Read Time20 Minute, 23 Second
রাত নয়টা বাজে। আর ভাল লাগছে না পার্টিতে। হোটেলে চলে যেতে ইচ্ছে করছে। এক ঘুমে রাত পার করব, পরদিন বিমানে চেপে সোজা সেন্ট লুইস। অ্যালাব্যামায় মন টিকছে না। তবে কাল সকালে ভার্সিটির পক্ষ থেকে যে ট্যুরের ব্যবস্থা করেছে, সেটার জন্য একটু উত্তেজনা বোধ করছি। বার্মিংহ্যাম শহরটা ঘুরে দেখাবে। এমনিতেও লোকাল বাসে চেপে বার্মিংহ্যাম ঘুরার পরিকল্পনা করেছিলাম আমি আর কিউ। যখন শুনলাম ভার্সিটির নিজেদেরই ব্যবস্থা আছে, তখন বেশ আনন্দ হয়েছিল। তো, রাত সাড়ে নয়টা নাগাদ সবার মনে হল, অনেক হয়েছে। এবার ক্ষান্ত দেওয়া যায়। পাঠক, এখানে রাতের খানাদানা শেষ হয় সাতটার ভেতর, মানুষ ঘুমাতে যায় নয়টার ভেতর। দশটা মানে এখানে শুনশান রাত্রি। প্রথমে এসে আমি দারুণ ধাক্কা খেয়েছিলাম। কোথায় সেই রাত জাগা শহর? কোথায় সেই পানশালা? চলচ্চিত্র দেখে নিজের মত করে আমেরিকা কল্পনা করেছিলাম। ভেবেছিলাম প্রতিটা শহরে রাত মানে জমকালো কিছু। রাস্তার মোড়ে মোড়ে থাকে বার আর নাইট ক্লাব। ভুল, সবই ভুল। বড় কিছু শহর ছাড়া রাত জাগে না কেউই। সেন্ট লুইসের মত শহর রাত নয়টার মধ্যে দোকান বন্ধ করে দেয়। মানুষ যেখানে নিউইয়র্কে বা ফ্লোরিডায় রাত তিনটায় খেতে বের হয়, সেখানে সেন্ট লুইসে আমাদের ঘড়ি দেখে দোকানে দৌড়াতে হয়। সব্বোনাশ! নয়টা বাজতে দশ মিনিট বাকি। পিতসা হাট তো বন্ধ হয়ে যাবে তো। পাছায় আগুন লেগেছে মত দৌড়াও!
.
এক এক করে যখন সবাই বিদায় নিতে আরম্ভ করলেন, আমরা চারজনও বিদায় নিলাম। এবার বাকি দুই প্রার্থী আমাদের রাইড দেবে। আমি ভেবেছিলাম দুইজনই গাড়ি নিয়ে এসেছে। এখন দেখি একজন এনেছে, আরেকজন ওর গাড়িতে করে এসেছে। সবাই মিলে ওর গাড়িতে উঠলাম। পনেরো মিনিট লাগল হোটেলে পৌঁছাতে। ওরা শুভকামনা জানিয়ে বিদায় নিল। বলল, শীঘ্রই দেখা হবে পিএইচডি প্রোগ্রামে। আমি হাসিমুখে বিদায় নিলেও মন বলছে আর দেখা হবে না। যার যার রুমে ঢুকার আগে আমি আর কিউ ঠিক করলাম, সকালে একসাথে নাস্তা করে হিল্টন হোটেলে যাব। ওখান থেকে আটটার দিকে ট্যুর বাস ছাড়বে। এগারোটায় ট্যুর শেষ হলে দুজনে উবার নিয়ে বিমানবন্দরে চলে যাব। প্রথম বিমান ভ্রমণটা দুজনের একসাথে। জর্জিয়ায় নেমে পথ আলাদা হয়ে যাবে।
.
তরতাজা হয়ে ঘুমাতে এলাম কিন্তু ঘুম আসছে না। সকাল সাতটায় উঠতে হবে। এমন সময় মস্তিষ্ক বেলেল্লাপনা করলে কেমন লাগে, বলুন? একটু পর পর মাথায় উঁকি দিচ্ছে নানারকম চিন্তা। অমুক প্রফেসরকে এভাবে উত্তর দিলে ভাল হত, তমুক প্রফেসরকে ঐ প্রশ্নটা না করলে ভাল হত। যত আফসোস আছে, সব একসাথে হানা দিতে লাগল। এই করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে উঠে গাঁট্টি বোঁচকা সব গুছিয়ে বের হলাম। ট্যুর শেষে এসে গুছানোর সময় পাব না মনে হয়। নাস্তার টেবিলে কিউয়ের সাথে দেখা হল। ও-ও সব গুছিয়ে নেমেছে। পেট ভরে খেয়ে নিলাম দুজনে। তারপর রওনা দিলাম হিল্টনের দিকে। রাস্তার অপর পাশেই হোটেলটা। পৌঁছে দেখি, ছাড়া ছাড়া দল করে কয়েকজন তরুণ তরুণী বসে আছে। মাত্র এই ক’জন নিয়ে ট্যুর হবে? আর কারো কি দুইদিনের ইন্টার্ভিউ শেষে ট্যুরের মুড নেই? একটু পর সন্দেহ হল। আসলেই কি এরা ট্যুরের জন্য বসে আছে? নাকি অন্যকিছুর জন্য? ট্যুর বাস কি আমাদের ফেলেই চলে গেছে?
.
গলায় ব্যাজ ঝুলিয়ে ঘুরছে এমন একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, ইউএবির ট্যুর বাসের জন্য এখানেই অপেক্ষা করতে হবে কিনা। মেয়েটা মাথা ঝাঁকাল। বাকি সবাইও নাকি বাসের জন্য অপেক্ষা করছে। নিশ্চিন্ত হয়ে দুই নাম্বার ছাড়তে গেলাম। বাথরুম থেকে এসে দেখি হুট করে পুরো লবি ভর্তি হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ আগে যেখানে ছিল দশজনের মত, সেখানে এখন ত্রিশ-চল্লিশজন জটলা পাকিয়ে আছে। দুইজন মেয়ে এসে সবাইকে দুই ভাগে ভাগ করল। ওরা আমাদের গাইড হবে। ওদের পিছু পিছু সবাই দুটো গাড়িতে উঠল। একইসাথে দুটো গাড়ির দরজা বন্ধ হল। আমাদের গাইড জানাল, সে ইউএবিতে বায়োমেডিকেল সায়েন্স নিয়ে পড়ছে। তার খুব ভাল লাগে ট্যুর বাসে গাইডের কাজ করতে। তাই প্রতি বছর স্বেচ্ছায় এই দায়িত্ব নেয়।
.
পুরো পথ জুড়ে মেয়েটা বিখ্যাত সব দালান, রাস্তা, শপিংমল, আর আবাসিক এলাকার বর্ণনা দিয়ে গেল। ভবিষ্যতে যারা আসছে ইউএবিতে, তারা ক্যাম্পাসের বাইরে কোথায় থাকতে পারে, সে বিষয়ে পরামর্শ দিল। আবাসিক এলাকাগুলো পাহাড়ি এলাকায়। এত সুন্দর! সেন্ট লুইসে এরকম এলাকায় থাকতে গেলে লাল সুতো বের হয়ে যাবে। অথচ এখানে এরকম বড়লোকি পাহাড়ি এলাকায় শিক্ষার্থীরা বাসা ভাড়া নেয়। একসময় বাস এসে থামল রেড মাউন্টেন বা লাল পাহাড়ের চূড়ায়। এখানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কাস্ট আয়রনের ভাস্কর্যটা অবস্থিত। নাম ‘ভাল্কান’। বার্মিংহ্যাম শহরের প্রতীক এটা। এখানে আসা অব্দি খালি ‘ভাল্কানের পাছা দেখেছ?’, ‘ভাল্কানের পাছা দেখেছ?’ শুনছি। আজ দেখে চোখ তৃপ্ত হল। ভাস্কর্যটা রেড মাউন্টেন নামক পাহাড়ের যে অংশে অবস্থিত, ওখান থেকে পুরো বার্মিংহ্যাম শহর দেখা যায়। সবাই শহর দেখে উদ্বেলিত। আমার ভালো লাগল না। শহর আবার দেখার কী আছে? দালানকোটা দিয়ে ভরা। এর চেয়ে আশেপাশের বনবাদাড় যদি সবুজে ভরা থাকত, দেখে মজা পেতাম। সব শীতে মরে আছে, সাদা হয়ে আছে। আমার অধিবর্ষ কাটল মরা জঙ্গল আর ভাস্কর্যের পাছা দেখে।
.
মরা হোক আর ধূসর, ছবি তো তোলা দরকার। জীবনের প্রথম অন ক্যাম্পাস ইন্টার্ভিউয়ের কোনো স্মৃতি থাকবে না? মোবাইল বের করে দেখি ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইমেইল এসেছে। ওখানকার পুষ্টি আর গণস্বাস্থ্য, দুই বিভাগেই আবেদন করেছিলাম। আজ গণস্বাস্থ্য বিভাগের ফলাফল দিয়েছে। কিন্তু সে ফলাফল দেখতে হবে ওদের অ্যাপলিকেশন পোর্টালে ঢুকে। মোবাইল থেকে পোর্টালে ঢুকার সিস্টেম রাখিনি। হোটেলে গিয়ে ল্যাপটপ দিয়ে ঢুকতে হবে। সেই হোটেলে ফেরারও এক ঘণ্টা বাকি। এই এক ঘণ্টা আমার কীভাবে কাটবে, হায়! ধড়ফড় করা বুক নিয়ে বসে রইলাম। ছোট্ট একটা আশা আছে, ম্যাকগিলের গণস্বাস্থ্য বিভাগে আমার হয়ে যাবে। ওখানকার এক প্রফেসর আমার ইন্টার্ভিউ নিয়েছিলেন স্কাইপে। খুব ইতিবাচক কথাবার্তা বলেছিলেন নেওয়ার ব্যাপারে। যদি হয়ে যায়, তাহলে ইউএবির স্মৃতি আর কাবু করতে পারবে না।
.
এক ঘণ্টা পর যখন হোটেল রুমে এসে পৌঁছলাম, এক নিঃশ্বাসে ল্যাপটপ খুলে পোর্টালে ঢুকলাম। বুক এমন ধুকপুক করছে যে, পূজার ঢোল বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে। দুনিয়া ভরা আশা নিয়ে পোর্টালে লগিন করে দেখি আরেকটা ধাপ বাকি। ‘ডিসিশন মেইড’ নামে একটা লিংক দেওয়া। এ তো রোমাঞ্চ উপন্যাসের চেয়েও বাড়াবাড়ি! যে সিদ্ধান্ত ইমেইলেই দেওয়া যেত, সেটা দিয়েছে পোর্টালে। তার উপর লগিন করলেও চলছে না, নতুন আরেকটা লিংকে ঢুকতে হবে। এই লিংকে ক্লিক করলে কি সেটা কোনো খামের কাছে নিয়ে যাবে, যে খাম খুলে ফলাফল দেখতে হবে? নাহ, অত ঢং করেনি। লিংকে ঢুকার পর আরেকটা লিংক দিল, যেটার শিরোনাম ‘তোমাকে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার চিঠি পাঠানো হইল’। মুহূর্তে মাথা হালকা হয়ে গেল। প্রত্যাখ্যাত হয়েছি? কীভাবে? ঐ প্রফেসর তাহলে শুধু শুধু এত কথা বলেছিলেন? প্রচণ্ড নার্ভাস হলে খেয়াল করেছেন হাত, পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়? আমার হল সেই দশা। ইউএবিতে আশা পাচ্ছি না, ম্যাকগিলের গনস্বাস্থ্যে হল না, ক্যানসাসে হয়নি। বাকি আছে ম্যাকগিলের পুষ্টি বিভাগ আর ভার্জিনিয়ার বায়োমেডিকেল সায়েন্স। এগুলোতে যে হবে না, বুঝে গেছি। আমার কি আরও ভার্সিটিতে আবেদন করার দরকার ছিল? ভার্সিটিগুলো কি বেশি উচ্চমাত্রার হয়ে গেল? কিছু ঢুকছে না মাথায়। এই বছরের ফল সেশনে পিএইচডিতে না ঢুকতে পারলে প্ল্যান বি সাজাতে হবে। একটা বছর কীভাবে কাটানো যায়, বের করতে হবে। এক বছরের জন্য দেশে গিয়ে ফের পশ্চিমে আসার চেষ্টা করা ঝামেলার। এরচেয়ে এক বছর এ দেশেই থেকে ফল ২০২১-এর জন্য চেষ্টা চালাতে হবে। বন্ধু ফরহাদ বলছিল, ‘পিএইচডি দিয়ে কী করবি? মাস্টার্স পাশ করেই যখন হাইফাই বেতন পাওয়া যায়, তখন আর পিএইচডির দরকার কী?’ কিন্তু আমি জানি, চাকরির চেয়ে আমার পড়তে ভাল লাগে বেশি। তাছাড়া পুষ্টিবিজ্ঞান বিষয়টাতে রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ান (আরডি) নামক পেশাদার ডিগ্রি না থাকলে শুধু মাস্টার্স দিয়ে পশ্চিমে বেশিদূর যাওয়া যায় না। তাই আরডি ডিগ্রি নিয়ে নিব কিনা, সেটাও ভাবতে লাগলাম। কিন্তু ভাবলেই তো চলে না। আরডি ডিগ্রি নেওয়ার জন্য অনেক ধরনের কোর্স করতে হয়, যেটার ব্যয়ভার সম্পূর্ণ নিজের। এত টাকা আমার নেই। আমার ক্লাসমেট যারা এই ডিগ্রি নিয়েছে, তারা ব্যাংক থেকে ঋণ করে খরচ যুগিয়েছে। চাকরিতে ঢুকে সে ঋণ শোধ করবে।
.
সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে দেখি বিমানবন্দরে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে। শেষবারের মত রুমে চোখ বুলালাম। কিছু রেখে গেলাম কি? না, রেখে যাইনি। উল্টো নিয়ে নিয়েছি। ছোট ছোট শ্যাম্পু আর সাবানগুলো। এগুলো আধা ব্যবহারের পর ফেলে গেলে পরিচারকরা ফেলেই দিবে। এরচেয়ে নিয়ে যাই, শেষ হওয়া পর্যন্ত ব্যবহার করি, অপচয় রোধ করি। মিনিমালিস্ট লাইফস্টাইলের ব্যাপারে শুনেছেন নিশ্চয়? অল্প জিনিস ব্যবহার করে জীবন যাপন? আজকাল খুব কথা উঠছে এটা নিয়ে। অথচ আমি সারাজীবনই মিনিমালিস্ট। এর জন্য কিপটা উপাধিও পেয়েছি। আগে মিনিমালিস্ট ছিলাম টাকাপয়সা ছিল না বলে। এখন মিনিমালিস্ট সচেতনতার খাতিরে। যত কম পণ্য ব্যবহার করবেন, যত কম অপচয় করবেন, তত বেশি পরিবেশ বাঁচবে। ইদানীং তো বিমান বাদ দিয়ে বাস, ট্রেন আর গাড়িতে করে দূরপাল্লার ভ্রমণ করার আহ্বান জানানো হচ্ছে। বিমান ভ্রমণে প্রচুর কার্বন নিঃসরণ হয়। সেটা থেকে পরিবেশকে বাঁচাতেই এই আহ্বান। কিংবা ধরুন ইউরোপের দেশগুলোতে যে দ্বিচক্রযান জনপ্রিয় হল, সেটাও এই পরিবেশকে বাঁচাতেই। জার্মানি, ডাচল্যান্ড, ইতালি, সুইডেন কিংবা বেলজিয়ামে মানুষজন ব্যক্তিগত গাড়ির বদলে সাইকেল চালিয়ে অফিসে যাওয়া পছন্দ করে। জানেন কি, এসব দেশের সাথে বাংলাদেশের নামও আছে বাইসাইকেল সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসেবে? কিন্তু এরপরও আমাদের দেশ বায়ুদূষণে এক নাম্বার (*)। দুঃখ কই রাখি?
.
সাড়ে এগারোটার দিকে লাগেজ নিয়ে নিচে নামলাম। কিউ উবার ডাকল। আমি উবার বা লিফট তেমন ব্যবহার করি না বলে মোবাইলেও অ্যাপ নামাইনি। শুনে কিউ অবাক হল। অবাক হবারই কথা। ও আমার মত গরীব নয়। ওর বাবা-মায়ের পয়সা আছে। ডায়েটেটিক ইন্টার্নশিপ করেছে বাবা-মায়ের টাকায়। রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ান হয়েছে। এখন দুই হাতে কামাচ্ছে। উবার, লিফট ওর হাতের ময়লা। কিন্তু আমার তো হিসেবের টাকা। উবারে চড়লে পরের সপ্তাহে সে খরচ উসুল করতে হয় অন্য কিছুতে ছাড় দিয়ে। যা হোক, বাইরে অনেক ঠাণ্ডা। উবার আসা পর্যন্ত লবিতে লবিতে বসে রইলাম। পনেরো মিনিট পর কিউয়ের মোবাইলে নোটিফিকেশন এল, উবার চালক বাইরে অপেক্ষা করছেন। আমরা বের হলাম। সাথে সাথে কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া ধাক্কা দিল। আমি মাফলার দিয়ে কান ঢেকে বের হয়েছি। কিন্তু কিউ পাতলা সোয়েটার পরে, কান না ঢেকেই বেরিয়ে পড়েছে। হাওয়ার তোড়ে বেচারা উড়ে যায় আর কি। দৌড়ে গাড়ির ভিতর গিয়ে বসলাম।
.
চালক বেশ বয়স্ক একজন ব্যক্তি। আড্ডাবাজও। হাই হ্যালো শেষ হওয়ার পর শুরু করলেন রাজনীতি নিয়ে আড্ডা। রাজনীতি ব্যাপারটা তেমন বুঝি না। তারপরও উনার আলাপ শুনে আড্ডায় যোগ না দিয়ে পারলাম না। আসন্ন নির্বাচনের ঢেউ লেগেছে মানুষের মনে। সবখানে এখন নির্বাচন, রাজনীতি, প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী নিয়ে আলোচনা। নভেম্বরের তিন তারিখ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। আবারও কি ডোনাল্ড ট্রাম্পই আসবে, নাকি ডেমোক্র্যাটদের মাঝে কেউ নির্বাচিত হবে – এই হল আড্ডার বিষয়। চালক কিউকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার পছন্দের প্রার্থী কে? কাকে ভোট দিচ্ছ?’ কিউ বলল, ও আমেরিকার নাগরিক না। তাই ভোট দিতে পারবে না। এজন্য প্রার্থিতা নিয়েও মাথা ঘামায়নি। এবার আমাকেও একই প্রশ্ন। বললাম, ‘আমিও নাগরিক না। রাজনীতি ভাল বুঝি না, তাই পছন্দের প্রার্থীও নেই।’
– ট্রাম্পকে ভালো লাগে?
– এমম… না (চিন্তা করছিলাম ব্যাটা ট্রাম্পের সমর্থক কিনা। বেফাঁস কথা বলে পরে বিপদে পড়ব)।
চালক স্বস্তিতে বলে উঠলেন, ‘ইয়েস! আমি বুঝি না মানুষ একে কীভাবে সমর্থন দেয়। এর মত নারী অবমাননাকারী একজন মানুষ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়ে গেল, ভাবতেই আশ্চর্য লাগে।’
সাহস পেলাম। বললাম, ‘তুমি কাকে ভোট দিচ্ছ? পছন্দের কেউ আছে?’
লোকটা এক মুহূর্ত চুপ থেকে বললেন, ‘অদ্ভুত! আমি কাকে ভোট দেব সেটা মনঃস্থির করার পর তুমিই প্রথম ব্যক্তি যে কিনা প্রশ্নটা করলে।’
তারপর জানালেন, জো বাইডেন তার পছন্দের মানুষ। ওকেই ভোট দেবেন। সুযোগ বুঝে ঝেড়ে দিলাম, ‘বার্নি স্যান্ডার্সকে নিয়েও তো লোকে মাতামাতি করছে। মনে হচ্ছে, এই লোকের মধ্যেও কিছু একটা আছে। কী বল?’
.
বুড়ো গল্প করার রসদ পেয়ে গেলেন। ‘ঠিক! আমারও ওকে ভালো লাগে। তবে কিনা বার্নি নিজেকে ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট বলে পরিচয় দেয় বলে এদিককার মানুষজন ওকে পছন্দ করে না। এখানে কেউ ডেমোক্রেটিক শব্দটা শুনতে পায় না, খালি শোনে সোশ্যালিস্ট। আর সোশ্যালিস্ট মানে এদের কাছে নাস্তিক, কমিউনিস্ট। ফলে সে এখানকার ভোট পাবে না। তাছাড়া বাইডেন অনেক বছর ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিল। অন্যান্য দেশের সাথে ওর সম্পর্ক আগে থেকেই মজবুত। অথচ বার্নিকে নতুন করে এসব সম্পর্ক গড়তে হবে। ফলে আমার মনে হয়, প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেন অনেক এগিয়ে থাকবে।’
জানতে চাইলাম, অ্যালাব্যামায় সাধারণত কারা জিতে? হাসতে হাসতে বললেন, ‘রিপাবলিকানরা। লালের মাঝে আমি এক টুকরো নীল। মাইনোরিটি।’
এই করতে করতে বিমানবন্দরে চলে এলাম। চালককে খুব খুশি মনে হল মনের মত গল্প করতে পেরে। অনেকবার ধন্যবাদ দিলেন। আমরাও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিদায় নিলাম। বেশ মজা লাগল সাধারণ একজন ভোটারের চিন্তাভাবনা জেনে।
* https://www.iqair.com/bangladesh (২০১৯)
.