Read Time19 Minute, 55 Second
আগে থেকে মারুদুতের সাথে কথা বলে রেখেছিলাম যে, ২৭ তারিখ ১১ ঘণ্টার জন্য তার গাড়িটা ভাড়া করতে চাই। তাহলে উনি আর উবার হিসেবে আমাদের সাথে থাকবেন না, এজেন্ট কার হিসেবে থাকবেন। লোকটা বেশ মজার। তাই সারাদিন তার সাথে ঘুরতে কোনো অসুবিধে হয়নি। বরং উনি আমাদের এমন সব জায়গায় নিয়ে গেছেন, যেখানে যাওয়ার প্ল্যান আমাদের ছিলই না। আর না গেলে বুঝতেও পারতাম না, কত বড় মিস হয়ে যাচ্ছিলো! ২৭ তারিখ সকাল নয়টায় মারুদুতকে আসতে বলেছিলাম। কিন্তু আমরাই ঘুম থেকে উঠতে পারিনি নয়টার দিকে। মারুদুত এসে কল করে উঠালেন আমাদের। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে থাকার হোটেলের পাশে বিশাল বড় যে খাওয়ার হোটেল আছে, সেটায় ঢুকলাম। একেকদিন একেক হোটেল থেকে খেয়ে বুঝতে চাচ্ছিলাম, খাবারের স্বাদ আসলে কেমন। অনেক বড় হোটেল হলেও খাওয়ার দাম গতকাল যেখানে নাস্তা করেছিলাম, সেই ছোট হোটেলের চেয়ে কম। অর্থাৎ ছোট মরিচের যে ঝাল বেশি, আবারো প্রমাণিত।
বরাবরের মত নাসি গোরেং, মি গোরেং, আইস টি, বালিনিজ কফি আর মিনারেল ওয়াটার অর্ডার করলাম। বিল এলো ৩৪৯০০০ রুপিয়া। এসব খাবার আপনি যেকোনো সময়েই খেতে পারেন। আমরা যেমন হাত রুটি, পরোটা, পাউরুটি ইত্যাদিকে সকালের নাস্তা হিসেবে খাই, তেমন আলাদা করে বালিতে সকালের নাস্তা কিছু দেখলাম না। চাইলে আপনি ইংলিশ ব্রেকফাস্ট করতে পারেন, কিন্তু বালি গিয়ে তাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার না খাওয়াটা লস মনে হচ্ছিলো। তাই আমরা যতদূর পেরেছি, বালিনিজ খাওয়াই খেয়েছি। উল্লেখ্য, ছয়জনের খাবারের পরিমাণ এত বেশি ছিল যে, পাঁচটা অর্ডার করলেই হয়ে যেত। এরা সবসময় একজনের সাপেক্ষে বেশি খাবার দেয়। কে জানে, বালিতে ওটাই মানুষের খাওয়ার স্বাভাবিক পরিমাণ কিনা!
চলছে গাড়ি যাত্রাবাড়ী… থুক্কু নুসা দুয়া
আজকে আমাদের প্রথম গন্তব্য হল নুসা দুয়া বিচ। নুসা মানে দ্বীপ, দুয়া মানে দুই। দুটো দ্বীপ নিয়ে এই অঞ্চলটি গঠিত। তবে তখনও জানতাম না, নুসা দুয়া শুধু একটা বিচই নয় বরং বিশাল একটা সংরক্ষিত এলাকা। আমরা যখন খেয়ে দেয়ে গাড়িতে উঠলাম, মারুদুত জিজ্ঞেস করলেন, আমরা কি টোল দিয়ে সাগরের উপরের রাস্তা দিয়ে যেতে চাই, নাকি টোল ছাড়া শর্টকাট রাস্তা দিয়ে যেতে চাই? বিমান যখন নুরাহ রাই বন্দরে নামছিল, তখন দেখেছিলাম, সাগরের উপর দিয়ে এঁকেবেঁকে অসম্ভব সুন্দর একটা ব্রিজ চলে গেছে। পরে জেনেছিলাম, এই ব্রিজ দিয়ে নুসা দুয়া যাওয়া যায়। তাই ঠিক হল, যত টাকাই টোল লাগুক না কেন, এই ব্রিজের উপর দিয়ে ভ্রমণ মিস করা চলবে না। মারুদুত অবশ্য শুধরে দিলেন, ‘বালিনিজ ভাষায় একে ব্রিজ বলে না, একে রোডই বলে।’
কুটা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে নুসা দুয়া অবস্থিত। যেতে আধা ঘণ্টার মত লাগলো। রাস্তায় কোনো ট্র্যাফিক জ্যাম নেই, বরং দু’পাশে অপূর্ব সব প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে ভ্রমণটা হয়ে উঠে আনন্দদায়ক। সাগরের উপর দিয়ে যখন যাচ্ছিলাম, তখন অঝরের খুব আফসোস হচ্ছিলো স্কুটি নিয়ে আসতে পারেনি বলে। এই রোডে স্কুটি চালাতে নাকি সেই মজা হতো। হঠাৎ মারুদুত গাড়ির কাচ দিয়ে ডানপাশে দেখতে বললেন। দূর পাহাড়ের গায়ে বিশাল একটা কিছু গড়ে উঠছে। জানালেন, এটা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিষ্ণু মূর্তি হতে যাচ্ছে। গরুড় পাখির পিঠে চড়া দেবতা বিষ্ণুর মূর্তি। বালিনিজ ভাষায় গরুড়কে বলে ‘গারুদা’। বালি গেলে অনেক জায়গায়ই গারুদা নামটা দেখতে পাবেন।
ছয়দিনের টুরে আমরা শুধু ভ্রমণ করেছি বালির দক্ষিণাঞ্চল। কুটা, নুসা দুয়া, সেমিনিয়াক, উলুয়াটু, সানুর, নুসা পেনিদা – সবই বালির দক্ষিণে অবস্থিত। উত্তরে উবুদ, পশ্চিমে কিন্তামানি, মাউন্ট বাতুর ইত্যাদি টুরিস্ট স্পট আছে বৈকি, কিন্তু আমাদের প্রধান আকর্ষণ ছিল সমুদ্র। তাই পাহাড়ের দিকে যাওয়া হয়নি। আবার বালি গেলে উত্তরাঞ্চল কাভার দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
তো, যা বলছিলাম। নুসা দুয়া এলাকাতে প্রবেশ করার জন্য একটা গেট দিয়ে ঢুকতে হয়, যেখানে আপনাকে প্রবেশ মূল্য দিতে হবে ২৫০০ রুপিয়া। বাইরের জগত থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা জগত এখানে। প্রাকৃতিক জিনিসকে কৃত্রিমভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। মানে ঘাস কেটে লন বানানো হয়েছে, পরিপাটি করে রাস্তা বানানো হয়েছে, পরিকল্পিতভাবে ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে। বুঝাই যায়, যথেষ্ট পরিকল্পনা করে জায়গাটা সাজানো হয়েছে। হবে নাই বা কেন? দুনিয়ার সব পাঁচতারা রিসোর্টে ভর্তি এই জায়গাটা, যার মধ্যে গ্র্যান্ড হায়াত, রিজ কারল্টন আর দা ওয়েস্টিন চোখে পড়ল। এলাকাটা বড়লোক আমেরিকানদের থাকার জায়গা হিসেবে খ্যাত। তবে আমরা অনেক রাশিয়ানও দেখেছি (ভাষা শুনে অনুমান করেছি আর কি)।
মারুদুত আমাদেরকে বিচের কাছাকাছি একটা জায়গায় নামিয়ে দিয়ে বললেন, গাড়ি পার্ক করার নির্ধারিত জায়গায় তিনি আমাদের জন্য অপেক্ষা করবেন। আমরা ফিরে এসে উনাকে কল করলেই হবে। অঝরের বুদ্ধি অনুযায়ী আমরা স্যান্ডেল খুলে গাড়িতে রেখে বের হলাম। ভাবলাম, সৈকতেই তো হাঁটবো। স্যান্ডেল না নিলেও চলবে। কিন্তু এটা যে কত বড় ভুল সিদ্ধান্ত ছিল, বিশেষ করে নুসা দুয়ার জন্য, সেটা টের পাওয়ার পর আবার গাড়িতে এসে স্যান্ডেল নেওয়ার মত অবস্থা ছিল না। যথাস্থানে সে গল্প করা হবে। আগ্রহের আতিশয্যে দৌড় দিলাম বিচের উদ্দেশ্যে। কিন্তু বিচ বহুদূর, তার আগে চোখে পড়লো শান্ত একটা চর। অগভীর সমুদ্রের মাঝে জেগে থাকা মাটিকে চর বলে কিনা, নিশ্চিত নই। তবে দেখতে একদম নদীর চরের মত। এদিকে পানি খুব হালকা, আর টলটল করে বইছে। বেশ দূরে একটা পৃথক দ্বীপের মত জায়গা দেখা যাচ্ছে, যেটাকে মূল ভূখণ্ডের সাথে যুক্ত করেছে আরেকটা চর। ভরা জোয়ারের সময় চরটা তলিয়ে যায়। তাই দ্বীপে যেতে হলে সমুদ্র শান্ত থাকতে থাকতেই যেতে হবে। অনেকে দেখলাম যাচ্ছেও।
আমরা যখন চরের ছবি তুলছি, তখন আকাশ কালো করে বৃষ্টি আসি আসি করছে
সমুদ্রের পারে বুনো ফুল
আমরা মূল সৈকতে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে পড়ায় দ্বীপে যাওয়ার কোনো পদক্ষেপ নিলাম না। তবে মূল সৈকতে যাওয়ার পথে বিশাল একটা লন পড়ে, যেখানে বিশাল একটা কৃষ্ণার্জুন মূর্তি মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। ইন্টারনেটে এই ছবিটা বেশ কবার দেখেছি বলে কাছে গিয়ে দেখার লোভ সামলাতে পারলাম না। মূর্তির কাছে যেতে যেতে দেখি, লনের বামপাশে চমৎকার সব প্রাকৃতিক দৃশ্য। সাগর আর বনজঙ্গল মিলে কি যে সুন্দর দৃশ্য তৈরি করে, সেটা নিজ চোখে না দেখলে পুরোপুরি ঠাহর হয় না।
কৃষ্ণার্জুনের মূর্তি বা ওয়াটার ব্লোতে যাওয়ার সময় যে লন বা বাগান পার হতে হয়, সেখানে ঢুকার সময় আপনাকে অভ্যর্থনা জানাবে এই হাতিগুলো
বাগানের ভেতরে ঢুকার সিঁড়ি
বাগানের ভেতরে থেকে বাইরের সিঁড়ির দিকে তাকালে এত সুন্দর একটা জায়গা চোখে পড়ে। পুরো নুসা দুয়াই এরকম পরিচ্ছন্ন, পরিপাটি
বিখ্যাত কৃষ্ণ আর অর্জুনের মূর্তি
মূর্তির বেশ কিছু ছবি তুলে আমরা রওনা দিলাম সৈকতের উদ্দেশ্যে। গিয়ে তো চক্ষু চড়কগাছ! একেই বলে স্বপ্নালু সৈকত। সাদা বালুর সৈকতের সাথে নীল রঙের সাগর। সৈকতে লোকজন খুবই কম। মোটামুটি নীরব বলা চলে। একদম আমার মনের মত। কিছু পরিচ্ছন্নতা কর্মী সৈকত থেকে বর্জ্য তুলে নিচ্ছে। সৈকতের উল্টো পাশে সারি সারি গাছের তলে খড়ের ছাউনিসহ চেয়ার পাতা। সেখানে বেশ কিছু টুরিস্ট সুইম কস্টিউম পরে শুয়ে বসে আছে। এ ধরনের একটা বিচ দেখার চিন্তায়ই মগ্ন ছিলাম আমি। শেষমেশ দেখা পেলাম প্রিয়ার। কিছুক্ষণ মুগ্ধ চোখে হা করে সৌন্দর্যটা পান করলাম। পানিতে নামতেও মন চাইছে, আবার নামলে এই যে দূর থেকে দেখার অনুভূতি, সেটা শেষ হয়ে যাবে বলে নামতে চাইছিও না। কঠিন রকমের উভয় সংকট! শেষে আর থাকতে না পেরে দুদ্দাড় নেমে পড়লাম পানিতে।

নুসা দুয়ার সাদা বালুর সৈকত
নেমে আরেকবার ধাক্কা। এত ঠাণ্ডা পানি! আসলে গোলাপ যে সুন্দর হলেও কাঁটা দিয়ে ভর্তি, ভুলে গিয়েছিলাম। এখানকার পানি কুটার মত শুরুতেই গভীর হয়নি, বরং অগভীর পানি দিয়ে আপনি কয়েকশো পা সামনে হাঁটতে পারবেন। আবার ঢেউও কুটার মত তীব্র নয়, তিন চারটা ধাপে আছড়ে পড়ছে না। বরং অনেক দূরে প্রথম ঢেউটা তৈরি হবার পর সামনে আসতে আসতে দুর্বল হয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে। শুধু সামান্য একটা ধাক্কা আসছে তীরের দিকে। এটা আমার আর স্বর্ণার জন্য ভালোই হল। বেশ রসিয়ে রসিয়ে সমুদ্রস্নান করতে পারবো। এত স্বচ্ছ পানি, আর পানির নিচে এত সুন্দর সাদা বালি দেখা যাচ্ছে যে, ভয়ডর মুহূর্তে কেটে যায়। তবে কিছুদূর এগিয়ে ছেলের দল চেঁচিয়ে উঠলো, “সাবধান! এদিকে এবড়ো খেবড়ো পাথর আছে। হাঁটাতে সমস্যা হচ্ছে।” তবুও সাহস করে এগিয়ে গেলাম, আর যা ব্বাবাহ! পায়ের তলে যেন ঠোকর দিয়ে বসলো নুড়ি পাথর আর প্রবালের চোখা প্রান্ত।
এত সুন্দর বিচে এ আবার কেমন উৎপাত? জুতা ছাড়া হাঁটা তো আসলেই মুশকিল দেখছি! তবে সান্ত্বনা এই যে, কয়েক পা এগিয়ে যাওয়ার পর পাথর বা প্রবালের দৌরাত্ম্য কমে এলো। আবারও নরম বালুতে পা পড়লো। এখানে আমার বুক পানি। তাই এরচেয়ে বেশিদূর যেতে সাহস পেলাম না। সাঁতার জানার দল যেতে যেতে একদম প্রথম ঢেউ অব্দি চলে গেলো। ওদের মজা দেখে আমার আফসোসও হচ্ছে, আবার আনন্দও লাগছে। একটু পর প্রিন্স এসে অভয় দিয়ে ওর সাথে আরও দূরে যেতে বলল। কিন্তু আমি চরম মাত্রার হাইড্রোফোবিক। নিজের কমফোরট যোনের বাইরে কখনো যাই না। তাই প্রিন্সকে পুরো টুর জুড়েই হতাশ হতে হয়েছে। আমাকে নিয়ে সে সাগরের অনেক মজা বা সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেনি। তাকে একা একা উপভোগ করতে হয়েছে।
যা হোক, নুসা দুয়ার অগভীর পানিতে নেমে একটা কাজের কাজ হল। পানিতে কীভাবে ভেসে থাকতে হয়, সেটা ছোট ভাই অঝর আমাকে আর স্বর্ণাকে শিখিয়ে দিলো। আমরা দুজন সেই মজা পেলাম। পানিতে শুয়ে নীলাকাশের দিকে তাকিয়ে থাকাটা অসাধারণ একটা অনুভূতি। জীবন সংসার সব অবাস্তব মনে হয়। নিচে কলকল শব্দে বয়ে চলা পানি, নির্ভার দেহ, সারা শরীরে ঠাণ্ডা একটা আবেশ, কান বন্ধ, আর উপরে অসীম আকাশ। দুনিয়ায় কিছু আছে কিনা, সে বোধ লোপ পেয়ে যায়। মনে হয়, বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে আমি একা। আমি একা একটা প্রাণী, ভেসে আছি অন্তত শুন্যতায়। বেশি কাব্যিক হয়ে গেলো? আচ্ছা, আপনি যখন নিস্তব্ধ বিচের পানিতে ভেসে থাকবেন, মিলিয়ে নেবেন আমার কথাটা।
ঘণ্টা আড়াই নুসা দুয়ার নীল পারাবারে কাটিয়ে আমরা উঠে এলাম। যেতে হবে আরও অনেক স্পটে। এজন্যেই কোথাও বেড়াতে গেলে অল্প কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে যাওয়া উচিৎ নয়। অন্তত দিন পনেরো ছুটি না নিলে সবসময় তাড়ার মধ্যে থাকতে হবে, এই বুঝি আরেকটা স্পট মিস হয়ে গেলো! যা হোক, বারিধি থেকে উঠে আমাদের গন্তব্য হল নুসা দুয়া ওয়াটার ব্লো। এটা এমন একটা জায়গা, যেখানে সমুদ্রের পানি পাথরে বাড়ি খেয়ে বিশাল উচ্চতায় উঠে। এই ঘটনা দেখার জন্য, আর সেই পানিতে ভেজার জন্য কাঠের তৈরি বাঁধানো ঘাটের মত আছে। কৃষ্ণার্জুনের মূর্তির ঠিক পেছনেই এই ঘাট। সেখানে যাওয়ার রাস্তাটা পাথর আর সিমেন্ট দিয়ে তৈরি। দুপুরের কড়া রোদে তেঁতে রাস্তাটা এমন গরম হয়ে আছে যে, পায়ের পাতা পুড়ে ‘গোরেং’ হয়ে গেলো। কোনোমতে দৌড়াতে দৌড়াতে গিয়ে ঘাটে উঠলাম। সেখানে আমরা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলাম পানির উথলে উঠার জন্য। কিন্তু সময়টা আমাদের অনুকূলে ছিল না। ভরা জোয়ারের সময় গেলে অসাধারণ একটা অভিজ্ঞতা হতো। আপনারা ইউটিউবে দেখতে পারেন অসাধারণ ঘটনাটা।
ওয়াটার ব্লোতে প্রবেশের গেট
ওয়াটার ব্লো দেখার জন্য যে কাঠের ঘাট আছে, সেখান থেকে সামনের সমুদ্রটা ঠিক এরকম সুন্দরই দেখায়
অবশ্য ওয়াটার ব্লো দেখতে যাওয়ার আগে আমরা সৈকত ঘেঁষে একটা ছোট্ট প্রবাল দ্বীপে গিয়েছিলাম এডভেঞ্চারের আশায়। ভেবেছিলাম, দ্বীপের মধ্যে গুহা টুহা পাবো। কিন্তু না, দ্বীপে গিয়ে উঠার পর দেখলাম, এটা বিশাল বিশাল এবং বহু প্রাচীন প্রবাল দিয়ে গঠিত একটা ছোট্ট ভূখণ্ড। পাথরে পরিণত হওয়া এককালের জীবন্ত প্রাণী ‘প্রবাল’-এর উপর অনেক তৃণ জন্মে আছে। কিচিরমিচির করছে বেশ কিছু পাখি। কিছু অভদ্র মানুষ পাথরের খাঁজে রেখে গিয়েছে প্লাস্টিকের বোতল। কীভাবে এত সুন্দর একটা জায়গাকে মানুষ নোংরা করে, বুঝে পাই না। পরে ওয়াটার ব্লো দেখতে গিয়ে বুঝেছিলাম, প্রবাল খণ্ডের যেপাশে আমরা ছিলাম, তার ঠিক উল্টো পাশেই ব্লোটা অবস্থিত। অর্থাৎ ওই প্রবাল খণ্ডে ধাক্কা খেয়েই পানি আকাশ পানে ছোটে।


ওয়াটার ব্লো দেখার পর নুসা দুয়া থেকে বের হলাম। এবার যাব উলুয়াটু মন্দিরে। লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে, কিন্তু ক্ষুধা খুব একটা টের পাচ্ছি না। চিন্তা করলাম জিম্বারান বিচে গিয়ে একেবারে ডিনার করবো। সেখানকার সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে ডিনার করার অভিজ্ঞতা নাকি স্বর্গীয়! মারুদুত গাড়ি চালাতে চালাতে বিভিন্ন জায়গা সম্পর্কে বলতে লাগলেন। উবুদ যেতে মোটামুটি চার ঘণ্টার মত লাগবে। তাই দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার প্ল্যান করলে ঘুরে মজা পাবো না। বাদ দিলাম উবুদ। এরচেয়ে নুসা পেনিদা দ্বীপে গিয়ে একরাত থাকার পরিকল্পনাতেই অটল রইলাম সবাই। এর মধ্যে ‘গারুদা বিষ্ণু কেঞ্চানা কালচারাল পার্ক’ অতিক্রম করলাম। এখানেই নির্মিত হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিষ্ণু মূর্তি। পার্কটা পার হবার কিছুক্ষণ পর মারুদুত বললেন, কাছেই একটা নতুন সি বিচ হয়েছে। মানুষজন খুব একটা যায় না ওখানে। কিন্তু আমরা চাইলে যেতে পারি। আরে! আমরা তো নীরব সৈকতই খুঁজছি। এখানে আবার না যাই কীভাবে? কিন্তু তখনও কি ছাই জানতাম, কী অপেক্ষা করে আছে আমাদের জন্য?