে নামলাম। দেখি লাউঞ্জে কিউ দাঁড়িয়ে আছে। বলল, ওর কিছু খাওয়ার দরকার। বার্মিংহামে লেমনেড খেয়ে খিদে চাগিয়ে উঠেছে। আমার যদিও কফি খেয়ে ক্ষুধামন্দা লাগছে, তবুও একজন ক্ষুধার্ত মানুষকে বলা যায় না অপেক্ষা করতে। তাই ঘুরতে লাগলাম এক দোকান থেকে আরেক দোকান। কী ধরনের খাবার খাব, সেটাই বুঝতে উঠতে পারছি না কেউ। কিউ জানতে চাইল আমার পছন্দের খাবার কী। আমি সাধারণত পরিচিত খাবারের মধ্যে থাকতে চাই। আমেরিকা আসার পর নতুন খাবার চাখতে গিয়ে প্রচুর নাকাল হয়েছি। তাই বললাম চাইনিজ খাবারের কথা। ফ্রায়েড রাইস, ভেজিটেবল, শ্রিম্প। কিউ একটু দোনোমনা করল। ওর নাকি চাইনিজ খাবার পছন্দ না। যা ব্বাবাহ! নিজ দেশের খাবার আবার কোন বান্দার পছন্দ না? আবারও ইতালিয়ান পিতসা, মেক্সিকান টাকো, ভারতীয় কারির দোকান ঘুরে আমেরিকান সাবওয়ে আর স্টারবাক্সে উঁকি দিলাম। কিছুই কিউয়ের মনমত হয় না। অবশেষে এক বাটি সালাদে তার মন গলল। খাঁটি পথ্যবিদ! শাকসবজির উপর থাকে, ক্যালোরি হিসেব করে খায়। অথচ আমি কিনলাম এক বাটি ভাজা ভাত, এক বাটি সবজি, আর এক বাটি নারিকেল মেশানো চিংড়ি। বুঝতে পারিনি এটা নারিকেল মেশানো। বুঝলে নিতাম না। সাধারণত নারিকেলের কারিগুলো মিষ্টি হয়। আর নারিকেল মেশানো মিষ্টি তরকারি আমার একেবারে ভাল লাগে না।

নারিকেল-চিংড়ি খেতে খেতে এক সহকর্মীর কথা মনে পড়ল। বছর দুয়েক আগে যখন বায়িং হাউজে কাজ করতাম, তখনকার কথা। উনি প্রায় শ্রীলংকায় যেতেন আমাদের কোম্পানির কাজে। সেখানে গিয়ে যে হোটেলেই উঠতেন না কেন, বাবুর্চিরা রান্না করত নারিকেল তেল দিয়ে। ডালে নারিকেল, তরকারিতে নারিকেল, মাংসে নারিকেল। নারিকেলের গন্ধে তরকারি সব ম ম করত। বাঙালির রসনা বিলাসের বেলায় সে এক কষ্টকর অভিজ্ঞতা। শেষমেশ না পারতে উনি এমন হোটেলে উঠলেন যেখানে নিজে রান্না করে খাওয়া যায়। তারপর বাজার থেকে সয়াবিন তেল এনে রান্না শুরু করলেন। সারাদিন ফ্যাক্টরিতে ঘুরে রাতে এসে রাঁধো। বেচারার জন্য শ্রীলংকা ভ্রমণ হয়ে গেল ভয়ংকর এক ব্যাপার। আমার অত খারাপ অবস্থা না ভেবে সান্ত্বনা নিলাম। মাত্র একবেলার কষ্ট। সবজির সাথে চিংড়ি মিশিয়ে কোঁত করে গিলে ফেলতে লাগলাম।

কিউয়ের সাথে ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করতে করতে তিন ঘণ্টা পার হয়ে গেল। ভবিষ্যৎ মানে আজ থেকে দশ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চাই ধরনের আঁতলামি নয়। ইউএবিতে সুযোগ পাব কি না, সে ভবিষ্যৎ। কিউ বারবার সান্ত্বনা দিচ্ছে এই বলে, পাঁচটা পিএইচডি পদ খালি আছে। পাঁচজনকে না নিয়ে যায়ই না। অথচ আমার সাধারণ জ্ঞান বলছে পাঁচজনকে যদি নিতই, সাক্ষাৎকারের দরকার ছিল না কোনো। সরাসরি অ্যাডমিশন দিয়ে দিত। এই ফাঁকে একটু আঁতলামি করে নিই। বাংলা আঁতেল শব্দটা কোত্থেকে এসেছে, জানেন? ফরাসী ‘intellectuel’ থেকে। এর উচ্চারণ ‘ইতেঁলেক্তুয়েল‘। মানেটা ইংরেজি intellectual-এর মতইঃ মেধাবী। বাংলা ভাষায় এই ইতেঁলেক্তুয়েল শব্দের অপভ্রংশ হিসেবে আঁতেল চালু হয় সম্ভবত চল্লিশ-পঞ্চাশের দশকে। আঁতেল আমরা ব্যবহার করি ব্যঙ্গাত্মক অর্থে, কিন্তু এর প্রকৃত অর্থ জানার পর কেউ আঁতেল বললে আমার ভালই লাগে। জেনে বা না জেনে আমাকে মেধাবী বলছে। খারাপ কী? মুফতে আরেকটা তথ্য। ফরাসী শব্দে যদি ‘ন (n)’ অক্ষরটা কোনো স্বরবর্ণের (vowel) পরে থাকে, তাহলে উচ্চারিত হয় না। তখন স্বরবর্ণটার উচ্চারণ ঁ-যুক্ত (নাসিক্য ধ্বনি) হয়। এখানেও তাই ঘটেছে। inte-এর উচ্চারণ হচ্ছে ইতেঁ। ইতেঁ থেকে আঁতেল, আর আঁতেল থেকে আঁতলামি এসেছে। আঁতেল যা করে, তাই আঁতলামি। এই যেমন আমি এতক্ষণ যা করলাম। অনেকে হয়ত ধরে ফেলেছেন হিন্দি ভাষায়ও একই কাহিনী আছে। হ্যাঁ (han), হুঁ (hun), হ্যাঁয় (hain)। ধরে ফেললে কিন্তু আপনিও কম আঁতেল নন।

আমার ফ্লাইট কিউয়ের ফ্লাইটেরও এক ঘণ্টা আগে ছাড়বে। ফ্লাইটের আধা ঘণ্টা বাকি থাকতে ওকে বললাম, ‘বিদায় বন্ধু! শুভেচ্ছা রইল তোমার জন্য।’ কিউ চোখ রাঙিয়ে বলল, ‘কীসের বিদায়? তোমাকে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসব।’ আমি সটান মানা করলাম। ঝামেলায় গিয়ে কাজ নেই। কিন্তু কিউ নাছোড়বান্দা। আমি চলে গেলে ওর একা বসে থাকতে হবে। তাই আমাকে এগিয়ে দিয়ে আসলে কিছুটা সময় কাটবে। কী আর বলব? চললাম দুজনে। নির্ধারিত গেটে আসতে পনেরো মিনিটের মত লাগল। এবার শেষ বিদায়ের পালা। মাত্র দুইদিনেই কিউকে আমার পছন্দ হয়ে গেছে। মেয়েটা রামগরুড়ের ছানা, হাসতে তাদের মানা ধরনের। সারাক্ষণ চেহারায় গম্ভীর ভাব। কিন্তু কী চটপটে! কিছুতেই ভয়ডর নেই। এই বৈশিষ্ট্যই ওকে পছন্দ করার কারণ ছিল। বিদায় নেওয়ার সময় আশা করতে ইচ্ছে হল, মেয়েটার সাথে ইউএবিতে দেখা হবে। দেখা হলে অনেক কিছু শিখব। পিয়ানো বাজানো, অকুতোভয় হওয়ার তরিকা…

 

বিঃ দ্রঃ সেন্ট লুইসে ফেরার দিন সতেরো পরও ইউএবি থেকে কোনো জবাব পেলাম না। শেষমেশ অধৈর্য হয়ে কিউকে টেক্সট করলাম, ‘তোমার সাথে কি ইউএবি যোগাযোগ করেছিল?’ কিউ উত্তর দিল, ‘হ্যাঁ। ওরা আমাকে আনফিসিয়ালি অ্যাডমিশন পাওয়ার কথা জানিয়েছে।’ বুকের ভেতর ধড়াস করে উঠল। হাতের তেলো ঠাণ্ডা হয়ে গেল। প্রচণ্ড মানসিক চাপে আমার এরকম হয়। তাহলে এবারও হল না? ইউএবি ছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেল?

ঠিক দুইদিন পর ইউএবি থেকে ইমেইল এল। বলা হল, আমার যে যে বিষয়ের উপর গবেষণা করার ইচ্ছা, সেগুলো ওদের উদ্দেশ্যের সাথে যায় না। পড়ে কান্না আসতে আসতেও আসল না। রিজেকশন খেতে খেতে আমার অনুভূতি গেছে ভোঁতা হয়ে। ঐ অ্যাড্রেনালিন রাশ পর্যন্তই। হাতের তালু ঠাণ্ডা হয়ে মাথা হালকা হয়ে যাওয়া পর্যন্তই। কান্নাকাটি আর আসে না।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post যুক্তরাষ্ট্রে স্নাতকোত্তর জীবনের দুই বছর (পর্ব ১৫)
Next post ক্রিসমাস ট্রিঃ বড়দিন বৃক্ষের গল্প