0 0
Read Time8 Minute, 31 Second
গত ছয় বছর ধরে পুষ্টিবিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে ঘাঁটাঘাঁটি করছি। করতে গিয়ে বেশ কিছু জিনিস লক্ষ্য করেছি। এগুলো নিয়েই ধারাবাহিক পোস্ট লিখব। পয়েন্টগুলো মূলত নিউট্রিশন বা পুষ্টিবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য। এই বিষয়ে অ্যাডমিশন, ফান্ড, প্রফেসর ম্যানেজ করা, ইত্যাদি আমার কাছে অন্যান্য বিষয়ের চেয়ে আলাদা মনে হয়েছে। আমার বুঝায় যদি ভুল হয়ে থাকে, দয়া করে অভিজ্ঞরা ধরিয়ে দেবেন।
.
১) সেন্ট্রাল অ্যাডমিশনে প্রফেসরদের নক দেওয়াঃ আমরা যারা পুষ্টিবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী, তারা হয়ত অন্যান্য সাবজেক্টের ছেলেমেয়ের দেখে ধারণা করেছি, সেন্ট্রাল অ্যাডমিশনের বেলায় প্রফেসরদের নক দেওয়ার দরকার নেই। কিন্তু অন্যান্য সাবজেক্টে এভাবে কাজ হলেও পুষ্টিবিজ্ঞানের বেলায় ব্যাপারটা একটু ঘোলাটে। এখানে সেন্ট্রাল অ্যাডমিশন হলেও প্রফেসরকে নক দিয়ে ইন্টারেস্টের কথা জানানো যায়। আবার নক না দিয়েও সেন্ট্রাল অ্যাডমিশন পাওয়া যায়। আমি দুটো ঘটনার কথা বলব। এরপর সিদ্ধান্ত নেবেন আপনি কীভাবে আগাতে চান।
.
আমি ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া ডেভিসের (UC Davis) এক প্রফেসরের কাজে ইন্টারেস্টেড ছিলাম। এপ্লিকেশন জমা দেওয়ার পরদিনই উনাকে নক দিয়েছিলাম। কিন্তু উনি বললেন, অনেক আগে থেকেই আরেকজনের সাথে উনার কথাবার্তা চলছে, তাকেই উনি নেবেন। অর্থাৎ অ্যাডমিশন প্রসেস শুরু হওয়ারও অনেক আগে থেকে আরেকজন উনাকে নক দিয়ে ইন্টারেস্টের ব্যাপারে জানিয়েছিল। তার সাথেই উনার একটা বোঝাপড়া তৈরি হয়ে গেছে। ফলে অ্যাডমিশন সেন্ট্রাল হলেও তাকে নেওয়ার ব্যাপারে প্রফেসরের একটা প্রভাব থাকবে।
.
আবার, আমারই পরিচিত একজন পুষ্টিবিজ্ঞান শিক্ষার্থী UC Davis-এ এপ্লিকেশন জমা দিলেও কাউকে নক দেয়নি। যথাসময়ে অনুষদ থেকে জানানো হল, সে ভর্তি যোগ্য (admissible)। এখন একজন প্রফেসরকে ম্যানেজ করতে পারলেই তাকে অ্যাডমিশন দেওয়া হবে। তখন সে তার পছন্দের প্রফেসরের সাথে মিটিং করল, উনারও ওকে পছন্দ হল, সে অ্যাডমিশন পেয়েও গেল। অর্থাৎ কাউকে আগে থেকে নক না দিলেও আপনি অ্যাডমিশন পেতে পারেন। সুতরাং, সেন্ট্রাল অ্যাডমিশনে নক দেওয়া যায়, নাও দেওয়া যায়। কোনটা ভাল বা নিরাপদ, ঐ তর্কে আমি যাব না। আমি দুটো রাস্তা দেখালাম, বাকিটুকু আপনাদের উপর।
.
২) Ph.D.-এর সাথে মাস্টার্সের জন্যও আবেদন করাঃ আমি টানা তিন বছর শুধু পিএইচডির জন্য এপ্লাই করেছি, কিন্তু সুযোগ পাইনি। চতুর্থ বছর যখন পিএইচডির পাশাপাশি মাস্টার্সেও এপ্লাই করলাম, তখন মাস্টার্স প্রোগ্রাম থেকেই ফান্ডসহ অ্যাডমিশন এসেছিল। তাই নিরাপদে থাকার জন্য Ph.D. এবং মাস্টার্স – দুই জায়গায়ই এপ্লাই করা ভাল। তাছাড়া দেশে বসে কিছু জিনিস ভালমত বুঝা যায় না, যেমনঃ বর্তমান সময়ের হট টপিক কোনগুলো, কোন বিষয়ে ফান্ড বেশি, কোন ভার্সিটিতে কী ধরনের গবেষণা চলছে, ইত্যাদি। যুক্তরাষ্ট্রে মাস্টার্স করতে করতে ব্যাপারগুলো নিয়ে ভাল ধারণা হয়ে যায়। তাই মাস্টার্সে এলে যে ‘লস’ হয়ে গেল, এমন নয়। বরং পিএইচডি করবেন কিনা, করলে কীসের উপর করতে চান, আপনার ইন্টারেস্টের জায়গা কী কী, ইত্যাদি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়।
.
৩) রিকোমেন্ডেশন লেটারঃ হয়ত সবাই লেটার নিয়ে বিচ্ছিরি ঘটনার মুখোমুখি হয় না, কিন্তু আমি হয়েছিলাম। শিক্ষকদের পিছে ঘুরতে ঘুরতে মাথার চুল পেকে গিয়েছিল। তার উপর লেটারগুলো আমাকেই লিখতে হয়েছিল। প্রফেশনাল লেটার কীভাবে লিখতে হয়, জানতাম না। লেটারে শুধু প্রশংসাই করেছিলাম নিজের ব্যাপারে, কোনো ক্রিটিকেল মন্তব্য ছিল না। তাছাড়া যাদের কাছে অনুরোধ নিয়ে গিয়েছিলাম, তাদের মধ্যে কয়েকজন শিক্ষক আমাকে বিদেশে পড়ার অনুপযুক্ত মনে করেছিলেন। রিকোমেন্ডেশন দেওয়ার লিঙ্কে গেলে কিছু এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। সেখানে উনারা আমাকে সবকিছুতে ‘এভারেজ’ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘তোমাকে যদি ‘গুড’ দিই আর তুমি যদি বিদেশে গিয়ে ভাল করতে না পার, তাহলে তো ওরা আমাদের ধরবে! তাই এভারেজ দেওয়াই নিরাপদ।’ উনারা আমার আন্ডারগ্র্যাড রিসার্চ আর কোর্সওয়ার্কের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন বলে উনাদের থেকে লেটার নেওয়া ফরজ ছিল। কিন্তু প্রথম বছরে যখন অ্যাডমিশন হল না, আমার উপর থেকে উনাদের আস্থা পুরোপুরি চলে গেল। উনারা আমার লেখা লেটারের উপর কাটাকুটি করে নিজেদের মত লিখে পাঠালেন। জানি না সেখানে কী লেখা ছিল, তবে দ্বিতীয় আর তৃতীয় বছরেও অ্যাডমিশন হল না। তিন বছর পর আমি রেফারেন্স হওয়ার জন্য তরুণ শিক্ষকদের অনুরোধ করলাম। উনারা মাত্র একটা করে কোর্স করিয়েছিলেন। কিন্তু আমি বিদেশে চেষ্টা করছি শুনে খুশি হয়েছিলেন। নিজেরাই লেটার লিখে সাবমিট করেছিলেন। নিশ্চয় ভাল কিছু লিখেছিলেন কারণ সে বছরই আমি মাস্টার্সে ফান্ড পাই।
.
যুক্তরাষ্ট্রে জেনুইন রিকোমেন্ডেশন লেটারকে খুব গুরুত্ব দেওয়া হয়। আমি মাস্টার্স করেছি যুক্তরাষ্ট্রের যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, সেখানকার প্রফেসররা যে লেটারগুলো লিখেছেন, সেগুলো পড়ে আমার ভবিষ্যৎ সুপারভাইজর ইম্প্রেসড আর কনভিন্সড হয়েছেন। তিনি আমাকে লেটার থেকে একটা লাইনও পড়ে শুনিয়েছেন। লাইনটা উনার খুব মনে ধরেছিল। সেখানে আমার অধ্যবসায় আর নতুন কিছু শেখার আগ্রহ নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন একজন রেফারি। তাই আপনি যদি যুক্তরাষ্ট্র থেকে মাস্টার্স করেন, তাহলে জেনুইন রিকোমেন্ডেশন লেটার পাওয়া সম্ভব। সেটা দিয়ে পিএইচডি অ্যাডমিশনে অনেক উপকার হওয়ার কথা।
.
দ্বিতীয় পর্বে আসছে ভার্সিটির র্যাংকিং বিষয়ক মিথ, নিজের পছন্দ অনুযায়ী ভার্সিটি নির্বাচন ইত্যাদি বিষয়।
Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
100 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Previous post ভিক্টিম ব্লেইমিং করবেন না, প্লিজ…
Next post পুষ্টিবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু টিপস (পর্ব ২)