2 0
Read Time20 Minute, 3 Second

আজকের লেখা সেইসব ভাইবোনের উদ্দেশ্যে, যারা ভাবেন “একবার খালি আম্রিকা যাইতে দে, ঘুইরা ফাডায়ালমু।” এই ভাবনার সাথে বাস্তবের যে কী ফারাক, তা যদি কেউ আমায় বলত! আমার মত হতাশ যেন আর কোন বান্দাকে হতে না হয়, সেজন্য সমাজসেবা টাইপের এই লেখা। এও বলে রাখছি, সবার সাথে আমার অভিজ্ঞতা নাও মিলতে পারে। সেজন্য আবার আমাকে ধুয়ে দেবেন না। আমার দেখা বেশিরভাগ নতুন শিক্ষার্থীর এই হাল হয়েছে। সেই প্রেক্ষাপট থেকে লেখার উৎপত্তি। আপনি যদি এদেশে পা দিয়েই এমন কোন দলের সদস্য হয়ে যান যারা খালি ঘুরে, রাইত বিরাইতে গাড়ি নিয়ে হুঁশ করে বেরিয়ে পড়ে, এক মিনিটের পরিকল্পনায় তাম্বু নিয়ে ক্যাম্পিঙয়ে চলে যায়, তাহলে আপনি স্বর্গে আছেন। আমার মত অভাগা শিক্ষার্থী, যাদের সাথে এমন গ্রুপের পরিচয় ঘটেনি, তারা আমার লেখায় পূর্ণ সমর্থন দেবে বলে আমার ধারণা। সাথে ভবিষ্যত শিক্ষার্থীদেরও একটা রিয়েলিটি চেক হয়ে যাবে। কী বলেন?

ফেসবুকের উচ্চশিক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন পেইজ থেকে আমার ধারণা হয়েছিল আমেরিকায় ঘোরাঘুরি করা খুব সহজ কাজ। সবাই প্রতি সপ্তাহান্তে ঘুরতে যায়। কিন্তু এই ঠুলি চোখ থেকে খুলে পড়ল এখানে আসার দুইমাসের মাথায়। দুইমাসের মধ্যেও শহরের বাইরে বের হতে পারলাম না ঘোরাঘুরির জন্য। শুধু মুদি বাজার করার জন্য সপ্তাহে একবার আনজাম ভাইয়ের গাড়িতে করে ওয়ালমার্ট আর মাসে একবার শহরের বাইরে একটা এশিয়ান দোকানে গিয়ে চিংড়ি কিংবা পম্পানো মাছ কিনে আনা। ঘোরাঘুরি বলতে এটুকুই। আমরা যারা প্রথমবারের মত আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে আসি, আমাদের বেশিরভাগের ধারণা থাকে না যুক্তরাষ্ট্র কত বড় দেশ। ধীরে ধীরে আমাদের চোখে আয়তন বিষয়ক নানা রসিকতা ধরা পড়তে থাকে আর আমরা হতাশ হতে থাকি। এই যেমন, প্রায়ই ইয়োরোপীয়দের নিয়ে এই রসিকতা শুনবেনঃ ওরা বলে, “এক ঘণ্টা গাড়ি চালালে আমরা আরেক দেশে চলে যেতে পারি।” আমেরিকানরা বলে, “এক ঘণ্টা গাড়ি চালালে আমরা একটা অঙ্গরাজ্যের ভেতরেই থাকি, আরেক দেশ তো দূর কি বাত!” টেক্সাসের মানুষজন বলে, “এক ঘণ্টা গাড়ি চালালে আমরা এক শহরের এ মাথা থেকে ও মাথা যেতে পারি। আরেক অঙ্গরাজ্য তো পরের কথা।” তাহলেই বুঝুন যুক্তরাষ্ট্র কী বিশাল! এই দেশের ভিতরে ইউরোপের কতগুলো দেশ এঁটে যায় দেখুন ছবিতে। তাই এখানে না আসা পর্যন্ত ইউরোপীয়দের মত আমাদেরও ঠাহর করা সম্ভব হয় না যুক্তরাষ্ট্রের আয়তন। বুঝতে পারি না এখানে ভ্রমণ করা মানে এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়া। তার উপর শুনলেন কেবল অখণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের কথা। এর বাইরে আছে আলাস্কা, যেটা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে লাগোয়া নয়, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় অঙ্গরাজ্য। আছে পুয়ের্তোরিকোর মত খণ্ড দ্বীপ যেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের আওতাধীন। সব মিলিয়ে খুবই খারাপ অবস্থা!

যুক্তরাষ্ট্র ছিল আমার স্বপ্নের দেশ। নব্বইয়ের দশকের ছেলেমেয়েরা হয়ত বিদেশ বলতে আমেরিকাকেই বুঝত, কে জানে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল আর হুমায়ূন আহমেদের জীবনী পড়ে কত ছেলেমেয়ে আমেরিকা আসার কথা ভেবেছে! অনেকে আমার মত আমেরিকা আসাকে জীবনের ধ্যান জ্ঞান বানিয়ে ছেড়েছে। এমনও সময় গেছে যখন ভাবতাম আমেরিকায় বসবাসকারী কাউকে বিয়ে করে এদেশে চলে আসব। কিন্তু অনার্স মাস্টার্স পাশ করতে করতে ফিলিপ্স বাত্তির মত মাথায় জ্বলে উঠল আরেকটা চিন্তা। আমেরিকায় আসার জন্য অন্য কারো উপর নির্ভরশীল হতে হবে কেন? নিজেই তো লেখাপড়া করার জন্য আমেরিকা যেতে পারি! কাউকে বিয়ে করে নয়, নিজের যোগ্যতায়। এই চিন্তা আসার পর থেকে জীবন পাল্টে গেলো। ওই যে বলে না, “দৃষ্টিভঙ্গি বদলান, জীবন বদলে যাবে”? ঠিক তাই। এরপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার জন্য উঠেপড়ে লাগলাম। যারা এর ভেতর দিয়ে গেছেন, তারা জানেন কী পরিমাণ সময় খরচ হয় পুরো ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করতে। তার উপর করতাম নয়টা-সাতটা চাকরি (জ্বি, ঠিক পড়েছেন। সকাল নয়টা থেকে সন্ধ্যে সাতটা)। বাসায় ফিরে বিশ্ববিদ্যালয়-প্রোগ্রাম-প্রফেসর নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি, কোথায় কোথায় আবেদন করব তার তালিকা তৈরি, টাকাপয়সার যোগাড়, রেকোমেন্ডেশন নিয়ে দৌড়াদৌড়ি। এসব করতে গিয়ে সমস্ত সময় খরচ হয়ে গেল। স্বপ্নের দেশের পঞ্চাশটা অঙ্গরাজ্য নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটির আর সময় পেলাম না। জানা হল না যুক্তরাষ্ট্র কত বড় দেশ। এই দেশে যে ছেষট্টিটা বাংলাদেশ এঁটে যায়, সেটাও জানলাম না। শুধু “ল্যান্ড অফ অপরচুনিটিতে ল্যান্ড করা মাত্রই টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া ঘোরা শুরু করে দেব” পরিকল্পনা নিয়ে ২০১৮ সালের ওয়ান ফাইন ইভিনিং বিমানে উঠে পড়লাম। চলে এলাম মিজৌরি অঙ্গরাজ্যের সেন্ট লুইস বিশ্ববিদ্যালয়ে। এসে টের পেলাম বাস্তবতা কাকে বলে। বাস্তবতার হাইড্রেশনে পড়ে, মানে পড়াশোনার চাপে আর টাকাপয়সার টানাটানিতে প্রথম ছয় মাস কোথাও ঘোরাঘুরি হল না।

প্রচণ্ড মন খারাপ করে ২০১৮ সালের বড়দিনের ছুটি শুরু করলাম। বারবার মনে হতে লাগল, এ কেমন আমেরিকায় এলাম? এমন তো হওয়ার কথা ছিল না! ফেসবুকে দেখতাম মানুষজন পাহাড়, পর্বত, সাগর, জঙ্গল তোলপাড় করে ফেলে। অথচ আমরা এখন পর্যন্ত সেন্ট লুইস শহরের বাইরেই যেতে পারিনি। একদিন ট্রামে করে পাশের অঙ্গরাজ্য ইলিনয়ের ছোট্ট এক শহরে গিয়েছিলাম, ট্রাম স্টেশনেই বসে ছিলাম, পরের ট্রাম ধরে ফেরত চলে এসেছিলাম। আমাদের ড্রাইভিং লাইসেন্সও নেই যে নিজেরা গাড়ি চালিয়ে কোথাও যাব। ভাইবেরাদরেরাই ভরসা। কিন্তু উনারা খুব একটা ঘোরাঘুরি করেন না। আমি আর থাকতে না পেরে আনজাম ভাইকে জিজ্ঞেস করে ফেললাম, “বড়দিনের ছুটিতে কোথাও ঘুরতে যাবেন না?” আনজাম ভাই কল দিলেন শাওন ভাইকে। শাওন ভাই রাজী হলেন কাছেপিঠের একটা স্টেট পার্কে ঘুরতে যেতে। আমাদের তখন এমন অবস্থা যে, ঘর হইতে দুই পা ফেলিয়া কোথাও যেতে পারলেই খুশি। কাছে নাকি দূরে, বাছবিচারের অবস্থা নেই। সে-ই প্রথম শহরের বাইরে কোন ভ্রমণে আমাদের হাতেখড়ি হল। শাওন ভাই গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গেলেন ঘণ্টা তিনেক দূরে অবস্থিত ওযার্ক স্টেট পার্কে। পথিমধ্যে বারবার আমার হৃদয় কৃতজ্ঞতায় ভরে যেতে লাগল। এত কষ্ট করে গাড়ি চালিয়ে ভাই এত দূরে যাচ্ছেন! তখনও যুক্তরাষ্ট্রের দূরত্ব বিষয়ক ধারণা হয়নি আমার। বাসা থেকে ওয়ালমার্ট গেলেই মনে হত কত দূরে এসেছি! অথচ দুই, তিন ঘণ্টা এখানে কোন দূরত্বই নয়। মানুষ এক ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে অফিসে যায়। বুঝুন! তারপরও যে ভাই আমাদের নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন, সেটাই বা কম কী? একজন নতুন আসা শিক্ষার্থীর জন্য এটা পরম পাওয়া। উনি সেদিন না নিয়ে গেলে আর কবে টুর দেওয়া হত, জানি না। ওই টুর দিয়ে মন্দের ভালো হল যে, আমেরিকায় ভ্রমণ কীভাবে করতে হয়, সে সম্পর্কে ধারণা হল। তক্কে তক্কে রইলাম নিজেদের মত ঘোরাঘুরি করার। প্রথম প্রথম সাহস হত না দুজন মিলে দূরে কোথাও যাওয়ার। সাথে ভাইদের নিতে চাইতাম। পরে বুঝলাম দিস ইজ দা ওয়ে। ঘুরলে এভাবেই ঘুরতে হবে। দলগত ঘোরাঘুরি সির্ফ মুশকিল হি নেহি, না মুমকিন হ্যাঁয়। যারা চ্রমুদাসের এই লেখা পড়েননি, তারা পড়লে বুঝবেন দলগত ভ্রমণ কী জিনিস। তাই ওযার্ক পার্ক ঘুরে আসার এক বছর তিন মাস পর ২০২০ সালের মার্চে দুজনের বুদ্ধিতে যা কুলাল, সেটা দিয়ে লাস ভেগাস ভ্রমণ করে ফেললাম। সাথে ছিল কয়েক মুহূর্তের গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন দর্শন। দুইদিনের সেই ভ্রমণ সফলভাবে শেষ করে আত্মবিশ্বাসের পারদ আকাশ ছুঁয়ে ফেলল। সেই পারদের ঠ্যালায় এখনও ভ্রমণ করে যাচ্ছি শুধু দুজন মিলে।

২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে চাকরি নিয়ে পেন্সিল্ভেনিয়া অঙ্গরাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এক গঞ্জে এলাম। তখন লেখাপড়ার চাপ আর রইল না, ঘোরাঘুরির একটা সুযোগ তৈরি হল। ফুল টাইম কাজ করে হাতে কিছু পয়সাও জমল। তাই যুক্তরাষ্ট্রের মানচিত্র বের করে গবেষণা শুরু করলাম। যুক্তরাষ্ট্রের ভূগোল সম্পর্কে অতি সামান্য জ্ঞান নিয়ে যে দুটো মানুষ বিমানে চেপে বসেছিল, তারা অবাক হয়ে দেখল, নায়াগ্রা জলপ্রপাত তাদের বাসা থেকে মাত্তর চার ঘণ্টার রাস্তা। নায়াগ্রা জলপ্রপাত! চিন্তা করা যায়? মাত্র তিন ঘণ্টা দূরে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ‘ওয়াশিংটন ডিসি’। কী অবস্থা! আনন্দের আতিশয্যে উন্মাদ হয়ে শুরু করলাম ভ্রমণ পরিকল্পনা, ভুলে গেলাম দুনিয়ায় চলছে মহামারী। যখন পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে অফিস থেকে ছুটি নিতে গেলাম, ওরা বলল কোভিড-১৯ এর জন্য পেন্সিল্ভেনিয়া থেকে অন্য অঙ্গরাজ্যগুলোয় ভ্রমণ করা নিষেধ। যদি ভ্রমণ করিও, চৌদ্দ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। কোয়ারেন্টিনে থাকা মানে কর্মক্ষমতা অনেকাংশে কমে যাওয়া। ব্যাপারটা আমার পছন্দ নয় বলে চাকরিরত অবস্থায় ওহাইও আর ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার বাইরে ঘুরতে যাওয়া হল না। অফিস এই দুটো অঙ্গরাজ্যের ব্যাপারে শিথিল ছিল কারণ আমাদের অফিস ছিল ওহাইও আর ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার সীমানার একদম কাছাকাছি। অনেক কর্মী এ দুটো অঙ্গরাজ্যে থাকত, সেখান থেকে অফিসে আসা-যাওয়া করত। ফলে এ দুটোতে ঘোরাঘুরি করতে বাধা ছিল না। আমরা পেন্সিল্ভেনিয়ায় এমনই ঘোরা ঘুরলাম যে, একটা স্টেট পার্কও বোধহয় বাদ রাখিনি। প্রতি সপ্তাহান্তে চলে যেতাম একটা না একটা পার্কে। পশ্চিম ভার্জিনিয়া আর ওহাইওতেও বেশ খানিকটা ঘুরেছি। শীতকালে বেশিদূর যাওয়া সম্ভব না হলে বাসার আশেপাশেই কোনো খুচরা খাচরা পার্কে চলে যেতাম। তাও যেতাম। ইস্ট কোস্ট জায়গাটা এতো সুন্দর যে, ছুটির দিনে বাসায় বসে থাকা আমাদের জন্য শাস্তির মত ছিল। কেন এই শাস্তি মাথা পেতে নেব?

২০২১ সালের জুন মাসের মাঝামাঝিতে চাকরি ছেড়ে দিলাম। এরপর ঘোরাঘুরিতে কোন বিধিনিষেধ রইল না। তার উপর আমরা দুজনই করোনাভাইরাসের ফুল ডোজ টিকা নিয়েছিলাম। তাই নিশ্চিন্ত ছিলাম জনসম্মুখে গেলে সমস্যা হবে না। নিষেধের বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় একের পর এক পরিকল্পনা করতে লাগলাম ঘোরাঘুরির। ওই বছরের আগস্ট থেকে টেক্সাসে আমার পিএইচডি শুরু হওয়ার কথা ছিল। এর আগেই যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য-অতলান্তিক এলাকাটা ঘুরে দেখা উচিৎ হবে। এই এলাকায় আছে নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সি, ডেলাওয়ার, মেরিল্যান্ড, ওয়াশিংটন ডিসি, পেন্সিল্ভেনিয়া, ভার্জিনিয়া আর পশ্চিম ভার্জিনিয়ার মত অঙ্গরাজ্য। যেহেতু পেন্সিল্ভেনিয়ার বেশ বড় একটা অংশ আমাদের দেখা শেষ, তাই নজর দিলাম নিউ ইয়র্ক, মেরিল্যান্ড, ওয়াশিংটন ডিসি আর ভার্জিনিয়ার প্রতি। নিউ ইয়র্কে আছে নিউ ইয়র্ক সিটি, সাথে নায়াগ্রা জলপ্রপাত। মেরিল্যান্ডের বাল্টিমোরে আছে আমার স্বপ্নের জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়। ওয়াশিংটন ডিসিতে কী নেই? বিশ্বখ্যাত সব স্মিথসোনিয়ান জাদুঘর, হোয়াইট হাউজ, ক্যাপিটল হিল, কংগ্রেস লাইব্রেরি…। ভার্জিনিয়াতে আছে শিনানডোয়া জাতীয় উদ্যান। তাই পরিকল্পনামাফিক ঘুরে ফেললাম নায়াগ্রা জলপ্রপাত, ইরি হ্রদ (দুনিয়ার পাঁচটা গ্রেট লেকের একটা), ওয়াশিংটন ডিসি, লুরে গুহা আর শিনানডোয়া জাতীয় উদ্যান। জন্স হপকিন্সে যাওয়া হল না, বদলে হইহল্লা করে দুইদিন কাটিয়ে এলাম মেরিল্যান্ডের জর্জটাউনে অবস্থিত এক প্রিয় ভাইয়ের বাসায়। নিউ ইয়র্ক সিটিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেও যাওয়া হল না কোভিডের ভয়ে। বদলে নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের ইথাকা নামের এক মফস্বল থেকে ঘুরে এলাম। এখানেই অবস্থিত বিশ্বখ্যাত কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা গিয়েছিলাম বিজ্ঞানি কার্ল সেগানের স্মরণে। কর্নেলে উনি পড়িয়েছেন বহু বছর। উনার অফিস, আবাস, সমাধিস্থল – সবকিছু দেখে এসেছি। ইথাকাও চক্কর মেরেছি পুরোদমে। পাহাড়ের উপর বানানো অতি সুন্দর এক মফস্বল।

এরপর তো চলেই এলাম টেক্সাসে। এখানে এসে আরও কিছু জায়গায় ঘুরতে গিয়েছি। কলোরাডোর রকি পর্বত আর গ্রেট স্যান্ড ডিউন, নিউ মেক্সিকোর কাপুলিন আগ্নেয়গিরি, ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিস্কো, টেনেসির মেম্ফিস, নিউ ইয়র্কের নিউ ইয়র্ক সিটি। হ্যাঁ, অবশেষে পদধূলি দিতে পেরেছি NYC-তে। দেখেছি ব্রুকলিন ব্রিজ, টাইমস স্কয়ার, স্ট্যাচু অফ লিবার্টি। ছবিতে হালকা নমুনা দিলাম আমাদের ঘোরাঘুরির। খুব বেশি কিছু নয়, কিন্তু আমাদের যাত্রা মাত্র শুরু। টেক্সাসের মত পাণ্ডব-দ্রৌপদী বর্জিত অঙ্গরাজ্যে থেকে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করা চাট্টিখানি কথা না। আট ঘণ্টা গাড়ি চালানোর পরও আপনি টেক্সাসেই থাকবেন। তাই খুব সহজে ভ্রমণ পরিকল্পনা করতে পারি না। তবে সামনে আরও কিছু রোমাঞ্চের আশায় দিন গুনছি। ভালোয় ভালোয় বাস্তবায়ন করতে পারলে আপনারা আবারও আমার ব্লগের ঠ্যালায় ভেসে যাবেন।

লেখা শেষ করার আগে নতুন আসা ভাইবোনদের বলছি, আসার সাথে সাথে ঘোরাঘুরির সুযোগ না পেলে মন খ্রাপ করবেন না। লাইফ সাক্স। যত দ্রুত এই চিরন্তন সত্যটা মেনে নিবেন, ততই আনন্দে থাকবেন। আমি পারিনি বলে মাথায় চাপ পড়তে পড়তে চুল পেকে গেছে অনেক। অন্যেরা হাওয়াই যাচ্ছে আর আপনি পাশের শহরে যেতে পারছেন না, অন্যেরা আলাস্কায় গিয়ে ইগলুতে রাত কাটাচ্ছে অথচ আপনার রাত কাটছে সেসব ছবিতে লিক-কমান্ড দিয়ে, এসব তুলনা দিয়ে নিজের জীবনে অশান্তি ডেকে আনবেন না। সুযোগের অপেক্ষায় থাকুন। সুযোগ না পেলে বানিয়ে নিন। ড্রাইভিং শিখুন, লাইসেন্স বাগান, তারপর ‘আস্তা লা ভিস্তা’ বলে লক্করঝক্কর মার্কা গাড়িটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন। তরুণ বয়সের জোশে খালি রাস্তায় একশোতে টান মারবেন না। মনে রাখবেন আপনি জর্মনির অটোবানে গাড়ি চালাচ্ছেন না। এত হিতোপদেশ দেওয়ার একটাই কারণ, আপনাদের উপদেশ দেওয়ার তালে তালে যেন আমি নিজে এগুলো মেনে চলি। নতুবা তো আর সৎ কাজ হল না!

Happy
Happy
50 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
50 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post পিএইচডি দিনলিপি – ২০ (যেভাবে চলছে ২০২৪-এর গ্রীষ্মকালীন পিএইচডি)
Next post পিএইচডির শেষ সেমিস্টারের স্মৃতি (পর্ব ১)