0 0
Read Time23 Minute, 23 Second
কীভাবে ফান্ড যোগাড় করতে পারবেন, সে ব্যাপারে যাওয়ার আগে কিছু তথ্য জানা দরকার। যেমন, আমেরিকান ভার্সিটিগুলোয় খাদ্য ও পুষ্টির প্রোগ্রামকে তিনটা ভাগে ভাগ করা যায়ঃ
১) যেসব ভার্সিটিতে খাদ্য ও পুষ্টির উপর শুধু ব্যাচেলর তথা আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ডিগ্রির অফার আছে, মাস্টার্স/ডক্টরাল ডিগ্রি তথা গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রির অফার নেই
২) যেসব ভার্সিটিতে শুধু ব্যাচেলর এবং মাস্টার্স ডিগ্রির অফার আছে, ডক্টরাল ডিগ্রির নেই
৩) যেসব ভার্সিটিতে ব্যাচেলর, মাস্টার্স এবং ডক্টরাল – তিন ধরনের ডিগ্রিরই অফার আছে
.
তো, যেসব ভার্সিটিতে ডক্টরাল ডিগ্রির অপশন আছে, সেসব ভার্সিটিতে মাস্টার্সে ফুল ফান্ড পাওয়া বেশ কঠিন হয়। কারণ পিএইচডি স্টুডেন্টদের পিছনে বেশিরভাগ ফান্ড চলে যায়। তাই আপনার যদি লক্ষ্য হয় মাস্টার্স করা, তাহলে যেসব ভার্সিটিতে মাস্টার্স পর্যন্ত অপশন থাকে, সেগুলোই বেশি নিরাপদ হবে। তখন ফান্ডের মূল ভোক্তা হয় মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা। যেমন, আমি মাস্টার্স করেছি সেন্ট লুইস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সেখানে পুষ্টিবিজ্ঞানের উপর মাস্টার্স প্রোগ্রাম পর্যন্ত চালু ছিল। তাই মাস্টার্সের স্টুডেন্টরাই অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ ভিত্তিক সব ফান্ড পেত। আমিও ওভাবেই পেয়েছিলাম। তবে দৃশ্যটা ১০০% এরকমই হবে, তা নয়। এটা একটা সাধারণ ধারণা। অ্যাডমিশন এতটা সরলরৈখিকভাবে চলে না। তাই ডক্টরাল ডিগ্রির অপশনওয়ালা কোনো ভার্সিটির মাস্টার্স প্রোগ্রাম পছন্দ হয়ে গেলে ‘ফান্ড পাবো না। এপ্লাই করে লাভ কী?’ ভেবে সরে যাবেন না। আমার পরিচিত এক স্টুডেন্ট UIUC-র পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্সে ফান্ড পেয়েছিল কারণ তার সুপারভাইজর খুব শীঘ্রই অবসরে যাবেন। তিনি ঐ পর্যায়ে কোনো পিএইচডি স্টুডেন্ট নিতে চাচ্ছিলেন না, কিন্তু চলমান গবেষণাগুলো শেষ করার জন্য একজন মাস্টার্স শিক্ষার্থী খুঁজছিলেন।
এখন আসুন ফান্ড কেমন ধরনের হয়, সে ব্যাপারে। সাধারণত দুইভাবে গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্টদের ফান্ড দেওয়া হয়ঃ
.
১) ফেলোশিপ (Fellowship)ঃ এটা এককালীন কিছু টাকা হতে পারে, বা রেজাল্টের উপর ভিত্তি করে প্রতি বছর দেওয়া হতে পারে। ভার্সিটি এবং বিভাগ ভেদে হাতে গোনা কিছু ফেলোশিপ থাকে। এটার অধীনে স্টুডেন্টকে সাধারণত কোনো কাজ করতে হয় না। ফেলোশিপের পরিমাণ অ-নে-ক বেশি হতে পারে (সর্বোচ্চ দেখেছি বছরে ৩৫,০০০ ডলার), অনেক কমও হতে পারে (সর্বনিম্ন দেখেছি বছরে ১,০০০ ডলার)। তাই ফেলোশিপ মানেই যে অ্যাসিস্ট্যান্টশিপের চেয়ে ভালো কিছু হবে, এমনটা নয়। আমি টেক্সাস টেক বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি বিভাগ থেকে পিএইচডিতে একটা ফেলোশিপ পেয়েছিলাম। সেটার পরিমাণ ছিল মাত্র এক হাজার ডলার, তাও এককালীন। সেটা পাওয়ার কারণে আমার টিউশন ফি আউট-অফ-স্টেট থেকে ইন-স্টেট হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমার পক্ষে ইন-স্টেট টিউশন ফি দিয়ে পড়াশোনা করা বস্তুত অসম্ভব। তাই ঐ ফেলোশিপ আমার কোনো কাজে আসেনি। আমি জানতে চেয়েছিলাম আমাকে অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ দেওয়া যায় কিনা। কর্তৃপক্ষ ক’দিন পর ফেলোশিপ বাতিল করে Teaching Assistantship অফার করলেন। TA পাওয়ার ফলে প্রতি মাসে আমি হাত খরচও পাব, ইন-স্টেট টিউশন ফিও অনেকখানি মাফ হয়ে যাবে। তাতে পিএইচডি চালিয়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা দেখতে পেলাম (যদিও ঐ প্রোগ্রামে যাওয়া হয়নি)।
.
২) অ্যাসিস্ট্যান্টশিপঃ আমাদের মূল আলোচনা হবে অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ নিয়ে কারণ বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই অ্যাসিস্ট্যান্টশিপের আওতায় পড়তে আসে। এটা হল কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচী। আপনি সপ্তাহে কয়েক ঘণ্টা কাজ করবেন, বিনিময়ে হাত খরচ পাবেন। বেশিরভাগ জায়গায় সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা অন-ক্যাম্পাস কাজ করতে হয়। অফ-ক্যাম্পাস কাজ করা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য অবৈধ। স্টুডেন্টকে দিয়ে ২০ ঘণ্টার বেশি কাজ করাতে চাইলে বিভাগ থেকে বিশেষ অনুমতি নিতে হয়।
.
অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ মোটামুটি তিন ধরনেরঃ
ক) Graduate Assistantship (GA)ঃ টিচিং বা রিসার্চের বাইরে যদি কোনো কাজ করতে দেওয়া হয়, সাধারণত সেটাকে GA বলে। যেমনঃ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কাজ, ক্যাম্পাস কিচেন বা ক্যাফেটেরিয়ায় কাজ, অনুষদে যদি কমিউনিটি গার্ডেন বা টিচিং গার্ডেন থাকে সেটায় কাজ, ইত্যাদি। এটা দেওয়া হয় ডিপার্টমেন্ট থেকে কারণ ডিপার্টমেন্টই ভাল জানবে কোন কাজের জন্য এবং কখন তাদের GA লাগবে।
.
খ) Graduate Teaching Assistantship (GTA/TA)ঃ আন্ডারগ্র্যাডদের ক্লাস নেওয়া, পরীক্ষার খাতা দেখা আর নাম্বার দেওয়া, এসাইনমেন্ট দেখা, স্টুডেন্টদের জন্য নির্দিষ্ট অফিস আওয়ার রাখা, তাদের ইমেইলের জবাব দেওয়া, পরীক্ষায় প্রোক্টরিং করা (গার্ড দেওয়া) ইত্যাদি। TA দেওয়া হয় ডিপার্টমেন্ট থেকে। কারণ ডিপার্টমেন্ট জানে কোন কোর্সের জন্য কোন সেমিস্টারে তাদের কতজন TA লাগবে। সে হিসেব করে অ্যাডমিশন লেটারে তারা উল্লেখ করে দেয় “অমুক সেশনের জন্য তোমাকে TA দেওয়া হচ্ছে।”
.
গ) Graduate Research Assistantship (GRA/RA)ঃ কোনো প্রফেসর যখন তাঁর গবেষণায় সাহায্য করার জন্য স্টুডেন্ট নেন, তখন RA দেওয়া হয়। এটা সাধারণত প্রফেসরের রিসার্চ ফান্ড বা ব্যক্তিগত ফান্ড থেকে আসে। তাই এক্ষেত্রে স্টুডেন্ট শুধু প্রফেসরের সাথেই কাজ করে। ডিপার্টমেন্টের অন্যান্য কাজের সাথে তাকে যুক্ত হতে হয় না। তাই সবার লক্ষ্য থাকে RA পাওয়ার। কারণ RA পেলে প্রফেসরের অধীনে নিজের গবেষণা করার জন্যেই স্টুডেন্ট স্যালারি পাবে। কিন্তু TA বা GA পেলে নিজের গবেষণার বাইরের কাজ করার জন্য বেতন পায়।
.
এগুলোর বাইরে হঠাৎ হঠাৎ কিছু অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ দেখা যায়, যেমনঃ Graduate Assistant Lecturer (GAL), Graduate Assistant Non-teaching activities (GANT) ইত্যাদি। একেক ভার্সিটি একেক নামে ডাকতে পারে অ্যাসিস্ট্যান্টশিপকে। কাজ ঘুরেফিরে একই। কিছু জিনিস জেনে রাখা ভালঃ
i. অনেক সময় একই সাথে দুটো অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ পাওয়া যায়। যেমন – GA+RA, TA+GA, TA+RA। যখন খরচ ভাগ হয়, তখন এভাবে দেওয়া হয়। মানে ডিপার্টমেন্ট বহন করবে আপনার মোট খরচের ৫০% খরচ, প্রফেসর বহন করবেন ৫০%।
ii. অনেক সময় দেখা যায় প্রথম বছরে TA বা GA দেয়, পরের বছর থেকে RA শুরু হয়। অথবা প্রথম বছরে RA বা GA, পরের বছরগুলোতে TA । অথবা প্রথম দুই বছর TA, পরের বছরগুলোতে RA । RA যেহেতু প্রফেসরের কাছে থাকা ফান্ডের উপর নির্ভর করে, তাই কোনো কারণে প্রফের কাছে পর্যাপ্ত ফান্ড না থাকলে বছরের পর বছর ধরে TA থাকতে হতে পারে। আবার অন্যান্য কারণেও TA হয়ে থাকতে হতে পারে। আমি এমন পিএইচডি স্টুডেন্ট দেখেছি যারা তিন বছর ধরে TA করছে, RA পায়নি। কারণ ডিপার্টমেন্টে প্রচুর আন্ডারগ্র্যাড, যাদের পড়ানোর জন্য প্রচুর TA দরকার।
iii. মাস্টার্স এবং পিএইচডি ভেদে RA, TA পাওয়ায় পার্থক্য থাকে। মাস্টার্সে শুধু TA দিয়েই দুই বছর কাটিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু পিএইচডিতে সাধারণত তৃতীয় বছর থেকে নিজের মৌলিক গবেষণা শুরু হয় বলে TA বাদ দিয়ে RA দেওয়া হয় যেন শিক্ষার্থী গবেষণাতেই সবটুকু সময় ব্যয় করতে পারে।
.
ফান্ডিংকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা যায়ঃ
১) ফুল ফান্ডিংঃ এ ধরনের ফান্ডিংয়ে আপনার পকেট থেকে এক ডলারও বাড়তি দিতে হবে না। অর্থাৎ আপনার টিউশন, বিভিন্ন ফি, হেলথ ইনস্যুরেন্স – সবকিছুই ফেলোশিপ বা অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ দিয়ে কাভার হয়ে যাবে। উপরন্তু আপনাকে মাসিক হাত খরচও দেওয়া হবে। কিন্তু আপনি যদি স্পাউসকে আনতে চান, তাহলে নিজের পকেট থেকে স্পাউসের জন্য খরচটা দেখাতে হবে। বেশ কিছু ফেলোশিপ অবশ্য স্পাউসের খরচও কাভার করে, কিন্তু সেটা খুবই বিরল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শুধু আপনার খরচ কাভার করা হবে।
.
২) পার্শিয়াল ফান্ডিংঃ এ ধরনের ফান্ডিংয়ে আপনি মাসিক বেতন পাবেন ঠিকই, কিন্তু আপনার পকেট থেকে কিছু ডলার খরচও হবে। হয়ত অ্যাসিস্ট্যান্টশিপের মাধ্যমে আপনার টিউশন পুরোপুরি কাভার না করে আংশিক কাভার করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে বাকি টিউশন আপনাকেই দিতে হবে। আবার হয়ত টিউশন পুরোপুরি মাফ হয়েছে, কিন্তু হেলথ ইনস্যুরেন্স কাভার করা হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে সেটা আপনাকে কিনতে হচ্ছে। মনে রাখবেন, পুষ্টির জগতে পার্শিয়াল ফান্ডিং খুবই সাধারণ ঘটনা। এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। একবার পার্শিয়াল ফান্ডিং নিয়ে চলে আসলে রাস্তাঘাট চিনে পরবর্তী বছরগুলোয় ফুল ফান্ডিং পাওয়া অসম্ভব কিছু না।
.
৩) সেল্ফ ফান্ডিংঃ এ ধরনের ফান্ডিংয়ে পুরো খরচই আপনার বহন করতে হবে। অর্থাৎ নিজেই নিজেকে ফান্ড করবেন। এজন্যেই নাম সেল্ফ ফান্ডিং। ভার্সিটি শুধু আপনাকে অ্যাডমিশন দেবে, বাকি খরচ আপনার। মনে রাখবেন, পুষ্টির জগতে ফান্ডিং ছাড়া অ্যাডমিশন (admission without funding) খুবই সাধারণ ঘটনা। এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। অন্য ডিপার্টমেন্টের সাথে পুষ্টির তুলনা করলে চলবে না। এখানকার পরিস্থিতি অনেক ভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বা আইটি সেক্টরের থেকে। আমি নিজেই ফান্ডিং ছাড়া অ্যাডমিশন পেয়েছি দুই জায়গা থেকে। বলা হয়েছিল সেল্ফ ফান্ডে আসতে, এরপর বিভিন্ন স্কলারশিপ বা ফেলোশিপে আবেদন করে ফান্ড যোগাড় করতে। কিন্তু আমার সামর্থ্য ছিল না সেল্ফ ফান্ডে যাওয়ার। তাই অ্যাডমিশন ডিক্লাইন করতে হয়েছিল। কিন্তু আপনার যদি সামর্থ্য থাকে, তাহলে ভাল একটা প্রোগ্রামে কেন আসবেন না সেল্ফ ফান্ডে? একবার আসলে পরবর্তীতে বিভিন্ন উপায় বের হয়ে যায় ফান্ডিংয়ের। টেক্সাস টেকের পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগে প্রচুর বাংলাদেশী পিএইচডি শিক্ষার্থী আছেন। অনেকেই সেল্ফ ফান্ডে এসেছেন। এসে ফান্ড যোগাড় করেছেন। এটা অসম্ভব কিছু নয়।
.
অ্যাসিস্ট্যান্টশিপের আওতায় কী কী সুবিধা পাওয়া যায়?
অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ পেলে মূলত চার ধরনের সুবিধা পাওয়া যায় –
.
ক) টিউশন মাফঃ এটা Tuition Waiver হিসেবে পরিচিত। যদি আপনার পুরো টিউশন মাফ করা হয়, তাহলে তো ভালই। কিন্তু অনেক সময় আংশিক মাফ করা হয়, বাকিটুকু নিজের পকেট থেকে দেওয়া লাগে। টেক্সাস টেক থেকে আমি যে TA অফার পেয়েছিলাম, তাতে সম্পূর্ণ টিউশন ফি মাফ করা হয়নি (আমার পকেট থেকে ১৩০০-২০০০ ডলার ব্যয় হওয়ার সম্ভাবনা ছিল)। কিন্তু অন্যান্য জায়গা থেকে যেসব অফার পেয়েছি, সেগুলোতে পুরো টিউশনই মাফ হয়েছিল।
.
খ) হাত খরচঃ প্রতি মাসে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ডলার আপনি বেতন হিসেবে পাবেন। যেহেতু ডিপার্টমেন্টে চাকরি করবেন (অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ মানে ডিপার্টমেন্টের বা প্রফেসরের অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে চাকরি করা), তাই অবশ্যই কিছু না কিছু বেতন পাবেন। বেতনের পরিমাণ যদি মাসিক খরচের হিসেবে যথাযথ হয়, তাহলে নিজের পকেট থেকে কিছু খরচ হবে না। কিন্তু যদি মাসিক খরচের হিসেবে কম হয়, তাহলে পকেট থেকে টাকা যাবে। অনেক ভার্সিটিতে দেখবেন মাস্টার্স আর পিএইচডিতে কী পরিমাণ অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ দেয়, সেটা উল্লেখ করা থাকে। “Graduate assistantship amount/stipend rate at X university” লিখে সার্চ দিলে রেজাল্ট চলে আসার কথা। যেমন, কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি শিক্ষার্থীদের প্রতি সপ্তাহে ১৫ ঘণ্টা কাজের জন্য দেয় ২৩০০ ডলার। আবার টেক্সাস এঅ্যান্ডএম বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি বিভাগ প্রতি সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজের জন্য দেয় ২২৫০ ডলার। নিউট্রিশনের কিছু পিএইচডি প্রোগ্রাম খুব কম পরিমাণে হাত খরচ দেয়। সর্বনিম্ন দেখেছি ১৫০০ ডলার করে। যদি আপনি একাই আসেন, তাহলে লোকালয় (শহর নাকি গ্রামে থাকছেন) ভেদে ১৫০০ ডলার দিয়ে চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু যদি স্পাউস থাকে সাথে, একটু চেপে চলতে হবে।
.
মাস্টার্সে খুব কম জায়গায়ই মাসিক বেতন ১৫০০ ডলারের উপরে উঠে। ১৩০০-১৫০০ ডলার দিলেই সেটা মাস্টার্সের সাপেক্ষে ভাল ডিল। দুটো উদাহরণ দিই। ২০১৮ সালে সেন্ট লুইস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সেন্ট লুইস শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত) পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগ মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের দিত মাসে ১৩০০ ডলার করে। আবার ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় অ্যাট আর্বানা-শ্যাম্পেইন (মফস্বলে অবস্থিত) দিত ১০০০ ডলার করে। মনে রাখবেন, এই বেতন গ্রাম/শহর ভেদে ওঠানামা করে। গ্রামের কোনো ভার্সিটির জীবনযাত্রার খরচ শহরের ভার্সিটির তুলনায় কম বলে বেতনও সাধারণত কম হয়।
.
গ) হেলথ ইনস্যুরেন্সঃ এটা প্যাকেজে থাকতে পারে, নাও পারে। থাকলে ভাল, না থাকলে নিজের পকেট থেকে দিতে হবে। টেক্সাস টেকের TA অফারের সাথে আমি কোনো হেলথ ইনস্যুরেন্স পাইনি। তাই এটার জন্য আমার পকেট থেকে দেওয়ার কথা ছিল বছরে ৩০০০ ডলার। কিন্তু টেক্সাস এঅ্যান্ডএম তাদের TA অফারের সাথে হেলথ ইনস্যুরেন্সও দিচ্ছে। এভাবেই বিভিন্ন প্রোগ্রাম বিভিন্নভাবে তাদের অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ প্যাকেজ সাজায়।

আপনি যদি ভার্সিটির তালিকাভুক্ত (enrolled) শিক্ষার্থী হতে চান, আপনাকে হেলথ ইনস্যুরেন্স নিতে হবেই। যারা অ্যাসিস্ট্যান্টশিপের প্যাকেজে হেলথ ইনস্যুরেন্স পায় না, তারা হয়ত ভার্সিটির নিজস্ব ইনস্যুরেন্স নেয়, অথবা বাইরের ইনস্যুরেন্স নেয়। যেটা যার জন্য ভাল হয় (খরচ কেমন, কী ধরনের সেবা দিচ্ছে – ইত্যাদি বিষয় বিবেচনার পর)। অনেকে নিজের পাশাপাশি স্পাউসের জন্যও হেলথ ইনস্যুরেন্স নেয়।

ঘ) যাবতীয় ফি মাফঃ টিউশনের বাইরেও একজন শিক্ষার্থীকে ভার্সিটির বিভিন্ন সেবার জন্য ফি দিতে হয়। যেমনঃ স্টুডেন্ট সেন্টার ফি, রিক্রিয়েশন সেন্টার ফি, হেলথ সেন্টার ফি, ট্রান্সপোর্টেশন ফি ইত্যাদি। আপনি কোনোদিন জিমনেশিয়ামে গেলেন কিনা, সেটা ব্যাপার নয়। ফি দিতেই হবে (এজন্য যাওয়াটাই ফরজ)। তো, অনেক সময় এসব ফি অ্যাসিস্ট্যান্টশিপের প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত থাকে। অর্থাৎ আপনার পকেট থেকে দেওয়া লাগবে না। আবার অনেক সময় অন্তর্ভুক্ত থাকে না। তখন আপনাকেই দিতে হবে।

.

মনে রাখবেনঃ আপনি যখন অ্যাডমিশন লেটার পাবেন, তখন সেখানে সবকিছু স্পষ্টভাবে (explicitly) লেখা নাও থাকতে পারে। আমি যে দুটো ফান্ডসহ অ্যাডমিশন পেয়েছিলাম, তাদের অ্যাডমিশন লেটারে লেখা ছিল যথাক্রমে “As a Teaching Assistant, you will be paid $… per month ($…/year) for 20 hours of work per week, and your tuition will be covered.” এবং “The assistantship provides a salary of $… per month or $… for a fiscal year period, along with a remission of all but a portion of tuition and fees.” খেয়াল করুন, কোনোটাতেই কিন্তু হেলথ ইনস্যুরেন্স বিষয়ে কিছু লেখা নেই। আবার, দ্বিতীয়টায় টিউশনের পাশাপাশি অন্যান্য ফি-ও আংশিক মাফ করা হবে লেখা থাকলেও প্রথমটায় ‘ফি’ নিয়ে কিছুই বলা নেই। এসব ক্ষেত্রে টিপস হল, অ্যাডমিশন অফার একসেপ্ট বা রিজেক্ট করার আগে সরাসরি ডিপার্টমেন্টে ইমেইল দিয়ে নিচের প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করবেনঃ

১) অ্যাসিস্ট্যান্টশিপটা হেলথ ইনস্যুরেন্স আর অন্যান্য ফি কাভার করবে কিনা।
২) অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ যদি টিউশন পুরোপুরি কাভার না করে আংশিক কাভার করে থাকে, সেক্ষেত্রে আংশিক বলতে কী পরিমাণ বুঝানো হচ্ছে এবং আপনাকে কী পরিমাণ টাকা পে করতে হবে।
৩) অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ যদি হেলথ ইনস্যুরেন্স না কাভার করে, তাহলে আপনাকে সেটার জন্য বছরে কী কী পরিমাণ টাকা পে করতে হবে।
৪) অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ যদি অন্যান্য ফি কাভার না করে, তাহলে আপনাকে কী পরিমাণ টাকা পে করতে হবে। বা যদি আংশিক কাভার করে, সেক্ষেত্রে আংশিক বলতে কী পরিমাণ বুঝানো হচ্ছে এবং আপনাকে কী পরিমাণ টাকা পে করতে হবে।
উত্তর পেলে আপনার সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে। নিজের পকেট থেকে কোনো ডলার খরচ হবে কিনা, হলে কত ডলার, সে ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা হবে। অনেক সময় ডিপার্টমেন্টের লোকজন এসব উত্তর দিতে পারেন না। তারা তখন আপনাকে হয় ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের সাথে যোগাযোগ করতে বলবেন, বা ইন্টারন্যাশনাল অফিসের সাথে। কিন্তু আপনার উচিৎ সবার আগে ডিপার্টমেন্টে ইমেইল দিয়ে প্রশ্নগুলো করা।
Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর প্রাথমিক অবস্থায় করণীয় কী?
Next post পুষ্টিবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু টিপস (পর্ব ৪ – প্রতিযোগিতা কাদের সাথে?)