1 0
Read Time19 Minute, 24 Second

প্রথম পর্ব, দ্বিতীয় পর্ব, তৃতীয় পর্ব, চতুর্থ পর্ব

প্রথম দিন (১৫ মে, ২০২২)

শ্রীলংকার জাতীয় দূরদর্শনে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের মানচিত্র

আমরা থাকি টেক্সাসের কলেজ স্টেশন নামের ছোটো শহরে। এখান থেকে রকি পর্বতমালা এক হাজার মাইল দূরে অবস্থিত। আর সাত হাজার মাইল যোগ করলে বাংলাদেশে চলে যাওয়া যায়। আমাদের বাসা থেকে গাড়ি চালিয়ে রকিতে যেতে লাগে সাড়ে পনেরো ঘণ্টা। তাও যদি বিরতিহীন ঝটিকা বাসের মতো চালাই। কিন্তু ম্যান ইজ মরটাল। মানুষ মাত্রই খেতে হয়, টাট্টিখানায় যেতে হয়। তাই টুকটাক বিরতি নিতেই হয়। তাছাড়া রকিতে যাওয়ার পথে আমরা বালির স্তূপ জাতীয় উদ্যান হয়ে যাবো। সেখানে যাওয়ার জন্য সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার একটা ডিট্যুর হবে। যেহেতু গাড়িচালক মাত্র একজন (হে পাঠক,  আমি এখনো ড্রাইভিং টেস্ট দিইনি), তাকে এতদূরের পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য ধাপে ধাপে বিশ্রাম নিতে হবে। অর্থাৎ পুরো পথচলাকে ভাগ করতে হবে খণ্ড খণ্ড অংশে। ঠিক হলো, প্রথমদিন আট ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে আমরা টেক্সাসের অ্যামারিলো শহরে পৌঁছাবো। জ্বি হ্যাঁ, আট ঘণ্টা পরে আমরা টেক্সাসেই থাকবো। মিজৌরি থেকে পেন্সিল্ভেনিয়া যাওয়ার সময় ইন্ডিয়ানা আর ওহাইও অঙ্গরাজ্য দুটোর প্রস্থচ্ছেদ বরাবর পাড়ি দিয়েছিলাম। বিশ্বাস করুন, তিন থেকে চার ঘণ্টা লেগেছিলো। কিন্তু টেক্সাস এতোই বড় যে, বিরতি নিয়ে নিয়ে এর প্রস্থচ্ছেদ বরাবর পাড়ি দিতে হলে চৌদ্দ থেকে ষোল ঘণ্টা লেগে যায়। সাধে কি মানুষ টেক্সাস নিয়ে মজা নেয়? সাধে কি বলি, ডাইনে বায়ে যেদিকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ি চালাই, টেক্সাসই দেখি? ইউরোপের মানুষ যেখানে এক ঘণ্টার ড্রাইভিংয়ে নতুন দেশে চলে যায়, সেখানে টেক্সাসের লোকজন ষোল ঘণ্টা ড্রাইভিংয়ের পরও মাইটি টেক্সাসেই থাকে। শ্রীলংকার জাতীয় দূরদর্শন টেক্সাসের একদম সঠিক মানচিত্র দেখিয়েছিলো। যা হোক, অ্যামারিলোতে রাতে থেকে পরদিন রওনা করবো গ্রেট স্যান্ড ডিউন জাতীয় উদ্যানের উদ্দেশ্যে। সেখানে রাতে ক্যাম্পিং করে পরদিন রওনা দেবো রকির উদ্দেশ্যে।

আমরা পরিকল্পনা করেছিলাম বাসা থেকে সকাল আটটা নাগাদ বের হবো। কিন্তু শেষ মুহূর্তের গোছগাছ করতে করতে চল্লিশ মিনিট দেরি হয়ে গেলো। প্রিন্স যখন গাড়ি স্টার্ট দিলো, তখন ঘড়িতে বাজে আটটা চল্লিশ। সকালের নাস্তা করে বের হইনি। তাই এইচইবি শপিংমলে গেলাম নাস্তা কেনার জন্য। খুঁজছিলাম গরম কিছু, কিন্তু আমেরিকানদের ঠাণ্ডাপ্রীতি ভয়ংকর। এরা স্যান্ডউইচও ফ্রিজ থেকে বের করে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা খায়। তাই আমরাও গরম নাস্তা বলে কিছু পেলাম না। ঠাণ্ডা পাস্তা আর র‍্যাপ কিনলাম। এইচইবির পার্কিং লটে বসেই খেয়ে নিলাম। চার বছর আমেরিকায় থেকেও ঠাণ্ডা খাবারে অভ্যস্ত হতে পারিনি। তাই ইয়াক ইয়াক করতে করতে পেট ভরালাম। পাস্তার মধ্যে গোল গোল মোৎসারেল্লা পনির আর গোটা গোটা টমেটো দিয়ে রেখেছে। কাঁচা টমেটো খেতে আপত্তি নেই। কিন্তু একটা সামঞ্জস্য আছে তো? চেরি টমেটো বলে এখানে যে টমেটো পাওয়া যায়, সেটা আকৃতিতে চেরি ফলের মতো ছোটো। সেটা দিলেও বুঝলাম। কিন্তু দিয়েছে সেটার দ্বিগুণ আকৃতির টমেটো। পাস্তা মুখে লাগছে না, লাগছে শুধু টমেটো। প্রিন্স শেষমেশ পাস্তা আর মোৎসারেল্লা পনির খেয়ে পেট ভরালো। আমার খেতে হলো সবগুলো টমেটো। মন্দের ভালো হিসেবে র‍্যাপটা (wrap) খেলাম। র‍্যাপ হলো হাতরুটির ভেতর বিভিন্ন ধরনের বিচি (বিন/bean), মাংস, সবজি ইত্যাদির পুর দিয়ে পেঁচিয়ে দেওয়া। ছোটোবেলায় ভাজা ডিমকে রুটির ভেতর পেঁচিয়ে খেতাম। বড় হয়ে ডিমের বদলে মাংস খাই আর ডাকি ‘র‍্যাপ’। টেক্সাসের র‍্যাপ বলেই কিনা কে জানে, ভেতরে গরুর মাংস দিয়ে ঠাসা। ওহাইওর ক্লিভল্যান্ড শিল্প যাদুঘরে গিয়ে যে র‍্যাপ খেয়েছিলাম, সেটার কথা মনে পড়ে গেলো। ভেতরে মুরগীর কয়টা টুকরো দেওয়া হয়েছে, হাতে গোনা যাচ্ছিলো। পুরো র‍্যাপ ভর্তি শুধু বিভিন্ন ধরনের বিচি। আর এখন গরুর রাজ্যে এসে বিন্স খুঁজে পাচ্ছি না, দাঁতে লাগছে খালি মাংসের টুকরো।

পেটপুজো সেরে ভুস করে গাড়ি টান দিলাম। চলে আমার গাড়ি হাওয়ার বেগে উইড়া উইড়া! এখন আমরা বাসা থেকে খানিক দূরে ঘুরতে গেলে হাপিত্যেশ করে বলি, ‘ড্রাইভিংয়ের সময় ডানে বায়ে দেখার কিচ্ছু নেই। কী মরার জায়গা!’ কিন্তু পেন্সিল্ভেনিয়ায় ড্রাইভিং করে এবং প্যাসেঞ্জার সিটে বসে সেই মজা ছিলো। যেদিকে তাকাই, পাহাড় আর পাহাড়। রূপকথার মতো উঁচু, নিচু রাস্তা। যখন আপনি দূরপাল্লার পথ পাড়ি দেবেন, তখন আশেপাশে সুন্দর দৃশ্য না থাকলে সময় কাটানো মুশকিল। তাই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম ঘুমানোর। প্রথমদিন ঘুমিয়ে কাটাবো, দ্বিতীয়দিন হয়তো সুন্দর দৃশ্য শুরু হবে কারণ তখন আমরা টেক্সাস পার হয়ে যাবো। কিন্তু ওই যে, মানুষ ভাবে এক হয় আরেক…। আমি ঘুমাতে পারলাম না। চোখ দুটো আমার সাথে প্রতারণা করলো। তারা ঠাঁয় তাকিয়ে রইলো জানালা দিয়ে বাইরে। আমি দেখতে লাগলাম কলেজ স্টেশন পার হয়ে, ব্রায়ান পার হয়ে আমরা ছুটে চলেছি অজানা শহরের উদ্দেশ্যে। জিপিএসে দেখাচ্ছে অ্যামারিলো আরও চারশো মাইল দূরে। অবুক! এতক্ষণ কীভাবে কাটাবো?

ঘণ্টা তিনেক গাড়ি চালিয়ে ওয়াকো শহর পার হয়ে ফোর্ট ওয়ার্থে এলাম। ২০১৪ সাল থেকে উচ্চশিক্ষার পিছে ছুটতে ছুটতে টেক্সাসের বিভিন্ন শহরের নাম মুখস্ত হয়ে গেছে। এখন সেসব শহর পার হতে গিয়ে নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছি। ফোর্ট ওয়ার্থ শহরের ভেতর স্থানীয় চালকরা সব নিড ফর স্পিড খেলছে। সাঁই সাঁই করে বের হয়ে যাচ্ছে ডান-বাম দিয়ে। ইনডিকেটরের বালাই নেই, মন চেয়েছে টান মেরেছি গোছের। চোখের সামনে দেখছি ঝামেলায় পড়তে পড়তে অন্য গাড়িগুলো সামলে নিচ্ছে। শহরের ভেতর স্পিড লিমিট হাইওয়ের চেয়ে কম। কিন্তু এখানকার চালকেরা সেটা ভুল খেয়ে বসে আছে বা পাত্তা দিচ্ছে না। কী বিগাড়! আমরা যারা অন্য শহরে যাওয়ার জন্য ফোর্ট ওয়ার্থ শহরের থ্রু লেইন ব্যবহার করছি, তারা পড়েছি মুশকিলে। আমরা চালাচ্ছি ট্রাফিক আইন মেনে। কিন্তু খেলোয়াড়েরা আমাদের খেলে দিচ্ছে। নিঃশ্বাস চেপে বসে আছি কখন এই বেপরোয়া শহর থেকে বের হবো। হিউস্টন নিয়েও এমন কাহিনী শুনেছি। ওখানেও নাকি কেউ ইনডিকেটর চালাতে শেখেনি, স্পিড লিমিটও পাত্তা দিতে চায় না। যারা হিউস্টনে থাকেন, তারা তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত করবেন কি? ফোর্ট ওয়ার্থ থেকে হালকা ডানে চাপলেই ডালাস শহর। কিন্তু এইবার আর সেখানে যাওয়া হচ্ছে না। আরেকবার এসে ইটকাঠের ইমারত দেখে যাবো। বা আদৌ আসা হবে কি? বড় বড় দালান তো দেখার কিছু নয়। আর যদি দেখতেই হয়, নিউ ইয়র্ক যাবো।

কলেজ স্টেশন থেকে যত উত্তর-পশ্চিমে যাচ্ছি, বড় বড় গাছপালার সংখ্যা কমছে। বাড়ছে বাদামী রঙা মাটির দৃশ্য। সে মাটিতে ছোটো ছোটো ঝোপঝাড় আর বাদামী ঘাসের আনাগোনা। পাঁচ ঘণ্টা গাড়ি চালানোর পর দুপুর দুটো নাগাদ প্রিন্স জিজ্ঞেস করলো, ‘কোথাও নামবা? দুপুরের খাবার খাবা?’ অবশ্যই! পারলে এখানেই রাতে থেকে যাই। আরো তিন ঘণ্টা গাড়িতে বসে থাকার ইচ্ছে নেই। কিন্তু আমরা গরীব গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী। এতো বিলাসিতা আমাদের মানায় না। যেখানে ইচ্ছে সেখানে আমরা থেকে যেতে পারি না। খুব সমঝে চলতে হয়। এয়ারবিএনবি বলুন আর মোটেল, সবচেয়ে সস্তাটা খুঁজতে খুঁজতে আমরা গলদঘর্ম হই। তবে আরেকটু ভালো মানের গাড়ি কিনলে মোটেলে উঠা বাদ দিয়ে দেবো। গাড়িতেই রাত কাবার করবো। যেখানেই রাইত, সেখানেই কাইত আর কি। প্রচুর পর্যটক এভাবে টাকা বাঁচায়। আমাদেরও তাই ইচ্ছে। যা হোক, গুগল ম্যাপে খুঁজতে লাগলাম কোথায় খাওয়া যায়। এই জিনিসটা খুব কাজের। যাত্রাপথের আশেপাশে থাকা হোটেল, মোটেল, রেস্তোরাঁ – সবকিছুই সার্চ দেওয়া যায়। হঠাৎ চোখে পড়লো উইচিতা ফলস নামের একটা শহর আসছে সামনে। সেখানে ডেনি’স আছে। ডেনি’স যুক্তরাষ্ট্রের একটা চেইন রেস্তোরাঁ। মোটামুটি সব শহরেই এটা আছে। ভিতরে গিয়ে বসবেন, খেয়ে দেয়ে পনেরো শতাংশ বখশিশ দিয়ে চলে আসবেন। ডেনি’সের সাথে পরিচয় ঘটেছিলো বন্ধু ফরহাদের মাধ্যমে। ফরহাদ অবশ্য বলেছিলো, শিক্ষার্থী হিসেবে আট শতাংশ বখশিশ দেওয়া মানায়। সেই থেকে আমরা আট শতাংশই দিই। অনেক জায়গায় সরাসরি মেশিনে পে করতে হয়। সেখানে আট শতাংশ নির্বাচনের সুযোগ থাকে না। সেখানে শুরুই হয় পনেরো পারসেন্ট থেকে। এরপর বিশ, পঁচিশ… ইত্যাদি। ঠিক করলাম, ডেনি’সে যাবো। কমের মধ্যে এটাই ভালো।

কিছুক্ষণের মধ্যে উইচিতা ফলস চলে এলাম। ডেনি’সের পার্কিং লটে গাড়ি রেখে রেস্তোরাঁয় ঢুকলাম। ঢুকে কাউন্টারের সামনে দাঁড়ালাম। আপনি যদি কোনো রেস্তোরাঁয় বসে খেতে চান, মানে ডাইন ইন করতে চান, তাহলে কাউন্টারের সামনে দাঁড়াবেন। আপনাকে রেস্তোরাঁ কর্মী এসে একটা টেবিলে বসিয়ে দেবে। নিজে থেকে টেবিলে বসতে যাবেন না। কিন্তু ফাস্ট ফুড রেস্তোরাঁয় এরকম চলে না। সেখানে নিজের পছন্দমত টেবিলে গিয়ে ধপ করে বসে পড়ুন, কেউ কিচ্ছুটি বলবে না। আমরা যখন কর্মীর পিছু পিছু টেবিলের দিকে যাচ্ছি, আশেপাশের টেবিল থেকে শ্বেতাঙ্গ কাস্টোমাররা আড়চোখে তাকাতে লাগলো। পুরো রেস্তোরাঁয় শুধু আমরা দুইজন বাদামী চামড়া। বাকিরা সব শ্বেতাঙ্গ। অদ্ভুত হলেও সত্যি, নিরানব্বই ভাগ কাস্টোমারই বুড়োবুড়ি। একদম বাটলারের মতো অবস্থা। পেন্সিল্ভেনিয়ার যে শহরে চাকরি করতাম, সেখানেও বাদামী চামড়ার মানুষ ছিলো হাতেগোনা। আমি আর প্রিন্স যখন রাস্তা দিয়ে হাঁটতাম, মানুষজন তাকিয়ে থাকতো। একজন, দুজন কৃষ্ণাঙ্গ হয়তো চোখে পড়েছিলো আমাদের, এর বেশি নয়। আর বেশীরভাগ অধিবাসীই বুড়োবুড়ি। আজব এক গ্রাম! তবে মাস ছয়েকের ভেতর আমাদের এপার্টমেন্টে এক কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ আর এক ভারতীয় তরুণের আবির্ভাব ঘটলো। কিছুদিন পর এলো আরও এক ভারতীয় দম্পতি। হয়তো এখন আরও বেড়েছে অন্য রঙের মানুষের মেলা। অথবা কে জানে, যারা এসেছিলো সবাই চলে গিয়ে আবারও ওয়ান অ্যান্ড অনলি সাদা চামড়া দিয়ে ভরে গেছে বাটলার। আমরা একটা অনুকল্প দাঁড় করিয়েছি ছোটো গ্রাম বা শহরগুলোয় কেনো সাদা চামড়া এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রাধান্য। কারণ এসব জায়গায় চাকরি এবং বিনোদনের স্বল্পতা। অন্য দেশ থেকে যারা যুক্তরাষ্ট্রে আসে, বেশীরভাগই বড় শহরে চাকরি করতে চায়। ছোটো শহর বা গ্রামের চাকরিতে ভালো টাকাপয়সা পাবেন না। আইম্যাক্সে সিনেমা দেখতে হলেও যেতে হবে এক ঘণ্টা দূরত্বের বড় কোনো শহরে। প্রতি পদে হতে পারেন বর্ণবাদের শিকার। তাহলে কীসের জন্য আসবে মানুষ এসব জায়গায়? আমার মতো যারা দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়ে এখানে আসে, তারাও এক বছর পর বের হওয়ার রাস্তা খুঁজে। একই কাণ্ড তরুণ তরুণীদের বেলায়। এসব শহরে বড় হয়ে এক পর্যায়ে সবাই বাইরে চলে যায়। পড়ে থাকে বুড়োদের দল। এরা এখানে বাড়ি বানিয়ে ফেলেছে। নড়ার জায়গা নেই বা জায়গা থাকলেও ইচ্ছে নেই। এখানেই জন্ম, এখানেই মৃত্যু।

ডেনি’সের টি-বোন স্টেকের নমুনা (আমরা ছবি তুলতে ভুলে গিয়েছিলাম)

বাটলারে থেকে থেকে একটা ভালো জিনিস রপ্ত করেছি আমরা। কারো নজরকে পাত্তা না দেওয়া। যে কারো আপনার দিকে তাকিয়ে থাকার অধিকার আছে। আপনি সেটা গ্রাহ্য না করলেই হলো। আপনি আপনার মতো চিল মুডে থাকুন। আমরাও টেবিলে বসে নিজেদের মতো আড্ডা মারতে লাগলাম। ওয়েটার এসে মেনু দিয়ে গেলো আর পানীয়ের অর্ডার নিয়ে গেলো। আমি শুধু পানি খাবো, প্রিন্স খাবে কোক। মেনুতে খাঁটি আমেরিকান কুইজিনের ছবি। মেক্সিকান খাবারের মধ্যে শুধু নাচোস চোখে পড়লো। কিন্তু আজ কোনো মেহিকান খাবার নয়। আজ আমরা ফুল আমেরিকান মোডে আছি। তাই টি-বোন স্টেকের ছবি দেখে ঠিক করলাম, এটাই খাবো। টেক্সাস গরুর রাজ্য। এরা নিশ্চয় সেই মজার টি-বোন স্টেক বানাবে! ওয়েটারকে একটা টি-বোন স্টেক, আর সাইড ডিশ হিসেবে খোসাসহ আলু ভাজা আর ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের কথা বললাম। একজনের জন্য অর্ডার দিলাম। ওটাই ভাগ করে দুজন খাবো। আমেরিকানদের সারভিং সাইজ বিশাল। একজনের খাবার দিয়ে দুইজনের পেট ভরে যায়। ওয়েটার অর্ডার নিয়ে যাওয়ার পর মনে হলো, আরে! মনের ভুলে আলুর দুই প্রকারের পদ অর্ডার দিয়ে ফেলেছি। অন্য কোনো সবজির কথা বলার দরকার ছিলো। প্রিন্স বললো, ‘আর ঝামেলায় যাওয়ার দরকার নেই। আলুই খাবো।’ বেশ! পনেরো মিনিটের মধ্যে চারশো গ্রাম ওজনের গরুর মাংস ভাজা, দুই প্রকারের আলু ভাজা আর মাখন দিয়ে টোস্ট করা দুটো পাউরুটি চলে এলো। বলুন, এগুলো একজনের খাবার? ওয়েটারটা অতিরিক্ত একটা থালা দিয়ে গেছে যেন আমরা ভাগাভাগি করে নিতে পারি খাবার। পানীয় হিসেবে স্মুদিগুলো দেখতে ভালো লাগছিলো বলে একটা পাঁচমিশালী ফলের স্মুদি অর্ডার করলাম। এখানে বসে খাবো না, নিয়ে যাবো। এই ধরনের অর্ডারকে বলে ‘টু গো’। ওয়েটার জানালো, এটা বানানোর উপাদান এ মুহূর্তে ওদের হাতে নেই। আচ্ছা, তাহলে আমের স্মুদি নিই? ওয়েটার শুকনো মুখে বললো, এটা বানানোর উপাদানও এ মুহূর্তে ওদের হাতে নেই। যা বাবা! তাহলে আর কী? শেষ যে অপশন দেখা যাচ্ছে, সেটাই দাও। ওয়েটারের মুখে হাসি ফিরে এলো। বুঝলাম স্ট্রবেরি ব্যানানা স্মুদি বানানোর উপাদান পাকশালায় আছে।

(চলবে)

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
100 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post ছবি ব্লগঃ রকি পর্বতমালা, গ্রেট স্যান্ড ডিউন এবং অন্যান্য (পর্ব ৪)
Next post পিএইচডি দিনলিপি – ১৩ (ইতং বিতং)