Read Time19 Minute, 40 Second
এয়ার বিএনবিতে আসার পথে পুরোটা সময় আমি ঘোরের ভিতর ছিলাম। এই চোখ খুলি, বন্ধ করি। মাথা কাজ করছে না। চোখ খুললে একের পর এক হোটেল কাম ক্যাসিনো দেখা যায়। বিশাল সব অট্টালিকা। দাঁড়িয়ে আছে লোভনীয় ভঙ্গীতে। এগুলোতেই তাহলে মানুষের টাকা নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়? মানুষ শখ করে হারতে আসে এখানে? হয়ত শখ করে আসে না, কিন্তু জেনে আসে যে হারার সম্ভাবনা আছে। তবুও খেলে। আমিও খেলব বলে ঠিক করেছি। এখানে এসে হুমায়ূন আহমেদ কিংবা নির্মলেন্দু গুণের মত লেখক জুয়ার নেশায় সব খুইয়েছেন। আমারও খুব ইচ্ছা উনাদের পদ অনুসরণ করার। জুয়ার শহরে এসে একবারের জন্যও জুয়া না খেললে আফসোস থেকে যাবে। কথায় আছে না, যস্মিন দেশে যদাচার? যখন আপনি রোমে যাবেন, রোমানদের মত আচরণ করবেন। ভেগাসে এলে হালকা জুয়াড়ির মত আচরণ করতে হয়। তাই ঠিক করেছি, জুয়ায় সর্বোচ্চ দশ ডলার খরচ করব। এর বেশি এক টাকাও নয়। আমার দুই ভাই শুনে বলেছে সাবধানে থাকতে। যেখানে মানুষ মিলিয়ন ডলার বেট রাখে, সেখানে দশ ডলার দিয়ে খেলতে চাইলে মাইরও দিতে পারে। হঠাৎ চোখে পড়ল অন্ধকারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাম্প টাওয়ার। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্যাসিনো। ধুন্ধুমার ব্যবসায়ী ট্রাম্পের অনেক হোটেল সারা যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে আছে। তাই অনেক টাওয়ারের গায়েই ট্রাম্প নামটা দেখতে পাওয়া যায়। মজার ব্যাপার হল, এই ব্যবসা ট্রাম্প নিজে দাঁড় করাননি। সেই ১৯২৩ সালে ট্রাম্পের ঠাকুরমা (বাবার মা) এলিজাবেথ ট্রাম্প এবং তার পুত্র ফ্রেড ট্রাম্প মিলে একটা রিয়েল এস্টেট কোম্পানি খুলেন। নাম রাখেন ‘ই. ট্রাম্প এন্ড সন’। ই হল এলিজাবেথ নামটির প্রথম অক্ষর। এই ফ্রেড ট্রাম্পেরই পুত্র আমাদের ডোনাল্ড ট্রাম্প। বংশ পরিক্রমায় কোম্পানিটি ডোনাল্ডের হাতে আসে। ডোনাল্ড কিক মেরে কোম্পানির নাম থেকে এলিজাবেথকে সরিয়ে দেন। নতুন নাম রাখেন ‘দা ট্রাম্প অর্গানাইজেশন’। ডোনাল্ডের আমলে কোম্পানির বিশাল উন্নতি ঘটে। ২০১৭ সালে ডোনাল্ড কোম্পানির নেতৃত্ব তার দুই পুত্রের হাতে দিয়ে দেন।
.
যে রাস্তা দিয়ে গাড়ি যাচ্ছে, সেটাকে খুব পরিচিত লাগছে। মনে হচ্ছে ছবিতে দেখেছি। প্রিন্সের ধারণা এটা স্ট্রিপ। স্ট্রিপ বা দা স্ট্রিপ হল লাস ভেগাস বুলেভার্দের ডাকনাম। এই রাস্তার বাম এবং ডানপাশেই বিখ্যাত সব হোটেল আর ক্যাসিনো অবস্থিত। আমাদের আসার কিছুদিন আগে ঘুরে গেছেন সেতু’দা আর অপর্ণা’দি। দিদি বলেছিলেন, ভেগাসে দেখার মত তেমন কিছু নেই। বড় এক রাস্তার এ মাথা ও মাথা জুড়েই সবকিছু। এক মাথা থেকে হাঁটা শুরু করলে একদিনেই পায়ে হেঁটে পুরোটা দেখা যায়। উনার কথা শুনে ভেবেছিলাম, যাহ্! তাই হয় নাকি? এত ভেগাস ভেগাস শুনি, সবকিছু একটামাত্র রাস্তাকে ঘিরে? এখন মনে হচ্ছে কথাটা ঠিক। স্ট্রিপ থেকে ডানদিকে ঘুরে কিছুদূর এগোতেই আলো কমে গেল। ধীরে ধীরে প্রবেশ করলাম ভেগাসের আবাসিক এলাকায়। দেখতে সেন্ট লুইসের বড়লোক পাড়ার মত। অনেকখানি জায়গা জুড়ে একেকটা একতলা বাড়ি উঠেছে। সামনে উঠোন। প্রতিটা বাড়ির সাথে গ্যারেজ আছে। এখানকার পরিবেশ স্ট্রিপের চেয়ে আলাদা। বুঝাই যাচ্ছে না এটা ভেগাস! একই শহরের দুটো দিক যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানো হচ্ছে। আমাদের চালকের নাম সিল্ভিনো। সে পুরো রাস্তায় কোনো কথা বলেনি। আলট্রা ড্রাইভ রোডে এসে প্রথমবারের মত মুখ খুলল। জিজ্ঞেস করল, আমরা বাড়িটা চিনি কিনা। না, চিনি না। তবে আলট্রা ড্রাইভেই যে বাসাটা, এটুকু মুখস্ত করেছি। প্রিন্স ওর মোবাইলে জিপিএস অন করল। সেটা দেখে বলল, রাস্তার বামপাশে যে বাড়ি দেখা যাচ্ছে, ওটাই আমাদের কাঙ্ক্ষিত বাসা। সিল্ভিনো চাইলে আমাদের ডানদিকে নামিয়ে দিতে পারে। আমরা রাস্তা পার হয়ে চলে যাব। কিন্তু সিল্ভিনো সেটা করতে রাজি না। সে গাড়ি ইউটার্ন করে আমাদের বাসার সামনে নামিয়ে দিল।
.
বাসাটা অনেক বড়। আমরা নেমেছি এক প্রান্তে। কোনদিকে যে সদর দরজা, অন্ধকারে বুঝা যাচ্ছে না। বাসার গৃহকর্ত্রীর নাম ট্রেসি। তাকে আগেই জানিয়ে রেখেছিলাম আমাদের আসতে রাত এগারোটা বাজবে। ঠিকই ঘড়িতে এগারোটা বাজে। যদিও ট্রেসিকে বলার সময় জানতাম না ফ্লাইট ডিলের জন্য এগারোটা বাজবে। বরং ভেগাস ঘুরে বাসায় আসতে এগারোটা বাজবে ধরে নিয়েছিলাম। যাই হোক, এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে গিয়ে প্রধান দরজা খুঁজে পেলাম। দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই সেন্সরের কারণে উঠোনে বাতি জ্বলে উঠল। সে আলোয় কলিংবেল খুঁজে বের করলাম। খুঁজতে হল কারণ এত বড় বাড়ির কলিংবেল ভীষণ ছোট্ট একটা বস্তু। বেলের শব্দ শুনে কে যেন ভেতরে ঘেউঘেউ করে উঠল। আমি ভাবলাম, এটা কলিংবেলের শব্দ। কিন্তু প্রিন্স খুশি খুশি গলায় বলল, ওরে! বাসায় দেখি কুকুর আছে। আমাদের স্বাগতম জানাতে আসছে। মনে পড়ল ট্রেসি বলেছিল ওর সাথে পোষা কুকুর থাকে। খুব শান্ত কুকুর। অতিথিদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু কুকুরে আমার ভীষণ ভয়। ছোটবেলায় কুকুরের দৌড়ানি খেয়েছি। সেই থেকে ফোবিয়া। তাই ঘেউঘেউ শুনে এক লাফে আমি প্রিন্সের পেছনে। এক মুহূর্ত পর একজন মধ্যবয়স্ক নারীকে দেখা গেল দরজা খুলতে। প্রথমে একটা কাঠের দরজা, এরপর নেটের। নারীটি নেটের দরজা খুলতে খুলতে জিজ্ঞেস করল, তুমি রুথ? বললাম, হ্যাঁ। প্রিন্সের সাথেও পরিচয় করিয়ে দিলাম। তারপর জিজ্ঞেস করলাম, তুমি ট্রেসি? মিষ্টি হেসে বলল, হ্যাঁ। দরজা খোলার পর প্রিন্সকে বললাম প্রথমে ঢুকার জন্য যেন কুকুরের লাফালাফিটা ওর উপর দিয়ে যায়। অবশ্য কুকুর দেখে খুব একটা ভয় লাগল না। টয় পুডল ব্রিডের পুচকে কুকুর। এক বাহুর সমান হবে লম্বায়। সে ট্রেসির পাশে দাঁড়িয়ে আমাদের দেখছে। প্রিন্স জুতা খুলে ভেতরে ঢুকতেই ওর চারপাশ দিয়ে একবার হেঁটে গেল। গন্ধ চিনে নিল মনে হয়। আমি ঢুকার পর আমার চারদিকেও হাঁটল। লাফ দিয়ে কোলে উঠার চেষ্টা করল না।
.
ট্রেসির সাথে কথা বলতে বলতে রুমের দিকে এগুলাম। আমাদের বিমান দেরি করেছে শুনে সে চুকচুক শব্দ করল। ওকে জানিয়ে রাখলাম, আগামীকাল ভোরে আমরা বেরিয়ে পড়ব। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে যাব। ফিরতে ফিরতে রাত এগারোটা। ট্রেসি বলল, কোনো সমস্যা নেই। সে বাসা আর রুমের চাবি আমাদের দিয়ে দেবে। আমরা মাঝরাতে আসলেও ওর কিছু যায় আসে না। শুনে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। আমার ভয় হচ্ছিলো যদি ওর বাসায় ঢোকার ব্যাপারে কড়া নিয়ম থাকে? এবার নিশ্চিন্ত হয়ে বাসার সাজসজ্জার দিকে নজর দিলাম। দরজা দিয়ে ঢুকলে প্রথমে পড়ে বিশাল লিভিংরুম। এরপর বামদিকের করিডোর ধরে হাঁটলে শেষ মাথায় আমাদের রুম। রুমের দরজা লক করা ছিল। ট্রেসি দেখাল কোন চাবি দিয়ে দরজা খুলতে হয়। এরপর ঘরে ঢুকে লাইট জ্বালাল। ওর পিছে পিছে ঘরে ঢুকে আমার আক্কেল গুড়ুম। এত সুন্দর ঘর! ঘরের ভেতরেই একটা ওয়াশরুম আছে। ওখানে শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, তোয়ালে, লোশন, চুল শুকানোর যন্ত্র সব আছে। খাবার গরম করতে চাইলে রুমের ভেতর আছে মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ঠাণ্ডা করতে চাইলে ফ্রিজ। আছে টেলিভিশন, ল্যাপটপে কাজ করার জন্য টেবিল-চেয়ার। ঘুমানোর জন্য কুইন আকৃতির বিছানা, মাথার বালিশ, কোলবালিশ, কাঁথা-কম্বল। জামাকাপড়ের জন্য কাবার্ড। মাথার উপর ঘুরছে প্রাচীন আমলের জমকালো নকশার একটা পাখা। সেটায় আবার চারটা বাল্ব লাগানো। দুটো দড়ি ঝুলছে পাখা থেকে। একটায় টান দিলে বাল্বগুলো জ্বলবে, আরেকটায় টান দিলে পাখা চলবে। ঘর দেখিয়ে ট্রেসি বিদায় নিল আর দরজা বন্ধ করে প্রথমেই আমি মূত্রথলি খালি করলাম। প্লেন থেকে নামার পরই ছোট বাথরুম পেয়েছিল। কিন্তু দ্রুত বাসায় আসার তাগিদে টয়লেটে যাইনি। এরপর তো লিফটের স্টেশন খোঁজা, লিফটের জন্য অপেক্ষা করা, লিফট ধরে বাসায় আসা বাবদ এক ঘণ্টা কেটে গেল। বাথরুম করে ওম শান্তি বলে বিছানায় গড়িয়ে পড়লাম। নরম তুলতুলে বিছানা। বালিশগুলোও প্রচণ্ড নরম। নরম বিছানায় শোয়া যায়। কিন্তু এত নরম বালিশে কীভাবে ঘুমায়?
.
প্রিন্স জানতে চাইল এখন খাবার খুঁজতে বের হব কিনা। নাহ। বিছানায় শোয়ার সাথে সাথে আমি জগত সংসার ভুলে গিয়েছি। প্রায় দুই বছর পর ফ্যানের বাতাস খেতে খেতে আমার ঘুমিয়ে পড়ার দশা। বললাম ঘণ্টাখানেক ঘুমিয়ে এরপর বের হব। আর যদি বের হতে ইচ্ছে না করে তাহলে ঘরে যে দুটো কমপ্লিমেন্টারি স্ন্যাক আছে, সেগুলো দিয়ে ডিনার করব। প্রিন্স দেখেনি স্ন্যাকগুলো। ওকে স্ন্যাক দেখালাম, ইনস্ট্যান্ট কফিও দেখালাম। ওয়েবসাইটে লেখা ছিল এগুলো সবই ফ্রি। আমরা ট্রেসির কাছ থেকে যত ইচ্ছে পানির বোতল চাইতে পারব, টাকা লাগবে না। জামাই বাবাজির অবশ্য গ্র্যানোলা বার দেখে মন ভরল না। ও সলিড কিছু খেতে চায়। বেশ, বিশ্রাম নিয়ে নাহয় বেরিয়ে পড়া যাবে। আমি ঘুমিয়ে পড়ার আগে দেখলাম প্রিন্স হাতমুখ ধুতে গেল। এরপর বেহুঁশ হয়ে পড়লাম। হুঁশ ফিরলে দেখি আধা ঘণ্টা পার হয়েছে। প্রিন্স শুয়ে আছে আমার পাশে। বিছানা থেকে নেমে একটু হাঁটাচলা করে বুঝলাম অনেকখানি তাজা লাগছে। একটু আগে শরীর যেভাবে ভেঙে যেতে বসেছিল, সে বিচ্ছিরি ভাবটা আর নেই। প্রিন্সকে বললাম আমি বাইরে যেতে প্রস্তুত। সাথে সাথে ও সার্চ দিয়ে সবচেয়ে কাছের রেস্তোরাঁটা বের করে ফেলল। সবচেয়ে কাছে টাকো বেল। এটা মেক্সিকান রেস্তোরাঁ। কিন্তু আমার এখন টাকো ফাকো খেতে ইচ্ছে করছে না। বার্গার, স্যান্ডউইচ, ফ্রায়েড রাইস জাতীয় সলিড খাবার খেতে ইচ্ছে করছে। প্রিন্স বলল টাকো বেলের ঠিক পাশেই ম্যাকডোনাল্ডস। আমরা দুই বছরেও ম্যাকডোনাল্ডসে ঢুকিনি, বিগ ম্যাক খাইনি। আমাদের কি আমেরিকা মেনে নিবে, ফ্রান্স? এই ফাঁকে যদি ম্যাকডোনাল্ডসে খাওয়া যায়, ভালোই হয়।
.
ঠাণ্ডার হাত থেকে নিরাপদ থাকার জন্য সোয়েট শার্টের উপর জ্যাকেট পরে আর গলা-কান মাফ্লারে মুড়িয়ে বাইরে বের হলাম। বেশ হাওয়া বইছে। ঠাণ্ডা নয়, আরামদায়ক। ফুটপাথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে চারপাশের দৃশ্য দেখছি। একতলার উপরে কোনো বাড়ি নেই। কিছু বাড়ির উঠোনে চার পাঁচটা গাড়ি পার্ক করা। মনে হয় প্রত্যেক সদস্যের জন্য আলাদা গাড়ি। ভাবছিলাম রাত বারোটায় বের হয়েছি। ছিনতাই হবে না তো? সেন্ট লুইসে রাতে হাঁটার সাহস হয় না। বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এই পাড়া সেন্ট লুইসের মত, নাকি নিরাপদ? অবশ্য টুরিস্ট স্পট হিসেবে চিন্তা করলে নিরাপদই হওয়ার কথা। পর্যটকদের নিরাপত্তা না দিতে পারলে এখানে মানুষ আসত? উল্টোদিক থেকে এক জোড়া ছেলেমেয়ে গল্প করতে করতে এগিয়ে আসছে। হাতে ধরে রেখেছে খাবারের প্যাকেট। ওটা দেখে খিদে চাগাড় দিয়ে উঠল। সে সাথে টের পেলাম আমি ঘামছি। জ্বর জ্বর ভাবটা তো নেই-ই, উল্টো জ্যাকেটের কারণে গরমে অস্থির হয়ে যাচ্ছি। ওটা খুলে কোমরে বাঁধলাম। ফুরফুরে হাওয়া গায়ে লাগতেই মনটা চনমনে হয়ে গেল। এতক্ষণ পর আমার ফুর্তি লাগল। ইয়াহু, লাস ভেগাসে এসেছি! প্রায় দশ মিনিট হাঁটার পর আমরা মূল রাস্তায় এলাম। যেখানে দাঁড়িয়েছি, সেটা একটা চৌরাস্তার মোড়। রাস্তার ঐপারে টাকো বেল আর ম্যাকডোনাল্ডস দেখা যাচ্ছে। যখন রাস্তা পার হয়ে ম্যাকডোনাল্ডসে এলাম, দেখি সেটার শুধু ড্রাইভ থ্রু সার্ভিস খোলা। ভিতরে বসে খাওয়া বা ভিতর থেকে খাবার কেনার সার্ভিস বন্ধ হয়ে গেছে। ড্রাইভ থ্রু মানে হল গাড়িতে বসে থেকে অর্ডার করা। এর জন্য একটা নির্দিষ্ট কাউন্টার আছে যেটার সামনে গাড়ি চালিয়ে যেতে হয়। তারপর গাড়ির জানালা দিয়ে কাউন্টারে থাকা কর্মীকে অর্ডার দিতে হয়। কর্মী খাবার প্যাকেট করে আপনার হাতে ধরিয়ে দেবে, আর আপনি গাড়ি চালিয়ে চলে আসবেন। মানুষ জীবনকে সহজ করতে করতে কোন পর্যায়ে নিয়ে গেছে, আমেরিকায় না এলে বুঝা হত না। আমাদের যেহেতু গাড়ি নেই, আমরা এই সার্ভিস পাওয়ার যোগ্য নই।
.
গেলাম টাকো বেলে। ওটার দরজায় গায়ে লেখা ‘ওপেন’। আমরা দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলাম। এক লোক মেঝে ঝাড়ু দিচ্ছে। ঝাড়ু দেওয়া দেখে আমার সন্দেহ হল। জিজ্ঞেস করে জানলাম, এটাও বন্ধ হয়ে গেছে একটু আগে। ওপেন সাইনটা শুধুমাত্র ড্রাইভ থ্রু সার্ভিসের জন্য। মেজাজটা কেমন লাগে? পাঁচ ঘণ্টা না খেয়ে আছি। শেষ খাওয়াটা ছিল হালকা নাস্তা। সেটা তো অবশ্যই, ভুঁড়িও হজম হয়ে গেছে অনেক আগে। ভেগাসে এসে খাওয়ার ঝামেলায় পড়ব, চিন্তা করিনি। সারারাত খোলা থাকে যে শহরের ক্যাসিনো, সে শহরে রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে যায় বারোটার মধ্যেই? অবশ্য আমরা যেখানে আছি, সেটা ভেগাসের মূল আকর্ষণ থেকে বেশ দূরে। তাই হয়ত এখানকার দোকানপাট দ্রুত বন্ধ হয়ে যায়। এখন যদি আমরা স্ট্রিপে যাই, অবশ্যই খাওয়ার দোকান খোলা পাব। এই জায়গায় আরেকটু খুঁজে দেখব। এরপরও না পেলে লিফট ধরে চলে যাব স্ট্রিপে। তবে বেশিক্ষণ খুঁজতে হল না। একটা মেক্সিকান দোকান পেলাম যারা মুরগি ভাজা, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বিক্রি করছে। জানে পানি এল। এসবই তো খুঁজছি! দ্রুত অর্ডার দিলাম। সাথে একটা স্যান্ডউইচও নিলাম আগামীকালের ব্রেকফাস্ট হিসেবে। তারপর হালুম হুলুম করে খাওয়া শুরু করলাম। তিন পিস মুরগি খেয়েছি কি খাইনি, অমনি পেট ভরে গেল। অতিরিক্ত ক্ষুধার সময় বেশি খাওয়া যায় না। প্রিন্সেরও একই কাহিনী। ফলে বাড়তি মুরগি আর আলু ভাজাগুলো প্যাকেট করে বাসায় নিয়ে এলাম। রাত বাজে তখন একটা।